অভিযানের পর দোকান বন্ধ, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বেশি দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি

অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রির দোকানে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে তিন থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পালস অক্সিমিটারসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কারণে নগরীর বেশিরভাগ দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন এসব ব্যবসায়ীরা। তবে অতিরিক্ত দাম আদায় বন্ধ হয়নি। দোকানের সামনে থাকা মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে মিলছে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিংবা পালস অক্সিমিটার।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মোমেনবাগ আবাসিক এলাকার তিন নম্বর রোডের একজন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা। তার ভাই আবু তাহের দাবি করেন, ৫ হাজার টাকার অক্সিজেন সিলিন্ডার তিনি ২২ হাজার টাকায় কিনেছেন।

আবু তাহের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল গেটের পাশে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করে এমন বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ পেয়েছি। আবার যেসব দোকান খোলা পেয়েছি তারাও জানিয়েছে তাদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। তবে বন্ধ দোকানের পাশে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রির নোটিশ দেখে সেখানে থাকা নম্বরে যোগাযোগ করেছি। প্রথমে নেই বললেও পরে ২৫ হাজার টাকায় একটি সিলিন্ডার দিতে পারবে বলে জানায়। কোন উপায় না দেখে পরবর্তীতে ২২ হাজার টাকা দিয়ে আমাকে তা কিনতে হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ও মঙ্গলবার দুটি অভিযানে বাড়তি দামে অক্সিজেন সিলিন্ডির ও পালস অক্সিমিটার বিক্রি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির দায়ে পাঁচ ব্যবসায়ীকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা তাদের কাগজপত্র খতিয়ে প্রতি সিলিন্ডার অক্সিজেন ও পালস অক্সিমিটার তিন গুণ থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি। অধিকাংশ দোকানই বিক্রির কোন রশিদ রাখেন না। আবার কেউ কেউ ভূয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে অতিরিক্ত মুনাফা বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।’

তিনি বলেন, 'গতকাল সোমবার অভিযানের পর আজ গিয়ে বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ পেয়েছি। আবার যেসব দোকান খোলা পেয়েছি তারা দাবি করছেন তাদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। তবে দোকানে অভিযান চালিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়ায় নগরীর কাতালগঞ্জে অবস্থিত বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইভাবে আরো চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পালস অক্সিমিটার বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।'

একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নগরীর ৮-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট এ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছেন। আমরা তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরিন আখতার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এসব দোকানে ৫ হাজার টাকার সিলিন্ডার ২০ হাজার টাকায়, ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার পালস অক্সিমিটার ২৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রির তথ্য প্রমাণ পেয়েছি।’

'একাধিক ব্যবসায়ী বেশি দামে এসব আমদানি বা ক্রয় করেছেন দাবি করলেও কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। পরবর্তীতে দায় স্বীকার করে নেয়ায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে।'

এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কৃত্রিম সংকট তৈরির দায়ে কাতালগঞ্জের বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজকে চার লাখ টাকা, নগরীর সদরঘাট এলাকার মেসার্স ব্রাদার্স প্রকৌশলীকে এক লাখ টাকা, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় সাহান মেডিকোকে এক লাখ টাকা, কাজির দেউরি এলাকার হাসান ট্রেডাসকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মেসার্স আমানত শাহ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক আবু হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, হঠাৎ করে আমদানি চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে তাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এর বেশি কিছু বলতে না চাইলেও দোকানের চেয়ে ফেইসবুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus must resolve all issues from his position: Nahid

Nahid also alleged that an effort is on to obstruct the country's democratic transition and create another 1/11-style settlement

15m ago