প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন টেকনাফের ৫০ হাজার জেলে

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ বঙ্গোপসাগরের উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরতে দেওয়ার সুযোগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে টেকনাফ এলাকার জেলে সমাজের প্রতিনিধিরা।

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ বঙ্গোপসাগরের উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরতে দেওয়ার সুযোগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে টেকনাফ এলাকার জেলে সমাজের প্রতিনিধিরা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন, টেকনাফ ক্ষুদ্র নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি ও টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নূর মোহাম্মদ গণি, সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ, নৌকা মালিক ফিরোজ আহম্মদ ও বশির আহমদ প্রমুখ।

স্মারকলিপিতে নৌকা মালিকরা দাবী করেছেন, গভীর সাগরে বড় বড় ট্রলারযোগে ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ধরা বন্ধের জন্য ২০১৫ সালে যে আইন তৈরি হয়েছে তা এখন ছোট ছোট ডিঙি নৌকার উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে টেকনাফের প্রায় ৫০ হাজার জেলে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে সরকার গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞা দেয়। সারাদেশের মত কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফেও তা কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু এতে টেকনাফে দুই হাজার ডিঙি নৌকার অন্তত ৫০ হাজার জেলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

এসব নৌকার জেলেরা গভীর সাগরে গিয়ে মাছ আহরণ করে না। উপকূলের মাত্র দেড় থেকে দুই কিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকায় এসব নৌকাগুলো ছোট মাছ আহরণ করে। এসব মাছ দিয়ে পূরণ করে স্থানীয় চাহিদা। নৌকাগুলো দিনের বেলাতেই মাছ ধরে। ৬৫ দিন মাছ ধরার বন্ধ রাখার সরকারি আদেশে টেকনাফের এই ৫০ হাজার জেলে পরিবারে চলছে হাহাকার।

অনেক পরিবারে একবেলা খাবারও যোগাড় হচ্ছে না। মিয়ানমার সীমান্ত, নাফনদী ও সাগর দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মানবপাচার ও ইয়াবাসহ মাদক পাচারের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় গত তিন বছর ধরে স্থানীয় জেলেরা নাফনদী ও সাগরে মাছ ধরতে পারছে না। এর উপর ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধের আদেশে জেলে পরিবারগুলোতে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাই বিপর্যয় রোধে ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধের আদেশ পুনর্বিবেচনা করাটা এখন সময়ের দাবী।

প্রতি বছর আশ্বিন মাসের প্রথম তারিখ থেকে ২২ দিন ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম হিসাবে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। এতে জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও টেকনাফের জেলেরা এই সিদ্ধান্ত মেনে চলেন। কিন্তু ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা টেকনাফের জেলেদের জন্য অমানবিক।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, টেকনাফে জেলেরা যে নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন-তা আকারে খুবই ছোট। স্থানীয়ভাষায় এই নৌকাকে বলা হয় ‘টাওঙ্গা নৌকা’। এই নৌকা কোনোভাবেই গভীর সাগরে যেতে পারে না। উপকূলের কাছাকাছি সকালে গিয়ে মাছ ধরে দুপুরের পরে ফিরে আসে। এসব নৌকায় ধরা হয় লইট্যা, ফাইষ্যা, পোপা, ছুরি ইত্যাদি ছোট মাছ। এ নৌকায় কখনোই ইলিশসহ সামুদ্রিক বড় মাছ ধরা হয় না।

কিন্তু গভীর সাগরে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ আহরণ করছে বিভিন্ন ট্রলিং জাহাজ। এসব ট্রলিং জাল ও বড় ট্রলারের ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখতে সরকার ২০১৫ সালের ২০ মে আইন করে একটি গেজেট প্রকাশ করে। এই গেজেটের আদেশ মূলত ছোট নৌকার জন্য প্রযোজ্য নয়। এখন ছোট নৌকার উপর এই আইন কার্যকর করায় টেকনাফের ৫০ হাজার জেলের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। অনাহারে দিন কাটাচ্ছে নৌকার মালিক ও জেলে পরিবার।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বাংলাদেশকেও স্থবির করে দিয়েছে। অন্যদিকে মাদক চোরাচালান বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক টেকনাফে মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় টেকনাফের মানুষ বর্তমানে যখন অবৈধ পথ পরিহার করে বৈধ পথে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে টেকনাফের এক-চতুর্থাংশ মানুষ দীর্ঘ ৬৫ দিন মাছ ধরতে না পারলে তাদের জীবনের চাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ গণী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইতিমধ্যে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরেও তারা সমিতির পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। তিনি এ বিষয়ে  প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

19m ago