মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাইয়ে ত্রাহি অবস্থা

করোনা মোকাবিলায় বেঙ্গালুরুর সাফল্যের গল্প

Bengaluru
করোনা মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টিতে বেঙ্গালুরুর এক জনপ্রিয় দেয়ালচিত্র। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৫ জুন পর্যন্ত বেঙ্গালুরুতে যেখানে করোনা রোগীর সংখ্যা ৭৩২ জন, সেখানে ভারতে শনাক্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার। এর মধ্যে ৩৮ শতাংশই মুম্বাই, দিল্লি ও চেন্নাইয়ে। ওই দিন পর্যন্ত দেশটির প্রধান ঐতিহ্যবাহী শহরগুলোর মধ্যে মুম্বাইয়ে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ২২৬, দিল্লিতে ৪১ হাজার ১৮২, চেন্নাইয়ে ৩১ হাজার ১৮৬ এবং কলকাতায় ৩ হাজার ৬৭২ জন।

বেঙ্গালুরু জনসংখ্যার দিক থেকে মুম্বাই বা দিল্লির চেয়ে খুব একটা ছোট নয়। যেখানে মুম্বাইয়ের জনসংখ্যা ১ কোটি ৮৪ লাখ ও দিল্লির জনসংখ্যা ১ কোটি ৯০ লাখ, সেখানে বেঙ্গালুরুর জনসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ।

গত ১৮ জুন ভারতের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য প্রিন্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে করোনা রোগীর সংখ্যা শুধু যে কম তা নয়, সেখানে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা কমছে।

যেমন, গত ১৫ জুন মুম্বাইয়ে ১ হাজার ৭৮৯ জন ও দিল্লিতে ১ হাজার ৬৪৭ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হলেও বেঙ্গালুরুতে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। এমন চিত্র করোনা মহামারি মোকাবিলায় বেঙ্গালুরুর সাফল্যকেই তুলে ধরে।

ট্রেসিং ও ট্র্যাকিং

বেঙ্গালুরুর এই সাফল্য কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। এটি সেখানকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা, স্বচ্ছ তথ্য প্রবাহ ও কার্যকর ট্র্যাকিংয়ের সুফল। এমনটিই বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বেঙ্গালুরুর বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োকনের নির্বাহী চেয়ারপারসন কিরণ মজুমদার শ মনে করেন, এই মহানগরীর রয়েছে সেরা ট্রেসিং ও ট্র্যাকিং রেকর্ড।

তিনি বলেন, ‘ডেটা দেখলে বোঝা যায়, বেঙ্গালুরুতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ট্রেসিং কন্টাক্ট রেকর্ড রয়েছে। প্রতি একজন করোনা রোগীর বিপরীতে ৪৭ জনের কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হয়েছে। একজন রোগীর সংস্পর্শে যত জনেরই আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর ফলে মহামারি এখানে সেভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।’

এ বিষয়ে মুম্বাইয়ের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘মুম্বাইয়ে এক রোগীর বিপরীতে তিন জনকে ট্রেস করা হয়েছে। আর বেঙ্গালুরুতে এক রোগীর বিপরীতে ট্রেস করা হয়েছে ৪৭ জনকে।’

বৃহত্তর বেঙ্গালুরুর প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বিবিএমপি’র কমিশনার বি এইচ অনিল কুমার দ্য প্রিন্টকে বলেন, ‘ভারতে জাতীয়ভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে ২৫ মার্চ। বেঙ্গালুরুতে লকডাউন করা হয়েছে ১৪ মার্চ। ভারত জাতীয়ভাবে করোনা সংক্রমণ রোধে উদ্যোগ নেওয়ার আগেই বেঙ্গালুরু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল।’

তিনি মনে করেন, কঠোর লকডাউন বেঙ্গালুরুতে করোনার বিস্তার রোধে সহায়তা করেছে। এর মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে করোনার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের (পিএইচএফআই) লাইফকোর্স এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. গিরিধর বাবু সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘মুম্বাই ও দিল্লিতে এখন যা ঘটছে তা বেঙ্গালুরুতেও ঘটতে পারত। বেঙ্গালুরুতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় তা ঘটতে পারেনি।’

প্রযুক্তিভিত্তিক করোনা ব্যবস্থাপনা

প্রযুক্তি ও করোনা মোকাবিলায় নতুন নতুন উদ্ভাবন বেঙ্গালুরুকে নিয়ে এসেছে সাফল্যের চূড়ায়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধুমাত্র করোনা রোগীদের ট্রেসিং ও ট্র্যাকিংই করা হয়নি, তাদের হোম কোয়ারেন্টিনও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

দ্য প্রিন্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়, নগর কর্তৃপক্ষ কন্টাক্ট ট্রেসিং মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। সেখানে রয়েছে করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের রেকর্ড। এর ফলে দ্রুত সেসব ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখা সম্ভব হয়েছে।

এ ছাড়াও, কর্ণাটক রাজ্য সরকার ‘কোয়ারেন্টিন ওয়াচ,’ ‘করোনা ওয়াচ’ ও ‘যাত্রী ওয়েব’ নামে তিনটি অ্যাপ চালু করেছে। যার মাধ্যমে করোনা রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।

এসব অ্যাপ তৈরির পেছনে সক্রিয় ছিলেন ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের কর্মকর্তা মৌড়গিল। তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্তসংখ্যক ব্যক্তির করোনা পরীক্ষা করেছি। যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি তাদেরকে আগে শনাক্ত করেছি।’

‘আমরা সবাইকে বুঝিয়েছি যে এটি কোনো ছেলেখেলা নয়। এটি ঘটমান বাস্তবতা। করোনা রোধে সবাইকে কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই,’ যোগ করেন তিনি।

উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা

কঠোর নিয়মের পাশাপাশি কর্ণাটকের রয়েছে উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা। মনিপাল হসপিটালস এর চেয়ারম্যান ড. এইচ সুদর্শন বাল্লালের মতো স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা মোকাবিলায় কর্ণাটকের সাফল্যের পেছনে রয়েছে রাজ্য সরকারের দক্ষতা ও উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

তিনি বলেন, ‘অন্য রোগীদের সঙ্গে করোনা রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়া ও তাদের জন্যে আলাদা হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত আগেভাগে নেওয়ায় এর সুফল পাওয়া গেছে।’

‘কার্যকর লকডাউন, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও ট্র্যাকিং এবং রোগীদের যথাযথ সেবা দেওয়ার মধ্য দিয়ে কর্ণাটক রাজ্য করোনা মোকাবিলায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে,’ যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students begin mass hunger strike

Approximately 5,000 current and former students have joined the protest

1h ago