‘তিন ধরনের শিল্পী আছে পৃথিবীতে’

Humayun Faridi
হুমায়ুন ফরীদি। অভিনেতা সাজু খাদেমের আঁকা

গতরাত থেকে বেশ অনেকজন অভিনয়শিল্পী এই কথাগুলো শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

‘তিন ধরনের শিল্পী আছে পৃথিবীতে। ভালো শিল্পী, বিপদগ্রস্ত শিল্পী আর অশিল্পী। বিপদগ্রস্ত শিল্পী সব সময় মনে করে, এই বুঝি পড়ে গেলাম! এখনকার শিল্পীরা ত্রস্ত। দৌড়াচ্ছে। এই দৌড়টা বন্ধ করে হেঁটে যাও। টাকার পেছনে না ছুটে ভালো অভিনয় করো। টাকা এমনিই আসবে।’

কথাগুলো এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন প্র‍য়াত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি।

বহুমাত্রিক এই অভিনেতা আজ (২৯ মে) বেঁচে থাকলে ৬৮ বছরে পা রাখতেন।

তিনি ১৯৫২ সালের এই দিনে জন্মেছিলেন ঢাকার নারিন্দায়। মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমায় সমানতালে সব ধরনের দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি। আমৃত্যু অভিনয়ের  বর্ণীল আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু, ব্যক্তিজীবনে ছিলেন একেবারে সাদামাটা।

১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন রসায়ন বিভাগে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্থগিত হয়ে যায় পড়াশোনা। স্বাধীনতার পর অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় পাস করেন। কিন্তু, অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

অভিনয়জীবনের শুরু ছাত্রজীবনে মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে। টেলিভিশন নাটকে প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকে।

তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চাঁনমিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নীল আকাশের সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’,‌ ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘ভবের হাট’ প্রভৃতি।

তার প্রথম মঞ্চনাটক ১৯৬৪ সালে, কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটকে। স্কুল জীবনেই মঞ্চে প্রথম নির্দেশনা দেন। নাটকটির নাম ‘ভূত’।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘ফণীমনসা’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’ ও ‘কেরামত মঙ্গল’।

টিভি নাটক অথবা মঞ্চে সেলিম আল দীন ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু জুটির বাইরে হুমায়ুন ফরীদির সর্বাধিক সংখ্যক ও সর্বাধিক সফল কাজ ছিল হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিকে হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত চরিত্র কানকাটা রমজানের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই।

তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’য় হুমায়ুন ফরীদির প্রথম চলচ্চিত্র অভিনয়। এরপর একে একে প্রায় ২৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

তার প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’।

এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমার মধ্যে রয়েছে— ‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’।

বাংলা সিনেমায় খল চরিত্রে তিনি যোগ করেছিলেন নতুন মাত্রা। ‘সন্ত্রাস’ ছবির মাধ্যমে তার খলনায়কের চরিত্র শুরু হয়।

হুমায়ুন ফরীদি ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৪ সালে।

তার অভিনীত শেষ ছবি ‘এক জবানের জমিদার, হেরে গেলেন এবার’। এটি ২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট মুক্তি পায়। ছবিটি পরিচালনা করেছেন উত্তম আকাশ।

ব্যক্তিজীবনে প্রথমে বেলি ফুলের মালা দিয়ে মিনু নামের একজনকে বিয়ে করেন ফরীদি। সেই ঘরে  দেবযানি নামে কন্যাসন্তান রয়েছে। পরে ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন সব শ্রেণীর দর্শকদের কাছে প্রিয় অভিনেতা।

২০১২ সালে ফাল্গুনের প্রথম দিনে (১৩ ফেব্রুয়ারি) তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে।

Comments

The Daily Star  | English

'Frustrated, Yunus hints at quitting'

Frustrated over recent developments, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus is considering stepping down, said sources familiar with what went down at the Chief Adviser’s Office and Jamuna yesterday.

4h ago