চীনে কঠোর তথ্য নিয়ন্ত্রণ, বিকল্পভাবে বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার
করোনা মহামারির মধ্যে চীনে ব্যাপকভাবে বেড়েছে তথ্য নিয়ন্ত্রণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এখন কড়া নজরদারিতে রয়েছে, কঠোর হয়েছে দেশটির সেন্সরশিপ ব্যবস্থাপনাও।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
চীনের টেলিভিশন উপস্থাপক চুই ইওঙ্গুয়ানের উদাহরণ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টুইটারের আদলে তৈরি চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবো’তে চুই ইওঙ্গুয়ানের ফলোয়ার প্রায় ২ কোটি। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ মতামতের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়।
কিন্তু গত বছর থেকেই তিনি নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো পোস্ট করতে পারছিলেন না। এ বছর মে মাসে তার অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়।
মে মাসে, একইসময়ে তার উইচ্যাট অ্যাকাউন্টের পোস্টেও ‘গুজব’ উল্লেখ করে সর্তকবার্তা দেওয়া হয়। ওই সর্তকবার্তাসহ পোস্টটির স্ক্রিনশট টুইটারে শেয়ার করেন তিনি।
১৫ মে টুইটারে তিনি লেখেন, ‘আমার নাম সেন্সর করা হয়েছে। তারা কি আমাকে পশ্চিমা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করানোর জন্য জোর করছেন?’
চুই কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটি অব চায়না বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে শুরু থেকেই তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন।
চীনা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অন্য অনেকের মতোই তার পোস্টও সেন্সর করা হয়।
তিনি জানান, অনেকেই এখন সেন্সরের কারণে পশ্চিমা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছেন। এটাকে ‘ডিজিটাল মাইগ্রেশন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চুইয়ের অ্যাকাউন্ট সেন্সর করার ব্যাপারে উইচ্যাটের এক মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ওয়েইবোর সঙ্গে ইমেইল ও ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফু কিং ওয়া বলেন, ‘চীনের এই ধরনের তথ্য নিয়ন্ত্রণ বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে।’
ফু জানান, চীনে গত ডিসেম্বর থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ১০০টি পোস্ট সেন্সর করা হয়েছে।
ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে যখন করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হয় সেসময় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পোস্ট সেন্সর করা হয়।
অন্যদিকে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাস নিয়ে সর্তক করা প্রথম চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুর পর থেকে আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেন্সর ব্যবস্থা কঠোর হয়। সেসময় প্রতি হাজার পোস্টের মধ্যে অন্তত ৩টি পোস্ট সেন্সর করা হয়েছে।
চীনের সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৫৪ মিলিয়ন, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
যেসব প্রযুক্তি সংস্থা চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো পরিচালনা করে, তারা এ বছর উন্নত অ্যালগরিদম ও সেন্সরশিপের জন্য কয়েক হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে যাতে করে সংবেদনশীল তথ্য বা গুজব ছড়াতে না পারে।
চীনে টুইটার, ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর সর্বজনীন ব্যবহার অবৈধ। দেশটিতে অনেকেই বৈধ অনুমতি ছাড়াই ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে বিদেশি সাইটগুলো ব্যবহার করে থাকে।
অবৈধভাবে ভিপিএন ব্যবহার করা চীনে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। ২০১৮ সালে সাংহাই কোর্টে এই অপরাধের জন্য এক জনের তিন বছরের কারাদণ্ড হয়।
অধ্যাপক ফু কিং ওয়া জানান, ‘সেন্সরশিপের মতো সমস্যাগুলো কেবল চীনই নয়, বরং মহামারির সময়ে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তথ্য সেন্সর করার মতো সিদ্ধান্ত অনেক সরকারই নিচ্ছেন।’
এছাড়াও মহামারির কারণে সংবাদকর্মীদের উপর বাড়তি চাপ নিয়েও উদ্বেগ জানান তিনি।
তিনি বলেন, দুজন স্বাধীন সংবাদকর্মী চেন কিউশি ও ফাং বিন দেশটিতে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে উহান শহর থেকে তারা নিখোঁজ হন।
Comments