‘বাবা দরজা খোলো, বুকে নাও’

সাড়ে তিন বছরের আলীশাবা প্রতিদিন বাবার কাছে যাওয়ার জন্য দরজার এ পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। ছবি: বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেজের ভিডিও থেকে নেওয়া।

‘বাবা দরজা খোলো, বুকে নাও’ করোনা আক্রান্ত বাবার কাছে এভাবেই আকুতি জানায় সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশুকন্যা আলীশাবা রহমান ইবতেজা।

গত ২৬ মে থেকে তার বাবা আলাদা কক্ষে থাকে। বাবাকে দূর থেকে দেখে বাবার কাছে ছুটে যেতে চায় সে। ব্যালকনির সামনে দাঁড়িয়ে বাবার জন্য চিৎকার করে ওঠে ছোট্ট আলীশাবা। কিন্তু, তার বাবার কোনো উপায় নেই। তিনি চাইলেও দৌড়ে এসে ছোট্ট সন্তানকে কোলে নিতে পারছেন না। করোনাভাইরাস এভাবে বাবা ও শিশু সন্তানকে আলাদা করে দিয়েছে।

কিন্তু, তিন বছরের শিশু তো আর করোনা বোঝে না, তাই সে বাবার বুকে থাকতে চায়।

বরিশালের কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আবদুর রহমান মুকুল জানান, ‘গত ২৬ মে হঠাৎ করেই শরীরে পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। এরপর ডাক্তারের কথা মতো আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেই। ৩১ মে নমুনা পরীক্ষার রেজাল্ট পজিটিভ আসে। এরআগে থেকেই আলাদা রুমে থাকা শুরু করি, কিন্তু আমার ছোট্ট মেয়ে এতো কিছু বোঝে না। রাতে অধিকাংশ সময়ে আমার বুকের উপরই সে ঘুমিয়ে পড়ত। এখনও তাই চায়। আমার সঙ্গে ছাড়া ঘুমোতে চায় না, কান্নাকাটি করে। এক সময় এভাবেই অনেক রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার সকালে উঠে দৌড়ে ব্যালকনিতে এসে বলে, ‘বাবা তুমি আমাকে বুকে নাও, দরজা খোল’।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাঝে মাঝে তার মা বলে, ‘বাবা কাল সকালেই তোমাকে বুকে নেবে এখন তুমি ঘুমিয়ে পড়।’ সে ঘুমিয়ে পড়লেও সকালে উঠে ব্যালকনিতে এসে আবার ডাকতে থাকে। আমার কষ্ট হলেও তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু, সে শুধু আমার কাছে ছুটে আসতে চায়।’

আজ শনিবার এমনই একটি ভিডিও দেখা গেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেজে।

আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, ‘করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সমাজ ও পরিবারের স্বার্থে নিজেকে আলাদা রাখছি। কিন্তু, সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে তা বোঝাতে পারছি না। অবশ্য বোঝানো সম্ভবও না। সে বুকের ওপর শুয়ে থাকতে চায়, কাছে আসতে চায়। এই বয়সে সে কখনো আমার বুকের ওপর ছাড়া  ঘুমায় না। আগামী ১১ তারিখ পুনরায় পরীক্ষা হবে, আশাকরি এবার রেজাল্ট নেগেটিভ আসবে। আশায় বুক বেঁধে আছি কবে সাড়ে তিন বছর কন্যাকে বুকে নেব।’

বরিশাল বিভাগে করোনা আক্রান্ত ৯৩২ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৯৯ জনই পুলিশ বিভাগের।

বরিশাল রেঞ্জ এর ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, করোনাকালে পুলিশ সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য পুলিশ সদস্যদের আক্রান্তের হারও বেশি।

Comments

The Daily Star  | English

10 ministries brace for budget cuts

The railway ministry, the power division, and the primary and mass education ministry will see the biggest chop.

10h ago