আমাকে ছাড়া বসুন্ধরা তাদের ইতিহাস লিখতে পারবে না: কলিনদ্রেস
বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে কোস্টারিকার ফুটবলার দানিয়েল কলিনদ্রেসের প্রায় দুই বছরের স্বপ্নযাত্রার ইতি ঘটেছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের কাছে এই স্ট্রাইকার চেয়েছিলেন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি ও বাড়তি পারিশ্রমিক। কিন্তু স্বল্পমেয়াদী চুক্তি করতে ইচ্ছুক ক্লাবটি তার প্রস্তাবে সায় দেয়নি। তবে বিদায়বেলায় কলিনদ্রেস ভবিষ্যতে একই দলে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেছেন, তাকে ছাড়া নিজেদের ফুটবল ইতিহাস লিখতে পারবে না বসুন্ধরা।
বুধবার ভেঙেছে বসুন্ধরা-কলিনদ্রেসের ২০ মাসের যুগলবন্দি, যে জুটি গড়ে উঠেছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। ঘরোয়া ফুটবলের নবাগত পরাশক্তি বসুন্ধরা দেশের পেশাদার ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরের অভিষেক মৌসুমে কলিনদ্রেসকে দলভুক্ত করে ফেলে দিয়েছিল হইচই। কারণ সহজেই অনুমেয়, তিনি ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলেছিলেন কোস্টারিকার হয়ে। এরপর স্কিল, টেকনিক আর যোগ্যতা দিয়ে তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া উন্মাদনা ও প্রত্যাশার যোগ্য প্রতিদানও দিয়েছেন কলিনদ্রেস।
বাংলাদেশের নিজের অভিষেক মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জেতেন কলিনদ্রেস। সেবার অর্থাৎ ২০১৮-১৯ মৌসুমে স্বাধীনতা কাপেও রানার্সআপ হয়েছিল তার দল বসুন্ধরা। করোনাভাইরাসের কারণে ২০১৯-২০ মৌসুম বাতিল হওয়ার আগে দলটির ফেডারেশন কাপ জয়েও মূল ভূমিকা রাখেন তিনি। এর মধ্যে প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
২০১৮-১৯ মৌসুমের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ১১ গোল করেছিলেন কলিনদ্রেস। সবমিলিয়ে দলটির হয়ে ৪৮টি অফিশিয়াল ম্যাচ খেলে তার গোলসংখ্যা ২৬টি। মজার ব্যাপার হলো, তার জার্সি নম্বরও ২৬। তিনি পালন করেছেন ক্লাবটির অধিনায়কের দায়িত্বও।
কলিনদ্রেসের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করা নিয়ে বসুন্ধরার সভাপতি ইমরুল হাসান গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘আসলে এই মুহূর্তে আমাদের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ আছে। দেনিয়েলের সঙ্গে আমাদের চুক্তি শেষ হয়েছে গত মে মাসে। এএফসি কাপ শুরু হবে অক্টোবর নাগাদ। এই যে দীর্ঘবিরতি, এ সময়ে দেনিয়েলকে বসিয়ে রেখে ওর বেতন দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই ওর সঙ্গে আমরা চুক্তি সমাপ্ত ঘোষণা করছি।’
‘এএফসি কাপে যেহেতু আমরা অংশগ্রহণ করব, সেহেতু আমাদের তো চিন্তা-ভাবনা আছেই ওর সমমানের বা ওর চেয়ে ভালো কোনো খেলোয়াড়কে দলে নেওয়ার, যেন এএফসিতে ভালো রেজাল্ট করতে পারি। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দেখা যাক কী হয়।’
বিচ্ছেদ চূড়ান্ত, ছেড়ে যেতে হবে বাংলাদেশ। আবেগঘন মুহূর্তে ৩৫ বছর বয়সী কলিনদ্রেস জানিয়েছেন বসুন্ধরার প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা, ‘বাংলাদেশে এলে আমি কেবল বসুন্ধরার হয়ে খেলার কথাই বিবেচনা করব, যদি তারা আমাকে আবার প্রস্তাব দেয়। আমার নিজের দেশ ছাড়াও এশিয়ার কয়েকটা দলে যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু এশিয়ান দলগুলোর নাম আমি আপনাদের কাছে প্রকাশ করতে পারব না। আমি পেশাদার।’
‘নীলফামারীতে মোহামেডানের বিপক্ষে ১-১ গোলে শেষ হওয়া ম্যাচটি আমার কাছে সেরা স্মৃতি। কারণ, বসুন্ধরা কিংস ওই ম্যাচের মধ্য দিয়ে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করেছিল। আর আমিও জায়গা করে নিয়েছি বসুন্ধরা কিংসের ইতিহাসে, যারা আমাকে ছাড়া তাদের ইতিহাস লিখতে পারবে না।’
বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে নিজের ভাবনাও জানিয়েছেন তিনি, ‘ফুটবলের পুরো ব্যাপারটাই হলো মানসিকতা। বাংলাদেশে ভালো খেলোয়াড় রয়েছে। তবে তাদের মানের এবং ফুটবলের অবকাঠামোর আরও উন্নতি করা দরকার। খেলোয়াড়দের আরও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। অনুশীলনের মাঠ ও জিমনেসিয়ামের আরও উন্নতি দরকার। বাংলাদেশকে মৌলিক বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করতে হবে।’
Comments