স্লোভেনিয়া: পূর্ব-পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সেতু রচনা করা এক ছোট্ট দেশ
পূর্ব-পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সেতু রচনাকারী স্লোভেনিয়া সুপরিচিত এর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, বিশেষ করে পাহাড়-পর্বত, হৃদ ও স্কি রিসোর্টের জন্য।
ভৌগলিকভাবে মধ্য ইউরোপে অবস্থিত এ দেশ এক সময় প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল।
দেশটির রাজধানী Ljubljana-র উচ্চারণ লুজব্লিজানা, লুবজানা, লুবিয়ানা, লুজব্লিয়ানা, লুজবিজানা যা ইচ্ছা আপনি বলতে পারেন। তবে সঠিক উচ্চারণ হচ্ছে লুবলিয়ানা।
লুবলিয়ানা শব্দের ইংরেজি অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘দ্য লাভড ওয়ান’। স্লোভেনিয়ার মানুষ তাদের শহরগুলোকে খুবই ভালোবাসেন। এ কারণে তারা তাদের রাজধানীর এমন নামকরণ করেছেন।
লুবলিয়ানা দেশটির প্রধান শহর এবং প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক কাজের প্রধান কেন্দ্র। এটি ছোট শহর হলেও অত্যন্ত গোছালো, পরিপাটি ও পরিকল্পিত। পায়ে হেঁটে এক ঘণ্টার মধ্যে পুরো শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দেখে নেওয়া যায়।
এছাড়াও, দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে রয়েছে মারিবোর (Maribor), ক্রান (Kranje), ছেলইয়ে (Celje), নভো মেস্তো (Novo Mesto), কপার (Koper) ও নোভা গরিছা (Nova Gorica)।
স্লোভেনিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে অভিন্ন সীমান্ত চুক্তি বা সেনজেন রাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত।
টোলার (Tolar) এক সময় দেশটির জাতীয় মুদ্রা ছিল। ২০০৭ সাল থেকে দেশটির জাতীয় মুদ্রা হিসেবে ইউরো গৃহীত হয়। এক সময় সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রচলন ছিল এমন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম স্লোভেনিয়া ইউরো জোনে প্রবেশ করে।
প্রায় ৭ হাজার ৮২৭ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত স্লোভেনিয়াকে অনেকে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সেতু হিসেবে বিবেচনা করেন। এর পেছনে রয়েছে ভৌগলিক ও রাজনৈতিক কারণ।
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত দুই পরাশক্তি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পুরো বিশ্বে তাদের প্রতিপত্তি খাটানোর চেষ্টা করত। সোভিয়েত ইউনিয়নের মূল আদর্শিক কাঠামো ছিল সমাজতন্ত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাশক্তি হিসেবে রাজনৈতিকভাবে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে শুরু করে। সে সময় পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হয়। তবে পূর্ব ইউরোপের মধ্যে এক মাত্র গ্রিসে সোভিয়েত ইউনিয়নের কোনো প্রভাব ছিল না।
সোভিয়েত ইউনিয়ন যে ধারার সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল সেখানে মুক্তবাজার অর্থনীতিসহ বেশকিছু বিষয় ছিল ‘নিষিদ্ধ’। কিন্তু, সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে বিরাজমান সমাজতান্ত্রিক কাঠামো সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো রক্ষণশীল ছিল না।
যুগোশ্লাভিয়া সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও মুক্তবাজার অর্থনীতিকে অগ্রাহ্য করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, কানাডাসহ পশ্চিমের সব দেশগুলোর সঙ্গে এর সখ্যতা ছিল। সে সব দেশে ভ্রমণের ব্যাপারে যুগোশ্লাভিয়ার নাগরিকদের কোনো বিধি-নিষেধ ছিল না। অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার পরও পশ্চিমের দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রতি তারা একদিকে যেমন উদার ছিল; অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আদর্শগতভাবে তারা মিশে থাকতে পেরেছিল।
যুগোস্লাভিয়ার নেতা মার্শাল টিটো তার দেশকে স্ট্যালিনের প্রভাব থেকে অনেকখানি দূরে রেখেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে যুগোস্লাভিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল বাজার অর্থনীতি এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মাঝামাঝি।
ভৌগলিকভাবে স্লোভেনিয়া ছিল যুগোস্লাভিয়ার পশ্চিম সীমান্তে। এ কারণে স্লোভেনিয়াকে অনেকে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যাকার সেতু হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বিদ্যমান সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মাঝে বিভাজন টানা হতো নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত।
গ্রিস ভৌগোলিকভাবে পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত হলেও একে খুব পূর্ব ইউরোপীয় দেশ বলা হয় না। কেননা, দেশটিতে কখনো সোভিয়েত কিংবা কমিউনিজমভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার প্রভাব ছিল না।
ইউরোপের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল— আল্পস, প্যানোনিয়ান প্লেট, ডিনারাইডস ও ভূ-মধ্যসাগরের মিলন ঘটেছে স্লোভেনিয়াতে এসে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাতিসংঘ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্লোভেনিয়ার জনসংখ্যা ২০ লাখ ৮১ হাজারের কাছাকাছি। দেশটির প্রধান ধর্ম রোমান ক্যাথলিজম। স্লোভেনিয়ার অধিবাসীদের গড় আয়ু ৮১ বছরের কাছাকাছি।
স্লোভেনিয়ায় খ্রিষ্টধর্মের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন। তারা দেশটির মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশের কাছাকাছি। এ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষই বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও আলবেনিয়া (প্রকৃতপক্ষে কসোভো) থেকে যুগোস্লাভ যুদ্ধের সময় স্লোভেনিয়াতে অভিবাসী হয়েছিলেন।
একজন মানুষ সর্বোচ্চ কতটুকু সাঁতার কাঁটতে পারেন?— এ হিসাব কষলে স্লোভেনিয়া অনেকখানি এগিয়ে। মার্টিন স্ট্রেল নামে স্লোভেনিয়ার এক অধিবাসী দানিউব, ইয়াংৎজে ও মিসিসিপি নদীর সমগ্র দৈর্ঘ্যের সমান সাঁতার কেটে বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন।
১৯৯০ সালের ৭ অক্টোবর প্রথম দম্পতি হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখার কৃতিত্ব অর্জন করা আন্দ্রেই ও মারিয়া স্ট্রেমফেলি ছিলেন স্লোভেনিয়ার অধিবাসী।
বিশ্বের সবচেয়ে হালকা স্তন্যপায়ী প্রাণীর নাম এতরুসকার শ্রিুউ। প্রকৃতিগতভাবে এর গড় ওজন দুই গ্রামের মতো। সামান্য পরিচিত ও আকর্ষণীয় এ প্রাণীটি স্লোভেনিয়াতে দেখতে পাওয়া যায়।
স্লোভেনিয়ার সাধারণ মানুষের জীবনে লিনডেন গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এ গাছ দেশটির অধিবাসীদের জীবনে প্রতীক হিসেবে কাজ করে। লিনডেন গাছের আয়ুষ্কাল কয়েক শ বছর। এমনকী, এক হাজার বছরের মতোও হতে পারে।
স্লোভেনিয়ায় লিনডেন গাছ প্রেম, ভালোবাসা বন্ধুত্ব ও আনুগত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। ধারণা করা হয়, প্রাচীনতম লিনডেন গাছগুলো আধুনিক ইউরোপেরও তুলনায় বহু পুরনো!
স্লোভেনিয়ার সরকারি ভাষা স্লোভেনিয়ান বা স্লোভিন মূলত স্লাভিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত একটি ভাষা। স্লোভেনিয়ার উত্তরে অস্ট্রিয়া, পশ্চিমে ইতালি, উত্তর-পূর্বে হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পূর্বে ক্রোয়েশিয়া ও দক্ষিণ-পশ্চিমে আড্রিয়াটিক সাগর।
অস্ট্রিয়ার ভাষা জার্মান যা জার্মানিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত, ইতালির ভাষা ইতালিয়ান যা ল্যাটিন ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য, হাঙ্গেরির ভাষা হাঙ্গেরিয়ান আসলে ফিন-ইউরালিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত এবং ক্রোয়েশিয়ার ভাষা ক্রোয়েশিয়ান মূলত একটি স্লাভিক ভাষা।
এতোগুলো বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর সদস্যের দেশগুলোর মধ্যে স্লোভেনিয়ার অবস্থান হওয়ায় দেশটির ভাষা ও সংস্কৃতিকে অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বলে গণ্য করা হয়।
ধারণা করা হয়, স্লোভেনিয়ার স্থানীয় ভাষাটি প্রথম কোনো স্লাভিক ভাষা যেটি বর্ণমালা দ্বারা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। অত্যন্ত আশ্চর্য মনে হলেও সত্য যে স্লোভিন মাত্র একুশ লাখ মানুষের ভাষা। কিন্তু এ ভাষার স্বীকৃত উপভাষা প্রায় ৪৬টির মতো।
ইউরোপে ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে স্লোভিন একমাত্র ভাষা যেখানে একবচন (Singular) ও বহুবচন (Plural) এর পাশাপাশি দ্বি-বচন (Dual) নামে আরও একটি টার্ম প্রচলিত আছে।
ইংরেজি দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বহুল ব্যবহৃত ভাষা এবং EF EPI Index অনুসারে স্লোভেনিয়ার এর অবস্থান বর্তমানে পৃথিবীতে সপ্তম। একই সূচক অনুসারে স্লোভেনিয়ার বর্তমান স্কোর ৬৪ দশমিক ৮৪ যা সারা পৃথিবীতে সপ্তম এবং সাবেক কমিউনিস্ট দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে। দেশটিতে বসবাসরত প্রায় সবাই ভালো ইংরেজি জানেন এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
স্লোভেনিয়ার বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠীর নাম স্লোভেনিয়ান। তবে হাঙ্গেরিয়ান, রোমা, ইতালিয়ান, সার্বিয়ান, বসনিয়ান, ক্রোয়েশিয়ান, জার্মান— এ সব জাতিগোষ্ঠীরও স্বল্প সংখ্যক মানুষ স্লোভেনিয়াতে বাস করেন।
স্লোভেনিয়ার নবম বৃহত্তম শহর ট্রবোভলিয়েতে অবস্থিত পাওয়ার চিমনিটি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এর দৈর্ঘ্য ৩৬০ মিটারের কাছাকাছি।
পৃথিবীর দীর্ঘতম খিলান-আকৃতির পাথরের সেতু স্লোভেনিয়াতে দেখা যায়। ‘সলকান ব্রিজ’ বা স্লোভেনিয়ার স্থানীয় ভাষায় ‘সলকানস্কি মস্ত’ নামে পরিচিত এ সেতুটি স্লোভেনিয়ার বোহিনি (Bohinj) রেলওয়ে রুটের ওপর অবস্থিত।
স্লোভেনিয়াতে বিশেষ ধরণের দৌড় প্রতিযোগিতার প্রচলন আছে। এর নাম ‘দ্য হিল অব ডেথ’ বা মৃত্যুর পাহাড়। চার শ মিটার দীর্ঘ এ দৌড় প্রতিযোগিতাকে অনেকে ‘দ্য ভার্টিকাল ম্যারাথন’ হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। কারণ, এ দৌড় প্রতিযোগতায় অংশ নিতে চাইলে একজন প্রতিযোগীকে উল্লম্বভাবে চারশত মিটার অতিক্রম করতে হবে। রোমাঞ্চকর এ দৌড় প্রতিযোগিতার বাণিজ্যিক নাম ‘দ্য রেড বুল ফোর হান্ড্রেড’।
পর্যটকদের কাছে স্লোভেনিয়ার মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর সুন্দর সুন্দর লেক, পাহাড়-পর্বত, দূর্গ ইত্যাদি। স্লোভেনিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর লুবলিয়ানাতে ১২টির মতো জাদুঘর রয়েছে। এ সব জাদুঘর একটি আরেকটি থেকে খুবই কাছাকাছি হওয়ায় একদিনে সবগুলো ঘুরে দেখা সম্ভব।
প্রাচীনকালের যে সব চাকার নিদর্শন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা খুঁজে পেয়েছেন তার মধ্যে ‘লুবলিয়ানা মার্শেজ হুইল’ অন্যতম। প্রায় সাড়ে ৫,০০০ বছরের পুরনো এই চাকা এটি লুবলিয়ানাতে পাওয়া গিয়েছে।
লুবলিয়ানার প্রধান প্রতীক ড্রাগন। এ শহরের বিভিন্ন স্থানে ড্রাগনের ভাস্কর্য দেখা যায়। এ দেশের বহু মানুষ বিশ্বাস করে যে বহু শতাব্দী আগে কোনো এক সময় লুবলিয়ানার নদীতে ড্রাগনের বসবাস ছিল।
মারিবোর স্লোভেনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো আঙুরের বাগান এ শহরে অবস্থিত। জামেটনা চ্রনিনা নামক ৪০০ বছরের পুরনো এক বিশেষ প্রজাতির আঙুর থেকে ওয়াইন তৈরির জন্য মারিবোর বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ।
লেক ব্লেড, পোস্তোয়ানা কেভ, সটেস্কা ভিন্টগার, স্কচইয়ান কেভ, লেক বোহিনি, স্ট্রুনিয়ান, ট্রিগলাভ, লুবলিয়ানা ক্যাসেল— এগুলো স্লোভেনিয়ার কয়েকটি প্রধান দর্শনীয় স্থান।
এছাড়াও, ভূমধ্যসাগর তীরে অবস্থিত পিরান দেশটির অন্যতম জনপ্ৰিয় পর্যটন এলাকা।
বলা হয়ে থাকে ইউরোপ মহাদেশে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের পর সবচেয়ে বেশি ঘন জঙ্গলাবৃত দেশটির নাম স্লোভেনিয়া। এর অর্ধেকটাই ঘন জঙ্গলে পূর্ণ।
হাঙ্গেরি থেকে স্লোভেনিয়াতে প্রবেশ করার সময় দেখা যায় সুউচ্চ পর্বতমালা যা স্লোভেনিয়ার প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে রয়েছে। অতুলনীয় নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য, ঘন বন-জঙ্গল ও বাদামি ভল্লুকের কারণে স্লোভেনিয়াতে সব সময় প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনা লেগেই থাকে।
১৯৯১ সালে স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধকে অনেকে ‘দ্য টেন ডে ওয়ার’ বা ‘দশ দিনের যুদ্ধ’ও বলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ছিল ইউরোপের প্রথম যুদ্ধ যেখানে ৭৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
স্লোভেনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। ঘটনাক্রমে ক্রোয়েশিয়াকে প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল স্লোভেনিয়া।
স্লোভেনিয়ার সাধারণ মানুষ কিছুটা ঠান্ডা মেজাজের। তবে তারা খুবই বন্ধুবৎসল। দেশটির সাধারণ জনগণের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা বিভিন্ন ভাষা-গোষ্ঠীর মানুষের সংস্কৃতিকে সহজে গ্রহণ করতে পারেন। কোন অতিথি যদি তাদের দেশে গিয়ে তাদের ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেন তাহলে তারা খুবই খুশি হন।
স্লোভেনিয়া তার নিজস্ব ‘ব্র্যান্ডেড সাদা ঘোড়া’র জন্য খুবই বিখ্যাত। লিপিজ্জান নামক অনন্য সুন্দর এ সাদা ঘোড়ার প্যাটেন্ট রয়েছে প্রায় ৪৩০ বছর পুরনো স্লোভেনিয়ার লিপিসা নামক ঘোড়ার খামারটিতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী ও দেশটির ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের জন্ম স্লোভেনিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মেলানিয়া ট্রাম্প হচ্ছেন দেশটির ২৩৯ বছরের ইতিহাসে একমাত্র ফার্স্টলেডি যার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে।
সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ও কিংবদন্তী নেতা মার্শাল টিটোর জন্মও স্লোভেনিয়াতে। এছাড়াও, যারা স্প্যানিশ এল ক্লাসিকোর নিয়মিত দর্শক তারা নিশ্চয়ই ইয়ান অবলাক (Jan Oblak) এ নামের সঙ্গে পরিচিত। আতলেতিকো মাদ্রিদের এই গোলরক্ষকের জন্ম স্লোভেনিয়ার স্কোফিয়া লোকা নামক ছোট শহরে।
রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া
Comments