করোনাকালে মা-শিশুর পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে

এই করোনাকালে আমাদের পরিবারে দুটি শিশুর জন্ম হলো। দুই জনেই নির্দিষ্ট সময়ের বেশ আগে জন্ম নেওয়ায় বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতা নিয়ে তাদের এই পৃথিবীর আলো দেখতে হলো। কিন্তু, এই যে এরকম একটা সময়ে শিশু দুটোর জন্ম নেওয়া, হাসপাতালে যাওয়া, মায়ের স্বাস্থ্য, শিশুকে রক্তদান, রক্তদাতা জোগাড় করা, অ্যাম্বুলেন্স, ইনকিউবেটর করোনামুক্ত হাসপাতাল খুঁজে বের করা— সবটাই ছিল শিশুর বাবা-মায়ের একার অভিযান। আমাদের এত বড় পরিবারের ২/১ জন মানুষ শুধু পেরেছে এই সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে। এরপরও একজন শিশুকে চলে যেতে হয়েছে। করোনাকালে বিপর্যস্ত অবস্থার এটা শুধু একটা ঘটনা।
প্রতীকী ছবি। (সংগৃহীত)

এই করোনাকালে আমাদের পরিবারে দুটি শিশুর জন্ম হলো। দুই জনেই নির্দিষ্ট সময়ের বেশ আগে জন্ম নেওয়ায় বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতা নিয়ে তাদের এই পৃথিবীর আলো দেখতে হলো। কিন্তু, এই যে এরকম একটা সময়ে শিশু দুটোর জন্ম নেওয়া, হাসপাতালে যাওয়া, মায়ের স্বাস্থ্য, শিশুকে রক্তদান, রক্তদাতা জোগাড় করা, অ্যাম্বুলেন্স, ইনকিউবেটর করোনামুক্ত হাসপাতাল খুঁজে বের করা— সবটাই ছিল শিশুর বাবা-মায়ের একার অভিযান। আমাদের এত বড় পরিবারের ২/১ জন মানুষ শুধু পেরেছে এই সময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে। এরপরও একজন শিশুকে চলে যেতে হয়েছে। করোনাকালে বিপর্যস্ত অবস্থার এটা শুধু একটা ঘটনা।

রায়েরবাজার এলাকার সালমা বেগমের প্রথম সন্তান জন্ম নিয়েছে ছয় সপ্তাহ হলো। নবজাতকের প্রথম টিকা দেওয়ার সময় হয়েছে। টিকা সেন্টার চালু আছে কি না, সেটি তারা জানেন না। বাসার সবাই বাচ্চা নিয়ে টিকা সেন্টারে যেতে চাইছেন না। এদিকে বাসায় ডেকে স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে টিকা দেওয়াতেও ভয় পাচ্ছেন। অথচ শিশুর জীবন রক্ষাকারী টিকাতো দিতেই হবে। এইরকম মানসিক অবস্থা এখন অনেক পরিবারেই।

অনেক বাবা-মা বিভিন্ন কেন্দ্রে ফোন করে জানতে চাইছেন, বাচ্চাকে টিকা দিতে নিয়ে যাবেন কি না? প্রথম আলোতে দেখলাম, একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, করোনা আমাদের জীবনকে অস্থির করে তুললেও আমাদের বাচ্চাকে টিকা দিতেই হবে। কারণ, পরবর্তী অনেকগুলো বড় অসুখ থেকে এই টিকাই বাচ্চাদের রক্ষা করবে। টিকা দেওয়া থাকলে আমরা ও শিশুরা নিরাপদ থাকি। টিকা না থাকলে খুব দ্রুত রোগ ছড়াতে পারে এবং ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রায় ২৪ লাখ শিশু করোনার সময়ে জন্ম নেবে (ঘোষিত সময়: ১১ মার্চ)। গর্ভবতী নারী, নতুন মা ও নবজাতক ভয়ংকর বাস্তবতার মুখে পড়বে এই করোনাকালে। চিকিৎসক, নিয়মিত চেকআপ, স্বাস্থ্যকর্মী, দাই, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নবজাতকের টিকা গ্রহণসহ জরুরি চিকিৎসাব্যবস্থার অভাব এদের সবাইকে সাংঘাতিক সমস্যার মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থার বেসামাল অবস্থায় মানুষ হয়তো মা-শিশুর জরুরি চাহিদার কথা ভুলেই গেছে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, ‘এই করোনা মহামারি মাতৃত্ব বা মায়েদের জীবনকে কতটা নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে এটা কেউ বুঝবে না। মা ও সন্তানের জীবন ঝুঁকির মধ্যে চলে যাবে।’

ছোট একটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে এই করোনাকালে গর্ভবতী মায়ের জীবনও কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে। গত ৩ মে রাত ১১টা। আমার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা বোনের হঠাৎ খুব পেটব্যথা শুরু হলো। অঘোষিত লকডাউনের কারণে স্বভাবতই কোথাও কোনো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা কেউ তার কাছে যেতে পারছিনা। একজন প্রতিবেশীর গাড়িতে তারা গেলো ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে। আমার বোন এই হাসপাতালের রেগুলার পেশেন্ট হলেও তারা জানালো, তাদের গাইনি টিমের কেউ এখন নাই। কাজেই রোগীকে তারা দেখবে না। গেল অন্য একটি হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে। তারাও জানালেন, উপরের নির্দেশে হাসপাতাল লকডাউন।

ততক্ষণে আমার বোনের ব্যথা বেড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং শরীর কুঁকড়ে যাচ্ছে ব্যথা ও ভয়ে। তার স্বামী হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে বারবার অনুরোধ করছে তাকে একটু দেখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনড়। এদিকে আমার বোনের অবস্থা এতটাই সঙ্গীন হয়ে উঠলো যে তাকে পাশেই আরেকটি মোটামুটি অচেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে পরীক্ষার পর জানা গেল বাচ্চার সবকিছু ঠিক আছে।

পরে বোঝা গেল ওর এই ব্যথা ইউরিন ইনফেকশন থেকে। গর্ভস্থ বাচ্চা ও মা— দুই জনেই ভালো আছে জেনে স্বামী-স্ত্রী খুশি মনে বাড়ি ফিরে এলো। তার স্বামী বললো, এত অসহায় আমি কোনোদিন বোধ করিনি। বারবার মনে হতে থাকলো আমরা যদি কোনো হাসপাতালে যেতে না পারি, তাহলেতো বাচ্চা, মা কাউকেই বাঁচাতে পারবো না। এদিকে রাত গভীর হচ্ছে— ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই পাশে। একেই বলে নিদানকাল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, এই অবস্থায় টিকাদান কর্মসূচি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে, আবার অনেক অভিভাবক ভয়েও বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছেন না। যদিও টিকা দেওয়ার বয়স পার হয়ে যাচ্ছে বলে ভয়ও পাচ্ছেন। তবে, স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, কিছুটা দেরিতে হলেও কার্যকারিতা কমবে না। শিশুর জন্মের ৪২ দিনের মাথায় দিতে হয় যক্ষ্মা প্রতিরোধে বিসিজি টিকা। আর ১৮ মাসের মাথায় মধ্যে দিতে হয় ১৯ ধরনের টিকা। তারা জানিয়েছেন, টিকাকেন্দ্রগুলোতে করোনা প্রতিরোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে, ইউনিসেফ সতর্ক করে দিয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে শিশুরা যদি তাদের জীবনরক্ষাকারী টিকা না পায়, তাহলে স্বাস্থ্যহানি হবে।

এই স্বাস্থ্যহানির খবরে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। ইউনিসেফ বলেছে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে হাম ও ডিপথেরিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। টানা অগ্রগতির পর বছর তিনেক ধরে হাম নিয়ন্ত্রণে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল মেয়াদে টিকাদান কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে হামের টিকা দেওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে হাম।

একবার রাজবাড়ি এলাকার একটি গ্রামে কাজে গিয়ে রহমত তালুকদার নামে একজনের বাড়ি খুঁজছিলাম। বাজারে জিজ্ঞাসা করতেই বললো, কোন রহমতকে খুঁজতেছেন? ল্যাংড়া রহমতকে? পরে জানলাম ওই গ্রামে দুই জন রহমত। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানে ল্যাংড়া রহমত, অন্যজন দেঁতো রহমত। সেই রহমতের সামনের ২/৪টা দাঁত উঁচু। পরে ওই প্রতিবন্ধী মানুষটি জানালেন, ছোটবেলায় পোলিও হয়ে ওনার একটা পা বেঁকে গেছে। দুয়েকবার ডাক্তারের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

এত কষ্ট লাগলো ভদ্রলোকের কথা শুনে। বললেন, জানেন এলাকার লোকতো ল্যাংড়া নামে ডাকেই, এ ছাড়া, আমি ছোটবেলা থেকেই সবখানে অবহেলিত হয়েছি এই পায়ের জন্য। এই পায়ের জন্য আমি দূরে কলেজে গিয়ে পড়তেও পারিনি। এখন এলাকায় মুরগির খামার করি। আমার বন্ধুর খালাকে দেখেছিলাম যার পুরো মুখে ছিল গুটিবসন্তের দাগ। অনেক গুণ থাকা সত্ত্বেও মুখে ওই দাগের জন্য বিয়ে হয়নি। তখন আম্মা বলেছিলেন, গুটি বসন্ত এরকমই একটি ভয়াবহ রোগ ছিল আগে। অনেকে মারাও গেছেন।

এখনকার প্রজন্ম এসব রোগের কথা শুনেইনি। শুনলেও চোখে দেখেনি। একমাত্র কারণ টিকাদান কর্মসূচির সফলতা এবং মানুষের সচেতনতা। আগে জন্মের পরপর বহু অজানা রোগে শিশুরা মারা যেতো বা প্রতিবন্ধী হয়ে যেত। একটি পরিবারে ৮/১০টি বাচ্চা হলে দেখা যেতো ৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই ২/৩ জন মারা যেতো বা প্রতিবন্ধী হয়ে যেতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), ইউনিসেফ আর বাংলাদেশ সরকার টিকাদান ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুরো দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। সরকারি হিসাবে গত ২৪ বছরে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ৭৩ শতাংশ।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সাল থেকে হাম নিয়ন্ত্রণে জোরেশোরে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ। ২০১৭ সাল থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। ইপিআই’র আওতায় শিশুরা পোলিও, ধনুষ্টঙ্কার, ডিপথেরিয়া, হুপিংকফ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস বি, এক ধরনের নিউমোনিয়া, হাম ও রুবেলার প্রতিষেধক নিয়ে থাকে। এই টিকার আওতাভুক্ত দেশের ৩৭ লাখ শিশু। সবার জন্য দরকার ভিটামিন এ। ফ্লাইট বন্ধ বলে বিদেশ থেকে টিকা আসছে না। অন্যদিকে উৎপাদনও কম। ভাড়া করা উড়োজাহাজে আনা যায় কি না, এটাও ভাবছে সরকার।

ডব্লিউএইচও আর ইউনিসেফ মনে করে, হামের টিকা দেওয়াটা শিশুদের স্বার্থেই শুরু করা উচিত। তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলেছে যে করোনা চলাকালেও যেন নিয়মিত টিকাদান চালু রাখে। তবে স্বাস্থ্যকর্মী ও শিশুর বাবা-মাকে নিরাপদ থাকতে হবে। টিকাকেন্দ্রে বেশি ভিড় হলে সেখানে শিশুকে না নেওয়াই ভালো।

গত ১০০ বছরে টিকার কারণে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু, ইদানিং নাকি অনেক দেশেই টিকা নেওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। আর সেকারণেই ডব্লিউএইচও ২০১৯ সালে এটাকে বিশ্ব স্বাস্থ্যের প্রতি ১০টি চরম হুমকির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। টিকা আবিষ্কারের আগে বিশ্ব ছিল খুব বিপজ্জনক জায়গা। এখন যে রোগের নাম শোনাই যায় না, এমন রোগেও লাখো মানুষ মারা যেতো।

এই প্রাণরক্ষাকারী টিকার ধারণা ১০ম শতাব্দীতে চীনে তৈরি হয়। এর আট শতাব্দী পরে ব্রিটিশ ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার লক্ষ্য করলেন, গোয়ালিনীরা গরুর বসন্তে আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে প্রাণঘাতী গুটি বসন্তের সংক্রমণ হচ্ছে না। সে সময় গুটি বসন্ত ছিল ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধি। শতকরা ৩০ ভাগ মারা যেতো, আর বেঁচে থাকলেও অন্ধ হয়ে যেতো বা ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াতো।

তিনি ১৭৯৬ সালে এক পরীক্ষা চালান এবং ফলাফল পান ১৭৯৮ সালে। সেটার পর মানুষ জানতে পারে ভ্যাকসিন শব্দটা। এটা এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ভ্যাক্সা’ থেকে। এর মানে ‘গরু’। ১৯৬০ হামের টিকা শুরু হয়। ১৯৮০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত হাম, মামস, রুবেলা ঠেকিয়েছে টিকা। ডব্লিউএইচও বলেছে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হামের টিকা ব্যবহারে হাম কমেছে ৮০ ভাগ। কয়েক দশক আগেও পোলিও ছিল মারাত্মক ব্যাধি। (সূত্র: বিবিসি)

ডব্লিউএইচও বলেছে, উন্নত বিশ্ব ভুলেই গেছে যে এসব রোগ কতটা ভয়াবহ হতে পারে। আর তাই এই বিষয়ে তাদের একটা ঢিলেমি এসেছে। কিন্তু, বাংলাদেশের কথা আলাদা। এখন দেশের গ্রামে-শহরে সবাই জানে কবে, কখন বাচ্চাকে কোন টিকা দিতে হবে। এও জানে, সময়মতো টিকা না নিলে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই করোনাকালে মা ও শিশুর পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্যই রাষ্ট্রকে করতে হবে।

শাহানা হুদা রঞ্জনা, সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

[email protected]

 

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago