ঝিনাইদহ ফায়ার স্টেশনের গাছ কেটে জ্বালানি বানাচ্ছেন কর্মকর্তারা
অর্জুন গাছের গুড়ি কুড়াল ও করাত দিয়ে কাটছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, সামনেই দাড়িয়ে থেকে তদারকি করছেন উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক হাসান ভুঞা, স্টেশন অফিসার দিলীপ কুমার সরকার ও সাবস্টেশন অফিসার রউফ মোল্লা। ঘটনাটি ঝিনাইদহ সদর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের।
এভাবে করোনা পরিস্থিতিতে গোপনে ফায়ার স্টেশনের প্রায় ২০টির বেশি আম, মেহগনি, অর্জুন, আমলকী, নারিকেলসহ বিভিন্ন জাতের গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি গাছ সম্পূর্ণ কাটা হয়েছে। বাকিগুলোর ডাল কেটে খড়ি হিসেবে স্টেশনে ব্যবহার হচ্ছে। ডিএডি অফিসের ছাদেও খড়ি মজুদ করা হয়েছে।
স্থানীয় করাত কলের শ্রমিকরা জানান, ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে করে কয়েকজন এসে ৩০ সিএফটি কাঠ খড়ি করে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বড় একটি অর্জুন গাছও ছিল।
গাছ কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবস্টেশন অফিসার রউল মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাটা গাছ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’ আর স্টেশন অফিসার দিলীপ কুমার সরকারের দাবি, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
সরকারি গাছ কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের জেলা উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক হাসান ভুঞা উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছেন? আপনার তো জানতে চাওয়ার কথা না। অন্য কোনো গাছ কাটা হয়নি। শুধু ঘূর্ণিঝড়ে হেলে পড়া একটি অর্জুন গাছ কাটা হয়েছে। এডি স্যার, ডিসি স্যারের অনুমতিতে খড়ি করা হয়েছে।’
কিন্তু ঝিনাইদহের দায়িত্বে থাকা যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক (এডি) মতিয়ার রহমানের ভাষ্য, তাকে অন্ধকারে রেখে ফায়ার স্টেশনের গাছ কাটা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গাছ কেটে জ্বালানি বানানো হচ্ছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি। স্টেশনের গাছ কেটে তারা কোনোভাবেই জ্বালানি বানাতে পারে না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম, বিষয়টি দেখব।’
জেলা বন কর্মকর্তা ও সরকারি গাছ কাটা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন জানান, সরকারি গাছ নিজস্ব উদ্যোগে কাটার কোন বিধান নেই। কেউ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় যেটা করেনি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়।
জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, ফায়ার স্টেশনের গাছ কাটার বিষয়ে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। সামনের সমন্বয় সভায় বিষয়টি আলোচনা করে, ঘটনা পরিদর্শন শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানানো হবে।
Comments