পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড, দুর্ভোগে যাত্রীরা

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের রজপাড়া এলাকায় থ্রিহুইলার ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। বরগুনার আমতলী ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সংযোগস্থলে এ অবৈধ স্ট্যান্ড বসানোর ফলে এ রুটের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের রজপাড়া এলাকায় থ্রিহুইলার ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। ছবি: স্টার

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের রজপাড়া এলাকায় থ্রিহুইলার ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। বরগুনার আমতলী ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সংযোগস্থলে এ অবৈধ স্ট্যান্ড বসানোর ফলে এ রুটের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।

আমতলী থেকে কলাপাড়ার উদ্দেশ্যে আসা যাত্রীদের থ্রিহুইলার বা অটোরিকশাগুলোকে আমতলী উপজেলার সীমান্তে আটকে দেওয়া হচ্ছে। ফলে যাত্রীদেরকে তাদের বাহন থেকে নেমে পটুয়াখালী অংশে গিয়ে অন্য বাহনে ওঠতে হয়। এতে বিরক্তি প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের আমতলী-কলাপাড়া অংশের দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। এ অংশের বেশিরভাগ বরগুনার আমতলী উপজেলার অর্ন্তভুক্ত। রজপাড়া এলাকা হচ্ছে এ দুই উপজেলার সংযোগস্থল। বাসে যেতে সময় লাগে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট আর থ্রিহুইলার বা অটোরিকশায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট।

লোকাল যাত্রীরা সাধারণত বাসের পরিবর্তে থ্রিহুইলার বা অটোরিকশায় বেশি যাতায়াত করেন। তাদের অভিযোগ, একটি ‘চাঁদাবাজ চক্র’ মহাসড়কটির ওপর রজপাড়ায় একটি অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। আমতলী থেকে যাত্রী নিয়ে কোনো থ্রিহুইলার বা অটোরিকশা সরসরি কলাপাড়ায় যেতে পারে না। একইভাবে কলাপাড়া থেকেও যাত্রীবাহী এসব যানবাহন আমতলীতে যেতে পারছে না। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে চালু রয়েছে এ অবৈধ স্ট্যান্ডটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নাম নিয়ে মামুন মোল্লা, রাজা, আশিকসহ কয়েকজন যুবক মহাসড়কটিতে এ অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ রুটে চলাচলকারী একজন স্কুল শিক্ষক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চলাচলের সুবিধার জন্য আমি বাসে না ওঠে থ্রিহুইলার বা অটোরিকশায় উঠি। কিন্তু, রজপাড়ায় গাড়ি বদল করতে আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’

নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা আরও বেশি দুর্ভোগে পড়েন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে যাত্রীদেরকে অকথ্য গালাগালসহ নানাভাবে অপমান, অপদস্ত করে সেই যুবক ও তাদের সহযোগীরা।’

আমতলীর হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও এ মহাসড়কের একজন থ্রিহুইলারচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই রাস্তায় ১০ বছর ধরে মাহিন্দ্রা চালাই। কলাপাড়া শহরের নাচনাপাড়া ও ব্রিজ এলাকায় একটি চক্র প্রতিবার ৪০ থেকে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করতো। কিন্তু, মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে এ চক্রটি ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা আদায় করতে শুরু করে।’

‘এর মধ্যে ৫০ টাকা পৌর কর আর বাকি ৬০ টাকা পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরের নামে তোলা হয়’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মাহিন্দ্রাচালকরা এ টাকা দিতে অস্বীকার করলে চক্রের সদস্যরা কলাপাড়া অংশে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এমনকী, তারা চালকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করে।’

‘কলাপাড়া অংশে প্রবেশ করতে না দিয়ে এ চক্রটি মাহিন্দ্রা বা অটো সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখে। যাত্রীদেরকে পায়ে হেঁটে আমতলী কিংবা কলাপাড়াগামী যানবাহনে ওঠতে বাধ্য করে,’ যোগ করেন তিনি।

আব্দুল মান্নান নামের এক অটোরিকশাচালক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের যানবাহনগুলো সরাসরি যেতে না দিলেও চক্রটি আমাদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে আদায় করছে। আমরা টাকা দিতে না চাইলে তাদের হাতে নানাভাবে হেনস্তা হতে হয়।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মামুন মোল্লা, রাজা ও আশিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল হালদার ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পৌর কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র কলাপাড়া বাস স্ট্যান্ড ব্যবহারকারী যানবাহনগুলো থেকে পৌরকর রশিদের মাধ্যমে আদায় করে থাকে। আর এ ধরনের অবৈধ স্ট্যান্ডে সঙ্গে পৌরসভার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এ ব্যাপারে কলাপড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এটি যাত্রীদের জন্য বিরক্তিকর। উপজেলা ও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হবে।’

‘আওয়ামী লীগের নাম বলে কেউ যদি অবৈধভাবে ব্যক্তিগত সুবিধা নেয় তার দায় দল নেবে না’, বলেও জানান তিনি।

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অভিযুক্তদের মধ্যে মামুন মোল্লার বিরুদ্ধে যৌতুক, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অপর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ওই অবৈধ স্ট্যান্ডটি অপসারণের ব্যবস্থাও করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago