আত্মরক্ষার বাজেট

মনে হচ্ছে পুরো মহাবিশ্বই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

মনে হচ্ছে পুরো মহাবিশ্বই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

যখনই তার জ্বলে ওঠার সময় হয়, তখনই ঘটে যায় দুর্ভাগ্যজনক কিছু। গত বছর ছিল ডেঙ্গুর প্রকোপ আর এ বছর হামলা করেছে করোনাভাইরাস। ভাইরাসটি তাকে ফেলে দিয়েছে এক অগ্নি পরীক্ষায়। পুরো পৃথিবীর অর্থনীতি যেখানে নাজেহাল, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি তিনি কোন দিকে নিয়ে যাবেন সেই পরীক্ষাই তার সামনে।

ভাইরাস মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে পারবে তেমনি একটি বাজেট এই ৭৩ বছর বয়সী মানুষটি ঘোষণা করবেন বলে সবার আশা।

প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কথা ভুলে যান। ১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে মূলত আত্মরক্ষার বাজেট।

মুস্তফা কামাল গত বছর ৭ জানুয়ারি আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছ থেকে যখন দেশের অর্থনীতির রথের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নেন তখন রপ্তানি ও রাজস্ব আয় ছিল ধীর গতির, খেলাপি ঋণ বাড়ছিল এবং শেয়ারবাজার ছিল ডুবে যাওয়ার মত অবস্থায়।

করোনাভাইরাস এসে সেই অবস্থা আরও খারাপ করে তোলে। সমস্যাগুলো শুধুই বেড়েছে। আর সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে বেকারত্ব ও চরম দারিদ্র্য।

লাখ লাখ মানুষ হারিয়েছেন তাদের জীবিকা। হয়ে পড়েছেন চরম দরিদ্র। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের মতে দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ এখন দারিদ্রসীমার নিচে রয়েছেন।

আরেকটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে প্রবাসী কর্মীরা ফিরে আসায়। তাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা গত দশকে আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছিল।

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যদি চাঙ্গা অবস্থায় থাকত তাহলে তাদের কর্মসংস্থান করা খুব একটা সমস্যার কারণ হতো না। কিন্তু, আড়াই মাসের দীর্ঘ সাধারণ ছুটি দেশের ব্যবসার পরিস্থিতি খারাপের দিকে নিয়ে গেছে।

তারা এখন লেঅফ এবং কর্মীদের বেতন কাটার মতো অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছেন। দেশে ক্রমবর্ধমানভাবে করোনায় শনাক্ত এবং মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় তাদের অবস্থার সহসা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

দেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ রেখে গত প্রায় তিন মাস দেশে সাধারণ ছুটি চলতে থাকে। তবে তাতে জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের সমাধান হয়নি।

এর সবই এড়ানো যেত। তবে এখন সবই মুস্তফা কামালের হাতে।

গতকাল বুধবার রাতে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়ে যাবে।’

তিনি প্রকল্পের হিসাব ভালো করে পরীক্ষা করছেন, যাতে সেখান থেকে বাজেট কমানো যায়।

নথি থেকে সমাধানে পৌঁছতে না পারলে কখনও তিনি ভার্চুয়াল মিটিং করেছেন আমলাদের সঙ্গে, কখনও ঋণদাতাদের সঙ্গে।

যদি এর মধ্যে কোনো মিটিং সামনা-সামনি করতেই হয় তাহলে তার বাড়িতে প্রবেশের আগে তাদের স্যানিটাইজ করা হয়েছে। তিনি যতটা সম্ভব দূরে থেকে আলাপ আলোচনা সম্পন্ন করেছেন। কখনও কখনও তিনি তার বাড়ির সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন।

এক কথায় দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এক অনিবার্য চুক্তি প্রস্ততকারক হয়ে উঠেছেন মুস্তফা কামাল।

তিনি অবশ্যই শিল্প এবং সাধারণ মানুষের দাবি পূরণ করতেই বাজেট অধিবেশনে আসবেন।

দেশের অর্থনীতির মন্দার প্রেক্ষিতে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৯০ কোটি টাকার বাজেটে দেশীয় রাজস্ব আহরণ খুব বেশি সহায়তা করতে পারবে বলে ধরা যায় না।

বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এই অর্থবছরের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরের অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি না থাকলে এই টাকার সংস্থান হবে কোথা থেকে? যদি এই সংকট মোকাবিলার জন্য অর্থ সংস্থান না করা যায় তাহলে বাজেটের ঘোষণা পূরণ হবে কিভাবে?

এ এক জটিল ধাঁধাঁ। কিন্তু অর্থমন্ত্রীকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান বের করতেই হবে।

অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি এই সম্পূর্ণ ভার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর না চাপানোর লক্ষ্য নিতে পারেন।

মনোবিজ্ঞানের মতে, যখন মানুষের কাছে কোনো কাজ অসম্ভব বলে মনে হয়, তখন সে কাজটি করা বন্ধ করে দেয় এবং আর কোনো চেষ্টাও চালায় না।

তাই, এবারের বিরাট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য তাদের কাছ থেকে বিপরীত ফল দিতে পারে। বরং কর কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে তাদের সাধ্যের সর্বোচ্চটা দেওয়ার জন্য।

করোনাভাইরাস আঘাত করার আগ পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর মূল কারণ কর ফাঁকি দেওয়া।

তিনি হয়তো এই খারাপ অবস্থাটিতে আন্তরিকতার সঙ্গে পরিবর্তন আনতে পারবেন।

একই সঙ্গে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এর জন্য মুস্তফা কামালকে কর ছাড় দিতে হবে শিল্প-কারখানাগুলোতে।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আদায়ে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। অর্থাৎ অর্থমন্ত্রীকে বাজেটের একটি বড় অংশের তহবিল বরাদ্দ দিতে ব্যাংক এবং বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকতে হবে। সরকার পরের দুটি উপায় যতটা কম নিতে পারে ততই ভালো।

এর অর্থ, কঠোরতা প্রয়োগ করতে হবে। একটি পয়সা বাঁচানোর অর্থ হলো একটি পয়সা উপার্জন করা। এই মন্ত্রেই তার কাজ করা উচিত।

ব্যয়কে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এই সময়ে স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া উচিত। এর পরেই থাকবে সমাজের দরিদ্র মানুষদের নিরাপত্তা বিধান। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কৃষিখাত। যাতে করে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

অন্য সব খাত আপাতত তালিকায় অনেক পেছনে অবস্থান করতে পারে।

নিজের কাঁধে এত বড় দায়িত্ব নেওয়া মুস্তফা কামাল এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছেন বলেই মনে হচ্ছে।

বাজেটের প্রাক্কালে তিনি বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ থেকে মানুষকে বাঁচনো, ক্ষুধা নিবারণ, বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান এবং প্রান্তিক মানুষদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি থাকবে।’

কৃষি-অর্থনীতি এবং দেশীয় শিল্পকে উত্সাহিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিকড়ে ফিরে যাচ্ছি।’

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago