লালমনিরহাটের বর্গাচাষিদের মুখে হাসি
মুখে হাসি ফুটেছে বর্গাচাষি সেকেন্দার আলীর (৫৮)। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মেঘারাম গ্রামের এই বর্গাচাষি তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান লাগিয়েছিলেন। ধান পেয়েছেন প্রায় ২ হাজার ১৬০ কেজি। জমির মালিককে দিতে হয়েছে এক তৃতীয়াংশ হিসাবে ৭২০ কেজি।
মুখে হাসি ফুটে ওঠার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গেল কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের আশানুরূপ ফলন পেয়েছি। আবার খরচও হয়েছে আগের তুলনায় কম। করোনা পরিস্থিতির কারণে ধানখেতের তেমন যত্ন নিতে পারিনি। সময়মতো সেচ ও সার-কীটনাশকও দিতে পারিনি। কিন্তু, ধানের ভালো ফলন পেয়েছি।
সেকেন্দার আলী বলেন, ‘এ বছর ধানের ফলন আমাদের কাছে প্রকৃতির আশীর্বাদ। বর্গা নেওয়া তিন বিঘা জমি থেকে গতবছর বোরো ধান পেয়েছিলাম ১ হাজার ৭৬০ কেজি। সেইবার খরচ হয়েছিল ১৬ হাজার টাকা। এ বছর একই জমি থেকে ধান পেয়েছি ২ হাজার ১৬০ কেজি। আর খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা। এ বছর বাজারে ধানের দামও সন্তোষজনক পাচ্ছি।
আদিতমারী উপজেলার দৈলজোড় গ্রামের বর্গাচাষি শফিয়ার রহমান (৫৫)। তিনি বলেন, ‘এ বছর বোরো ধানের ফলন আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কম খরচে ভালো ফলন পাওয়ায় এ বছর আমরা ধান চাষে লাভবান।’
তিনি বলেন, ‘বর্গা নেওয়া চার বিঘা জমি থেকে ধান পেয়েছি ২ হাজার ৫৬০ কেজি। গত বছর পেয়েছিলাম ২ হাজার ১০০ কেজি। গত বছরের তুলনায় এ বছর খরচও কম হয়েছে। বর্গাচাষি হিসেবে এ বছরই প্রথম প্রাণ খুলে হাসতে পারছি।’
একই গ্রামের বর্গাচাষি আফতাব আলী (৫৭) বলেন, ‘জমির মালিককে উৎপাদিত ধানের এক তৃতীয়াংশ দিতে হয়। ধানের আশানুরূপ ফলন ও ন্যায্যমূল্য থাকলে বর্গাচাষিরা লাভবান হয়। কিন্তু, ফলন কম হলে আর ন্যায্যমূল্য পাওয়া না গেলে আমাদেরকে লোকসান গুণতে হয়। গেল বছরগুলোতে আমাদের লোকসান গুণতে হয়েছিল। কিন্তু এ বছর মুখে হাসি ফুটেছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্গাচাষি হওয়ায় আমাদের কোনো কৃষি কার্ড নেই। তাই আমরা সরকারের প্রণোদনা ও সহযোগিতা পাই না। এ ছাড়া, কৃষি কার্ড না থাকায় সরকারের খাদ্য গুদামে ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রিও করতে পারি না। আমাদেরকে জমির মালিকের কাছ থেকে শুধু মৌখিক চুক্তিতে জমি বর্গা নিয়ে ফসল চাষ করতে হয়।’
লালমনিরহাট কৃষক একতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবির হোসেন বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষকই জমি বর্গা নিয়ে ফসল আবাদ করছেন। প্রত্যেক বর্গাচাষি দুই বিঘা থেকে ১০ বিঘা পর্যন্ত জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছেন। বর্গাচাষিরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে খেতে কাজ করে ফসল ফলান। এজন্যই তারা টিকে থাকছেন। কারণ, তাদেরকে আলাদা শ্রমিক খরচ বহন করতে হয় না।’
বর্গাচাষিদের একটি তালিকা করে তাদেরকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান এই কৃষক নেতা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কোনো বর্গাচাষির জমি বর্গা নেওয়ার লিখিত প্রমাণপত্র থাকলে তাদের জন্য কৃষি কার্ড দেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জমির মালিকরা বর্গাচাষিদের কোনো লিখিত প্রমাণপত্র দেয় না। এজন্যই বর্গাচাষিরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকেন।’
Comments