৯০ হাজার টাকায় ধর্ষণ মামলা আপস
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় সাত মাস আগের একটি ধর্ষণ মামলা গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আইনজীবীর সহায়তায় ৯০ হাজার টাকায় আপস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজ মঙ্গলবার পিবিআই উপপরিদর্শক মহিদুল ইসলাম জানান, আদালতে ধর্ষণ মামলার আসামি শহীদুল ইসলাম (৫০) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আপস রফার কথা জানিয়েছেন।
গতকাল বিকেলে রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জল মাহমুদ ১৬৪ ধারায় শহীদুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
‘শহীদুল ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করে জানিয়েছেন, গ্রামের আব্দুল খালেক নামে একজনকে ৯০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ধর্ষণের ঘটনা আপসের জন্য,’ বলেন মহিদুল।
পিবিআই জানায়, আইনজীবীর সহায়তায় টাকার বিনিময়ে আপস-অযোগ্য হওয়া স্বত্বেও আপস করে নিয়েছেন। এ কারণে সাত মাসেও ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে আইনজীবী এন্তাজ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, আইন জানার পরও আপস-অযোগ্য মামলা আপসে সহায়তার কথা স্বীকার করেন তিনি।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আইনের বিষয়ে আমি জানি, কিন্তু যখন ওই কিশোরীর মা ও শহীদুল জানায় তাদের নিজেরদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, তারা মীমাংসা করেছে, এ নিয়ে তখন আমি তাদের সহায়তা করেছি।’
পিবিআই উপপরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী কিশোরীর মায়ের একটি হলফনামা শহীদুলের কাছে পাওয়া গেছে, যেখানে দেখা যায় তিনি ঘটনাটি আপস করে নিয়েছেন। দেশের আইন অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনা কোনভাবেই আপসযোগ্য নয়।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শহীদুল জানিয়েছেন, ‘গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দুপুরে বাড়ির পাশে একটি পানের বরজে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। সে সময় তার দিনমজুর মা বাড়ির বাইরে ছিলেন। মেয়েটির ছোট ভাই এসময় বোনের চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে, শহীদুল পালিয়ে যান। গ্রামের লোকজনের কাছে এ ঘটনার বিচার চান কিশোরীর মা। গ্রাম্যনেতা আব্দুল খালেক বিচার পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।’
পিবিআই কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম জানান, তিন মাস পার হলেও যখন বিচার পাচ্ছিলেন না, তখন গত ১১ ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীর একটি আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ওই কিশোরীর মা। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত দুর্গাপুর থানাকে মামলা রেকর্ডের আদেশ দেয় এবং এর তদন্তভার দেয় পিবিআইকে।
তিনি বলেন, ‘তদন্তে দেখা গেছে শহীদুল খালেককে মামলাটি আপসের জন্য ৯০ হাজার টাকা দিলেও সে টাকা তিনি ওই কিশোরীর পরিবারকে দেননি। খালেক মামলার বাদীকে গত ১১ জুন রাজশাহী শহরে নিয়ে যান এবং একজন আইনজীবীর সহায়তায় তাকে মামলাটি আপস করে নিয়েছেন মর্মে হলফনামায় সই করিয়ে নেন। সে সময় সেখানে শহীদুলও উপস্থিত ছিলেন।’
গতকাল (২২ জুন) রাজশাহী শহর থেকে গ্রেপ্তারের সময় শহীদুল হলফনামা দেখিয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে চান। কিন্তু হলফনামাটি বেআইনি ছিল বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা।
ডেইলি স্টারের হাতে হলফনামার একটি কপি এসেছে। সেখানে দেখা যায় নোটারি পাবলিক নাসিরা বানুর উপস্থিতিতে এই হলফনামা সই করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের পাঠানো হবে। সেখানে তারা মতামত দেবেন যে গ্রাম্যনেতা ও আইনজীবীকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হবে কি না।
Comments