গলদার রেণু উৎপাদনে সফল বাগেরহাট সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার
বাগেরহাট সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পর গত দুই বছর সীমিত জনশক্তি এবং অল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে গলদা চিংড়ির রেণু উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করেছে। তবে, গলদার রেণু উৎপাদন করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ে ব্যক্তিগত হ্যাচারিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. খালেদ কনোক বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে অন্যতম হলো চিংড়ি। এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দেশের মোট চিংড়ির এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয় বাগেরহাটে। এখানের ব্যক্তি মালিকানাধীন গলদা হ্যাচারি মালিকরা বিপুল বিনিয়োগ ও জনশক্তি নিয়ে কাজ শুরু করলেও ক্ষতির মুখে সব বন্ধ হয়ে গেছে।’
বাগেরহাটে মাত্র তিনটি হ্যাচারি কার্প জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন করছে বলেও জানান ওই মৎস্য কর্মকর্তা।
১৯৬৪ সালে তৎকালীন সরকার বাগেরহাট শহরের গোবারদিয়া অঞ্চলে ৮ দশমিক ৪ একর জমিতে মাছের বীজের উৎপাদন খামার স্থাপন করে। ২০১৮ পর্যন্ত এখানে শুধু সাদা কার্প মাছের পোনা উৎপাদন করা হতো। পরে এখানের ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার কুন্ডু, একজন টেকনিশিয়ান, একজন হ্যাচারি অ্যাটেনডেন্ট, একজন ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট, দুজন নৈশ প্রহরী ও একজন অফিস সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে গলদা চিংড়ির রেণু উৎপাদনের প্রস্তুতি নেন।
ডিএফও সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো তারা এক লাখ চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৯ সালে উৎপাদন হয় ২ লাখ গলদা রেণু। কর্তৃপক্ষ আশা করছে চলতি বছরে আড়াই লাখ চিংড়ি রেণু উৎপাদিত হবে ।
মাছের বীজ উত্পাদন ফার্মের ব্যবস্থাপক নির্মল কুমার কুন্ডু বলেন, ‘গলদা রেণু উৎপাদন না হওয়ায় বাগেরহাটের গলদা চিংড়ি হ্যাচারিগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরে আমরা আমাদের খামারে চিংড়ি লার্ভা উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ২০১৯ সালে চিংড়ি লার্ভা উৎপাদন করতে মাত্র ৮০ হাজার টাকার সরকারি বাজেট দিয়ে উৎপাদন করার চেষ্টা করেছি। প্রথম বছরেই আমরা সফল হয়েছি। আমরা এক লাখ পোনা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও দুই লাখ গলদা চিংড়ি পোনা উৎপাদন করতে পেরেছি। এ বছর আমরা পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদী থেকে ১০৫ টি মা মাছ সংগ্রহ করেছি। এগুলো থেকে ছয় লাখের বেশি লার্ভা জন্ম নিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে এগুলো পিএল (পোস্ট লার্ভা) বা রেণুতে রূপান্তরিত হবে। এবার প্রায় আড়াই লাখ পিএল বা রেণু উৎপাদিত হবে বলে মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংস্থা ৫৫ বছর আগের জনশক্তি কাঠামো নিয়ে চলছে। আমিসহ মাত্র সাত জন মানুষ আছেন। তারমধ্যে দুজন নাইট গার্ড মাস্টার রোলে কাজ করছেন। একটি এলএমএসএস পোস্ট থাকলেও পদটি শূন্য আছে। পর্যাপ্ত জনবল ও সুযোগ-সুবিধা পেলে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।’
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডা. খালেদ কনক বলেন, ‘আমরা মাছ বীজ উৎপাদন ফার্মে টানা দুই বছর ধরে চিংড়ির লার্ভা উৎপাদন করে সফল হয়েছি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও আমাদের উৎপাদন বন্ধ হয়নি। বেসরকারি বাণিজ্যিক হ্যাচারি যদি আমাদের প্রযুক্তি নিতে চায় তবে আমরা এটি তাদের দেব এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।
Comments