আরও একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেল ‘বেলা’

আইনি উদ্যোগ ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিকে (বেলা) সম্মানজনক ট্যাংগ ফাউন্ডেশন পুরস্কার প্রদান করেছে তাইওয়ানভিত্তিক দ্য ট্যাংগ ফাউন্ডেশন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

আইনি উদ্যোগ ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিকে (বেলা) সম্মানজনক ট্যাংগ ফাউন্ডেশন পুরস্কার প্রদান করেছে তাইওয়ানভিত্তিক দ্য ট্যাংগ ফাউন্ডেশন।

‘আইনের শাসন’ ক্যাটাগরিতে বেলা ছাড়াও বিশ্বের আরও দুটি বেসরকারি সংগঠনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি লেবাননের প্রতিষ্ঠান ‘দ্য লিগ্যাল এজেন্ডা’ এবং অপরটি কলম্বিয়ার প্রতিষ্ঠান ‘দি জাস্টিসিয়া’।

পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি জানতে চাইলে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে যে বৈষম্য থাকলেও আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভালো অগ্রগতি হচ্ছে। এই প্রাপ্তি মানুষের অধিকার রক্ষায় সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা তৈরিতে আরও ভালো কাজ করার দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।’

তাইওয়ানের বেসরকারি উদ্যোক্তা ড. স্যামুয়েল ইয়িন ২০১২ সালে এ পুরস্কার প্রবর্তন করেন। পুরস্কারটি এবারই প্রথম পেল বাংলাদেশের কোনো সংগঠন। মোট চারটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয় এই পুরস্কার।

‘আইনের শাসন’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয় আজ রোববার তাইওয়ান সময় সকাল ১০টায়। বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার সকাল ৮টায় পুরস্কার মনোনয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জুউন রং ইয়েহ পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হবে। সম্মাননা ও মেডেল ছাড়াও তিনটি সংগঠনের মধ্যে পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ১৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠনগুলো গবেষণামূলক কাজ করার জন্য আরও তিন লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান পাবে।

দ্য ট্যাংগ ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠনগুলো দুর্বল আইনের শাসনের সংকট কাটাতে ধারাবাহিকভাবে ও ঐকান্তিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনগুলো মানসম্মত গবেষণা, কৌশলগত জনস্বার্থমূলক মামলা পরিচালনা ও অন্যান্য জন সম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং আইনের উদ্দেশ্য প্রতিপালনে সরকারকে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কার্যক্রমের ফলে আইনের শাসনের স্বপক্ষে জনমত তৈরি হচ্ছে এবং নাগরিকরা এ বিষয়ে সচেতন ও উদ্যোগী হচ্ছে।

১৯৯২ সালে ড. মোহিউদ্দিন ফারূকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত তরুণ আইনবিদদের সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করা বেলা দেশে পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। বেলার উদ্যোগের কারণে সংবিধান ও আইনের ইতিবাচক ব্যাখ্যার মাধ্যমে দেশে জনস্বার্থমূলক মামলার স্বীকৃতি আসে। স্বীকৃতি আসে পরিবেশের অধিকারের, যা সংবিধানে জীবনের অধিকারের অংশ উল্লেখ করে আদালত রায় প্রদান করেন। সংগঠনটি ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবহার ও আমদানি রোধ, বর্জ্য ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা, পানির অধিকার রক্ষা, নদী দখল ও দূষণ রোধ, জলাশয় রক্ষা, শিল্প দূষণ, যানবাহনের দূষণ, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ রোধ, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও খনিজ আহরণ রোধ, ক্ষতিকর প্লাস্টিক ও কীটনাশকের ব্যবহার রোধ, পাহাড়-বন-কৃষি জমি রক্ষার কাজে নিরলসভাবে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ইতোপূর্বে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বেলা ২০০৩ সালে ইউনেপ-এর গ্লোবাল ৫০০ রোল অব অনার্স পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ পুরস্কার, ২০০৯ সালে এম সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়াও বেলার প্রধান নির্বাহী ২০০৯ সালে গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্ট পুরস্কার এবং ২০১২ সালে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার অর্জন করেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago