অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অটোরিকশায় রোগী পরিবহন, অবশেষে মৃত্যু

‘আজ দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ যখন এক ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেন, তখন তাকে দ্রুত কোন হাসপাতালে নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তার জন্য কোন অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি.’ বলছিলেন রাজশাহী জেনারেল রেলওয়ে পুলিশের ওসি মো. শাহ কামাল।
ছবি: সংগৃহীত

‘আজ দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ যখন এক ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেন, তখন তাকে দ্রুত কোন হাসপাতালে নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তার জন্য কোন অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি.’ বলছিলেন রাজশাহী জেনারেল রেলওয়ে পুলিশের ওসি মো. শাহ কামাল।

অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে কুষ্টিয়ার বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস (৫২) কে একটি অটোরিকশায় করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পরেই তিনি মারা যান, বলেন ওই কর্মকর্তা।

তিনি জানান, পরে চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন যে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরির হওয়ার ঘটনা ওই ব্যক্তির মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

পুলিশ তার স্বজনদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আব্দুল কুদ্দুস এক বছরেরও বেশি সময় ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য তাকে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসে রাজশাহী নেয়া হয়েছিল। তার সাথে তার এক ছেলে, এক মেয়ে এবং তাদের গ্রামের একজন জনপ্রতিনিধি ছিলেন। দুপুর ১২টায় ট্রেন থেকে নেমে প্ল্যাটফর্মে হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনের গেটের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পরেন।

‘লোকটি হঠাৎ করে পড়ে গেল। সেটা দেখে চারপাশের লোকেরা তার থেকে দূরে সরে যায়,’ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলেন ওসি।

পুলিশ ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তারা দেখতে পায় স্থানীয়রা তাকে মৃত ভেবে একটি চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে।

ওসি বলেন, ‘মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা আমার সাধ্যের বাইরে ছিল। আমি চিন্তা করলাম তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া জরুরি।’

‘স্টেশনের পাশেই রেলওয়ে হাসপাতাল। আমি রেলওয়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা লোকটিকে বহন করতে অস্বীকৃতি জানায়।’

তিনি বলেন, তাদের যুক্তি ছিল যে করোনা পরিস্থিতিতে তারা দ্রুত আসতে পারছে না।

‘আমরা দেখলাম, কোনও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করা উচিত হবে না। আমরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে আরএমসিএইচে পাঠাই।’

কুদ্দুসকে সাথে নিয়ে রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক বিশ্বজিৎ হাসপাতালে যান।

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘আমার তাকে দেখে মনে হয়েছিল তিনি বেঁচে আছেন, তবে তার জ্ঞান ছিল না, শুধু শ্বাস নিচ্ছিলেন।’

হাসপাতালে পৌঁছে জরুরি চিকিৎসকরা রোগীকে কার্ডিওলজি বিভাগে পাঠায়।

‘সেখানকার চিকিৎসকরা আমাকে বলেন, তাকে হাসপাতালে নিতে যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে, বলেন বিশ্বজিৎ।

যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ের বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম মারুফ হাসান অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে অস্বীকার করার অভিযোগ নাকচ করেন।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের সাথে আমার কোনও কথা হয়নি। রেলওয়ে স্টেশনের একজন কর্মকর্তা আমাকে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য বলেছেন। আমরা তাত্ক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্স এবং এতে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠিয়েছি। তবে অ্যাম্বুলেন্সটি রেলস্টেশনে পৌঁছার আগেই রোগীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।’

এনিয়ে আবার যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পুলিশের ওসি জানিয়েছেন, তিনি রেলওয়ে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য দেওয়া ফোন নম্বরটিতেই কল করেছিলেন এবং অপারেটর রোগীকে বহন করতে অস্বীকৃতি জানান।

ওসি জানান, ‘যখন কেউ রোগী বহন করতে রাজি হননি, তখন স্টেশনের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি ও তার স্বজনরা তাকে অটোরিকশায় তুলে দেন।’

তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সটি রোগীর থেকে অল্প দূরেই ছিল। যদি আমাদের প্রথম কলেই অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে আমরা আরো আগে রোগীকে হাসপাতালে নিতে পারতাম।’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago