বৃষ্টিতে ভিজে সারাদিন অপেক্ষার পরও তারা বয়স্ক ভাতা পেলেন না
বৃষ্টিতে ভিজে দিনভর অপেক্ষার পরও ব্যাংক থেকে বয়স্কভাতার টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন লালমনিরহাটের ৭০ জন বয়োবৃদ্ধ।
তাদের কারো বয়স ৭০, কারও ৮০ এর কাছাকাছি। প্রত্যেকেই গেল ৮-১০ বছর ধরে সরকারের বয়স্কভাতা পেয়ে আসছেন। আজ সোমবার তাদের বয়স্কভাতার টাকা পাওয়ার কথা ছিল। তবে সোনালী ব্যাংক থেকে জানানো হয়, সমাজসেবা থেকে পাঠানো তালিকার নামের সাথে অ্যাকাউন্ট নম্বরের মিল না থাকায় ভাতার টাকা বিতরণ করা হয়নি।
ভাতা নিতে আসা বয়স্ক মানুষেরা বলেন, সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে চলে আসেন লালমনিরহাট সোনালী ব্যাংকে। সারাদিন অপেক্ষা করেন। এর মধ্যেই বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আসে প্রবল বৃষ্টি। ব্যাংকের মেইন গেটের পাশে বৃষ্টিতে ভিজেই অপেক্ষা করেন তারা। বৃষ্টি থামে ৪ টার দিকে।
তারা জানান, বয়স্কভাতার বই জমা আগেই নিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জানানো হয়, ‘আপনাদের ভাতার বইয়ে সমস্যা আছে, এটা ঠিক না করা পযর্ন্ত টাকা দেয়া যাবে না। আপনারা বাড়িতে চলে যান।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের বয়স্কভাতা উপকারভোগী এহসান আলী (৭৬) জানান, তিনি ৯ বছর ধরে বয়স্কভাতা উত্তোলন করে আসছেন কিন্তু এরকম ঘটনা কোনদিন ঘটেনি।
তিনি বলেন, ‘হামরা ঝরিত ভিজি থাকলোং। ঝরিখান হামার গার উপরা দিয়া গ্যালো। হামাব এ্যামন করি কষ্ট দেইল ক্যানে ওমরা। হামার কাইও কওয়াইয়া নাই। এ্যালা যদিল হামার অসুখ-বিসুখ হয় তাকহইলে কাই হামার চিকিৎসা দিবে।’
একই ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ছালেহা বেওয়া (৭৫) বৃষ্টিতে ভেজা শরীর নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূর থেকে কষ্ট করে এসে সারাদিন কাটার পরও বয়স্কভাতার টাকা না পাওয়ায় তার খুব কষ্ট হয়েছে। বয়স্কভাতার টাকা দিয়ে তার খাবার খরচ চলে। কার ভুলের জন্য তাকে এমন কষ্ট করতে হলো সেটা তার জানা নেই। ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে ভাতার বই রেখে খালি হাতে ফিরে গেছেন তিনি।
‘হামরাগুলা বুড়ি মানুষ আর হামার সাথে ওমরা এইল্যা কি করিল। হামাক কষ্ট দিয়া ওমরা কি পাইল। মুই কি এই বয়সে ভাতার টাকার জইন্যে বারবার ব্যাংকোত আসিম,’ তিনি বলেন।
সারদিন অপেক্ষা করে ভাতার টাকা না পেয়ে আবদার আলী (৭৩), কবিজন বেওয়া (৬৯), রাবেয়া বেওয়া (৭০), আছমা বেওয়া (৭৪), সরস্বতী বালা (৭৬) ওহাজেরা বেওয়া (৭৮) সহ সবাই তাদের কষ্ট আর দুর্ভোগের কথা জানান।
বয়স্কভাতার টাকা বিতরণকারি সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা এমদাদ হক চৌধুরী বলেন, ‘হঠাৎ বৃষ্টি আসায় ভাতার টাকা বিতরণ বন্ধ করা হয়। তাছাড়া কিছু ভাতার বইয়ে জটিলতা থাকায় ভাতার টাকা দেয়া সম্ভব হয়নি। সমাজসেবা থেকে পাঠানো তালিকায় নামের সাথে অ্যাকাউন্ট নম্বরের মিল না থাকায় ভাতার টাকা বিতরণ করা হয়নি। সমাজেসবা কর্তৃক ভুলগুলো শোধরানোর পর টাকা বিতরণ করা হবে।’
জানতে চাইলে লালমনিরহাট সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুর-ই জান্নাত বলেন, তালিকায় এমন ভুল হওয়ার কথা নয়। কারণ এ তালিকায় সুবিধাভোগীরা এর আগেও ভাতা উত্তোলন করেছেন।
তিনি ব্যাংকে গিয়ে তালিকার সাথে ভাতা বইগুলো মিলিয়ে দেখবেন বলে জানান।
লালমনিরহাট সোনালী ব্যাংকের এজিএম সাইয়েদ শাহজামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কার ভুলের জন্য সরকারের বয়স্কভাতা সুবিধাভোগী বয়স্ক মানুষগুলো ভাতার টাকা না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বয়স্ক মানুষগুলো ভাতার টাকার জন্য ব্যাংকের বাইরে বৃষ্টির পানিতে ভিজে কষ্ট করার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
Comments