শিক্ষাখাতে বরাদ্দ 'অপরিবর্তিত'

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপির তুলনায় সেটি প্রায় বর্তমান অর্থবছরের মতোই থাকছে।
আশা করা হয়েছিল, করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতের বরাদ্দ বাড়বে। কারণ, অনেকেরই আশঙ্কা মহামারির কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়বে এবং এতে বাল্যবিয়ে, অকাল গর্ভধারণ ও শিশু শ্রম বাড়বে।
অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য শিক্ষাখাতে ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।
তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বিভাগের জন্য ৮ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।
শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ মোট ব্যয়ের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ০৯ শতাংশ।
চলতি বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী এএইচএম মোস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় জানান, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর সাধারণ শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।
কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশিকা উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে শিক্ষা খাতে এই ক্ষতি পুষিয়ে তোলা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বাজেটে আমরা প্রয়োজনীয় সম্পদের যোগান রাখছি।’
গত ৩ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন (সিএএমপিই) প্রকাশিত এক জরিপে ১২৬ জন এনজিও এবং শিক্ষক প্রতিনিধিরা তাদের মতামত জানান।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেন তারা।
জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ মনে করেন, স্কুলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে, ৭২ শতাংশ জানান, অপুষ্টির কারণে শিশুদের শিক্ষায় প্রভাব পড়বে, ৭১ শতাংশ মনে করেন, শিশুশ্রম বাড়বে এবং ৫৮ শতাংশ বলেছেন বাল্যবিয়ে বাড়বে।
এই পরিস্থিতির বিপরীতে শিক্ষা ব্যবস্থায় সাফল্য অব্যাহত রাখতে ও যে কোনো ধরনের ‘বিপর্যয়’ রোধে শিক্ষা খাতে তারা মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ বরাদ্দের আহ্বান জানান।
তারা জানান, শিক্ষাখাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব পুনরুদ্ধারের জন্য কমপক্ষে দুই-তিন বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
ক্যাম্পের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘এটি একটি গতানুগতিক শিক্ষা বাজেট। এই বরাদ্দের মাধ্যমে কোভিড ১৯-এর জন্য পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।’
সংশোধিত বাজেটে সরকার বিষয়টি সুরাহা করবে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন যথাযথ অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করেন তিনি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ জানান, আগামী বাজেটে করোনা সংকট থেকে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত।
শিক্ষাখাতে মোট জিপিডির ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখা উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছে ইউনেস্কো।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, জিডিপির অনুপাত হিসাবে শিক্ষায় সরকারের ব্যয় গত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় ২ শতাংশই থেকে গেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় কম।
Comments