অসময়ে পাটবীজ বিতরণ, সারের কোনো খবর নেই
যখন পাটগাছ কাটার সময় হয়েছে তখনই কৃষকের মাঝে পাটবীজ বিতরণ করছে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর। পাট চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে পাটবীজ ও সার দেওয়ার কথা থাকলে সারের কোনো খবর নেই।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোচাবাড়ি গ্রামের কৃষক আবু হানিফ বলেন, ‘গত সোমবার সকালে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে এক কেজি ওজনের এক প্যাকেট পাটবীজ পেয়েছি। কিন্তু কোনো সার পাইনি। ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যেক কৃষকের জন্য প্রণোদনা হিসেবে এক প্যাকেট পাটবীজ ও ১২ কেজি সার পাওয়ার কথা ছিল।’
আরেক কৃষক বলেন, ‘আমাদের অসময়ে যে পাটবীজ দেওয়া হয়েছে তা কোনো কাজে আসবে না। এসব বীজ সংরক্ষণ করে রাখাও যাবে না। পাটবীজ সাধারণত মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে জমিতে বপন করতে হয়। জুনের মেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে পাটগাছ কাটা হয়।’
অসময়ে কৃষকের মাঝে পাটবীজ বিতরণ করে সমালোচনার মুখে পড়েছে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর। তাদের দেওয়া পাটবীজ ফেলে দিয়ে নষ্ট করা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানান অনেক কৃষক।
একই উপজেলার উত্তর সাপ্টানা গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন বলেন, ‘অসময়ে পাটবীজ বিতরণ করে হাস্যকর কাজ করেছে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর। কিন্তু, এরসঙ্গে সার দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।’
পাটবীজগুলো মার্চ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বিতরণ করলে কৃষকের উপকারে আসতো বলে জানান জামাল হোসেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা কেরামত আলী বলেন, ‘যেভাবে পাটবীজ বরাদ্দ পেয়েছি। সেভাবেই কৃষকের মাঝে বিতরণ করেছি। সদর উপজেলার দুই হাজার কৃষকের মাঝে পাটবীজ বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকরা চাইলে এসব পাটবীজ সংরক্ষণ করে আগামী বছর বপন করতে পারবেন।’
জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা সাত্তার মিয়া বলেন, ‘মার্চের শেষের দিকে এসব পাটবীজ উপজেলা অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিতরণ করতে বিলম্ব হয়। জেলার পাঁচটি উপজেলার ৯ হাজার ৫০০ কৃষকের মাঝে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে পাটবীজ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক কৃষক প্রণোদনা হিসেবে ১২ কেজি সার পাবেন। তবে, সার পরে বিতরণ করা হবে।’
অসময়ে কৃষকের মাঝে দেওয়া পাটবীজ কোন কাজে আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কৃষকরা এসব বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামিম আশরাফ বলেন, ‘অসময়ে পাটবীজ কৃষকের কোনো কাজে আসবে না। তবে, তারা চাইলে জুলাইয়ের শেষে ও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এ বীজ বপন করে তা থেকে বীজ উৎপন্ন করতে পারবেন। কিন্তু কাজটা কৃষকদের জন্য কষ্টকর হবে।’
Comments