সন্তানের অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে ঝুপড়ি ঘরে বৃদ্ধ বাবা
বৃদ্ধ বাবাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে এক নিষ্ঠুর সন্তান। বর্তমানে ওই বৃদ্ধ পরের জমিতে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। খাচ্ছেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। এভাবেই গত সপ্তাহ ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বৃদ্ধ বাবা।
এ ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৫ নং শিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের বড়শিমলা গ্রামে। হতভাগা ওই বৃদ্ধ বাবার নাম আবজাল গাজী।
সত্তরের বেশি বয়সী আবজাল গাজীর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। পাঁচ বছর আগে ছেলেরা স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি লিখে নেয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃদ্ধ আবজাল গাজী অন্যের সহযোগিতায় কালীগঞ্জ থানায় ছেলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তার স্ত্রীও বাড়ি ছেড়ে একমাত্র মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে বসবাস করছেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকায় বেশ কয়েক বছর আগে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার তিন ছেলেই বিদেশ করেছেন। এরমধ্যে মেজ ছেলে রবিউল ইসলাম গাজী মারা গেছেন। ছোট ছেলে বাবুল গাজী এখনো প্রবাসী। বড় ছেলে রফিক গাজী প্রায় আট বছর হলো প্রবাস থেকে ফিরে এখন বাড়িতে। রফিক গাজীর বিরুদ্ধে নিজ কন্যা সন্তানকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ আছে।
বৃদ্ধ বাবা আবজাল গাজীর বলেন, ‘ছেলে আমাকে খেতে দেই না, কিছু বললেই শুধু মারে। এক সপ্তাহ আগেও বড় ছেলে রফিক আমার বাম চোয়ালে জোরে চড় মারে। এরপর বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীদের পরামর্শে বাড়ি ছেড়ে গ্রাম সম্পর্কে এক বোনের জমিতে একটি চালা তৈরি করে সেখানেই থাকছি। খাচ্ছিও পরের বাড়িতে।’
অভিযুক্ত ছেলে রফিক গাজী বলেন, ‘আমার বাবা আমার কথা শোনে না। তার মতো করে চলতে চায়। যে কারণে মতের অমিল হওয়ায় সম্প্রতি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।’
জমি লিখে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমার সব জমি অন্যের কাছ থেকে কেনা।’
প্রতিবেশী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হযরত আলী বলেন, ‘রফিক গাজী এক জন অসামাজিক মানুষ। স্থানীয় এ বৃদ্ধ বাবা আবজাল গাজীকে প্রায়ই তার বড় ছেলে রফিক গাজী নির্যাতন করে। দিনের পর দিন খেতে দেয় না। এ নিয়ে সামাজিকভাবে অনেকবার সালিশ হয়েছে। কিন্তু, কোনো সমাধান হয়নি। সর্বশেষ প্রতিবেশী এক বোনের জমিতে চালা তুলে বসবাস করছেন তার বৃদ্ধ বাবা।’
এ ঘটনায় তার সহযোগিতায় বৃদ্ধ আবজাল কালীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানান স্থানীয় ওই যুবলীগ নেতা।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
Comments