‘গণধর্ষণ’ মামলা নথিভুক্ত করতে ওসির বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় স্বামীর সামনে থেকে গৃহবধূকে (২০) তুলে নিয়ে ‘গণধর্ষণ’ ঘটনার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ বলছে পলাতক।
আসামিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের গ্রেপ্তারে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও, গণধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত করতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাদী।
এদিকে, থানায় মামলা দায়েরের জন্য মামলার আসামিরা বাদীকে ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করার হুমকি দিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় গণধর্ষণ মামলা করে বেকায়দায় পড়ার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দম্পতি।
স্থানীয়রা জানায়, গত ৩ জুন বিকালে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর বৈশাখী গ্রাম থেকে জমি কেনার উদ্দেশ্যে স্বামীকে নিয়ে কবিরহাট উপজেলার পূর্ব নবগ্রামে স্থানীয় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান ওই গৃহবধূ। তারা সেখানে রাত্রিযাপন করেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় সমাজ কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামের নেতৃত্বে ৬-৭ জন গৃহবধূর আত্মীয়ের বাড়িতে হানা দেন। ঘরে ঢুকেই ওই দম্পতির মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক থাকার কথা বলে তাদের বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চান তারা। এক পর্যায়ে তারা ওই দম্পতিকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। এসময় গৃহবধূর স্বামী ও এক আত্মীয়কে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আব্দুস সাত্তার গৃহবধূকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তার মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। এ ঘটনার পর রাত ১২টার দিকে গৃহবধূকে নেওয়ার জন্য তার খালাতো ভাই ও তার স্ত্রী এবং স্বামী এসেছেন বলে ঘর থেকে বের করে স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে (বেড়ি বাঁধ) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নবগ্রামের আব্দুস সাত্তার, সোহেল, আবুল কালাম, রিপন, মাসুম, গিয়াস উদ্দিন ও নূর আলম তাকে ধর্ষণ করেন।
মামলার বাদী জানান, ঘটনার পরদিন ৪ জুন সকালে কবিরহাট থানায় গেলে ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছান গণধর্ষণ মামলা না নিয়ে শ্লীলতাহানি চেষ্টার একটি অভিযোগ নেন। বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজানি হলে তাদের হস্তক্ষেপে গত ৬ জুন একটি গণধর্ষণ মামলা নেন ওসি।
বাদী বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সম্ভ্রম হরণের মামলা নথিভুক্ত করতে থানার ওসি খরচের কথা বলে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু আসামিদের ধরছেন না। স্ত্রীর সম্মানও গেল, আমার টাকাও গেল। ঘটনার ৮-৯ দিন পেরিয়ে গেলেও একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত সোমবার বিকালে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি আবুল কালাম, গিয়াস ও সোহেলকে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরতে দেখে ওসিকে ফোন করে জানাই। কিন্তু আসামিদের ধরতেছি, ধরব বলে কালক্ষেপণ করছেন তিনি।’
বাদীর অভিযোগ, পুলিশ আসামিপক্ষের সঙ্গে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করার কারণেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আসামিরা মুঠোফোনে তাকে মামলা করায় ভয়ংকর পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকার হুমকি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘স্ত্রী ধর্ষণ মামলা করে এখন আমি চরম বেকায়দায় পড়েছি।’
তিনি দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কবিরহাট থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছান বলেন, ‘আসামিরা এলাকায় নেই। তাই তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে তাদের গ্রেপ্তারে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।’
গণধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত করতে বাদীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কোনো মামলা রেকর্ড করতে পুলিশের টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। তার ওপর ধর্ষণ মামলার বাদীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। যদি এমন ঘটনা ঘটেই থাকে, তবে ওসির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ জনগণের সেবক ও রক্ষক। এখানে রক্ষক হয়ে কেউ ভক্ষকের ভূমিকা পালন করলে তাকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
Comments