করোনা আপডেট: কক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, ঝিনাইদহ

কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে ও করোনা উপসর্গ নিয়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লায় নতুন করে আরও ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং নোয়াখাালীতে করোনা আক্রান্ত এক মুয়াজ্জিন মারা গেছেন। ঝিরগাছায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চার জন। এছাড়াও, সুনামগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। যা সুনামগঞ্জে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা।
কক্সবাজারে এক দিনে ৯১ জনের করোনা সনাক্ত
কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, আজ সোমবার কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে স্থাপিত আইইডিসিআরের ফিল্ড ল্যাবে মোট ২৮৩ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে নতুন করে ৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া, নমুনা পরীক্ষা করে দ্বিতীয় দফায় পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে পাঁচ জনের নতুন শনাক্তের তালিকায় পাঁচ জন রোহিঙ্গা সদস্য আছেন।
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অনুপম বড়ুয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১৭ জন। কক্সবাজার জেলা মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় গত ২ এপ্রিল থেকে। আজ রোববার পর্যন্ত এ ল্যাবে মোট ৭ হাজার ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে মোট করোনা শনাক্ত নয়শ জন। এরমধ্যে কক্সবাজার জেলার ৭৯১ জন, বান্দরবান জেলার ৩০ জন, চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, চাদগাও ও লোহাগাড়া দুই উপজেলায় ৪৪ জন ও বাংলাদেশী আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক ৩৫ জন।
এ ছাড়াও, কক্সবাজার জেলা শহরের নুনিয়ারছড়ার তরুণ ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। আজ সকাল সাড়ে আট টার দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। করোনার উপসর্গ নিয়ে দুই দিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এখনো তার নমুনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
তার ভাগ্নে সাজ্জাদুল ইসলাম বিশাল বলেন, ‘গত শনিবার মামাকে অসুস্থ অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সকালে হাসপাতালের আইসিউতে নেওয়া হয়। আজ সোমবার সকালে মারা যান তিনি।’
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মোহাম্মদ করিম শরীরে জ্বর নিয়ে দুইদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার করোনা উপসর্গ ছিল।’
নোয়াখালীতে করোনায় মসজিদের মুয়াজ্জিনের মৃত্যু
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর সেনবাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা গছেন। আজ সকালে উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের উত্তর শাহাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। এ নিয়ে সেনবাগ উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন চার জন। সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মতিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, মৃত ব্যক্তি উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের উত্তর শাহাপুর ইউনিয়নের একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। তার করোনার উপসর্গ থাকায় গত ২২ মে নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ২৩ মে পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর থেকে তিনি হোম আইসোলেশনে ছিলেন। সোমবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে তিনি মারা যান।
সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান বলেন, ‘৪৩ বছর বয়সী ওই মুয়াজ্জিনের মারা যাওয়ার সংবাদ পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মীরা তার বাড়ি যান এবং তার পরিবারের নমুনা সংগ্রহ করেন। মৃত মুয়াজ্জিনের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার সোনাপুর এলাকায়। তার মৃতদেহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজনের মাধ্যমে সরকারি নিয়ম মেনে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
কুমিল্লায় করোনা আক্রান্তে সংখ্যা সহস্রাধিক
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে কুমিল্লা জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আজ বিকেল ৩টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নেয়াতুজ্জামান।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীর ১২ জন, চৌদ্দগ্রামের ১৩ জন, নাঙ্গলকোটের পাঁচ জন, আদর্শ সদরের পাঁচ জন, বুড়িচংয়ের নয় জন, মুরাদনগরের তিন জন, মেঘনার এক জন ও ব্রাহ্মণপাড়ার এক জন আছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, সোমবার দুপুর পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা থেকে সর্বমোট ৯ হাজার ৫৪৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এই পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট এসেছে ৮ হাজার ৫৯৯ জনের। এর মধ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২০ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৮ জন এবং এছাড়া নতুন করে সুস্থ হয়েছেন কুমিল্লা আদর্শ সদরের ৩ জন ও মেঘনার ১ জন। মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪২ জন।
সুনামগঞ্জ প্রথম মৃত্যু
আমাদের সংবাদদাতা জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুনামগঞ্জ জেলায় প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আজ দুপুরে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র।
ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজীব চক্রবর্তী জানান, ‘মৃত ব্যক্তির গত ২৮ মে করোনা শনাক্ত হয়। তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় সেদিনই সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ছেলেরও করোনা শনাক্ত হয়েছে। ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের নমুনা পরীক্ষা শেষে আজকে জানা যাবে আর কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কি না।’
বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের সোমবারের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৬৫ জন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬১ জন সুস্থ হয়েছেন এবং ৪১ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঝিনাইদহে আরও ৪ জনের করোনা শনাক্ত
ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, জেলায় নতুন করে আরও ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৩ জন।
ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, ‘আজ সকালে খুলনা পিসিআর ল্যাব থেকে ঝিনাইদহে মোট ১৪ টি নমুনার ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে ৪ টি পজিটিভ। আক্রান্তদের দুজন সদরে এবং দুজন হরিণাকুন্ডু ও কোটচাঁদপুরের। তাদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত ৫৩ জনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৪ জন।’
আরও পড়ুন:
Comments