হাতের কাছে ‘ডাক্তারখানা’

রংপুর তাঁতিবাজার এলাকার ৫০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান খন্দকার গত কয়েকবছর ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত মাসে হঠাৎ অবস্থা বেশি খারাপ হলেও হাসপাতালে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। একে তো করোনার প্রাদুর্ভাব, তার ওপর শ্বাসকষ্ট। মনে মনে ভয় পাচ্ছিলেন ডাক্তাররা হয়তো করোনা সন্দেহে চিকিৎসা নাও দিতে পারেন।

রংপুর তাঁতিবাজার এলাকার ৫০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান খন্দকার গত কয়েকবছর ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত মাসে হঠাৎ অবস্থা বেশি খারাপ হলেও হাসপাতালে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। একে তো করোনার প্রাদুর্ভাব, তার ওপর শ্বাসকষ্ট। মনে মনে ভয় পাচ্ছিলেন ডাক্তাররা হয়তো করোনা সন্দেহে চিকিৎসা নাও দিতে পারেন।

তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসার কাছেরই 'ডাক্তারখানা'র এক চেম্বারে। এই ডাক্তারখানা মূলত বাংলাদেশের প্রথম জিপি (জেনারেল ফিজিশিয়ান) সেন্টার মডেল, যেটি গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে সারাদেশে ৭০টি শাখার ৯৫ জন চিকিৎসকের মাধ্যমে জিপি প্রাক্টিস ও রেফেরেল সিস্টেম চালুর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

শাহজাহান খন্দকারের ছেলে মনসুর আলী জানান, ডাক্তারখানায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি আশ্বস্ত হন তার বাবার লক্ষণগুলোর সাথে করোনার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

‘সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক, বাবাকে কিছু ওষুধ লিখে দেন, যেগুলো সেবনের পর কোন হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই বাবা এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান,’ বলেন মনসুর।  

অথচ এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে শাহজাহানের খরচ হয়েছে ২০০ টাকা। যেখানে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বার কিংবা হাসপাতালে নিলে এই খরচ হাজারের বেশি দাঁড়াতো।

মনসুরের মতে, ডাক্তারখানার চিকিৎসক যতটা সময় নিয়ে তার বাবার রোগের বিবরণ নিয়েছেন, সেটি এই অর্থের কাছে কিছুই নয়। আর সেজন্যেই পরবর্তীতে তিনি নির্দ্বিধায় তার চার বছর বয়সী জ্বরে আক্রান্ত মেয়েকেও একই জায়গায় নিয়ে গেলে সেও তাদের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠে।  

মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩০ টাকা দিয়ে মেডিকেল হিস্ট্রি রেকর্ড বই নিয়ে প্রতিবার ২০০ টাকার বিনিময়ে যে কেউ ডাক্তারখানায় সাধারণ রোগের চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে এই সেবার জন্য গুণতে হবে ১০০ টাকা। তবে কোন রোগী যদি এই ফি দিতে অসমর্থ্য হন, ডাক্তারখানায় তাদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সেবা।  

ডাক্তারখানায় সাধারণত নবজাতক, শিশু, গর্ভবতী মা, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি, ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারেন। এছাড়াও, চিকিৎসকেরা হার্ট ও কিডনি রোগীর চিকিৎসার ফলো আপও করে থাকেন। সাধারণ রোগের চিকিৎসা ছাড়াও করোনা মহামারিতে ডাক্তারখানার প্রতিটি শাখাই বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

ডাক্তারখানার প্রতিষ্ঠাতা ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রতীন্দ্র নাথ মন্ডল জানান, উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য একটি করে জিপি সেন্টার থাকে, যেখানে ওই এলাকার সব মানুষের চিকিৎসা হয়।

তিনি বলেন, ‘কেউ চাইলেই এই জিপি সেন্টারের বাইরে চিকিৎসা নিতে পারেন না, যদি না সেখানকার ডাক্তাররা তাদের কোন বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করেন, অথবা সেখানকার ডাক্তাররা কোন রোগীর রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হোন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি খুবই যুগোপযোগী পদ্ধতি কেননা আমাদের দেশের মানুষ যেসব সাধারণ রোগে ভোগে, তার বেশিরভাগের চিকিৎসার জন্য একজন এমবিবিএস চিকিৎসকই যথেষ্ট। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা বাংলাদেশেও এই মডেলটি দাঁড় করাতে চেয়েছি, যাতে করে আমাদের দেশের রোগীদের একটি বিরাট অংশ যারা সাধারণ রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালে কিংবা বিশেষজ্ঞের কাছে ভিড় করেন, তারা যেন এই ডাক্তারখানায় চিকিৎসা নিতে পারেন। আর এতে করে আমাদের রোগীরা সময় ও অর্থ দুইই বাঁচাতে পারবেন। ঠিক একইভাবে, আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ওপর অযাচিত চাপও কমবে এবং বিশেষজ্ঞরা হাসপাতালে জরুরি রোগীদের চিকিৎসায় বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন।’  

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যেহেতু জেনারেল ফিজিশিয়ানদের জন্য কোন স্পেশালিস্ট ফিল্ড নেই এবং প্রতি বছর অনেক তরুণ চিকিৎসক উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তায়  ভোগেন, ডাক্তারখানা এই তরুণ চিকিৎসকদের কর্মসংস্থান তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’ 

এমবিবিএস পাশ করা যে কেউ, যারা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধিত, তারা জেনারেল ফিজিশিয়ান সোসাইটি আয়োজিত চার দিনের একটি ট্রেনিং কোর্স (জেনারেল প্র্যাকটিস অরিয়েন্টেশন কোর্স) সম্পন্ন করে অনুমতিসাপেক্ষে ডাক্তারখানার একটি শাখা খুলতে পারেন। এই ট্রেনিং-এ মূলত সাধারণ রোগের প্রাক্টিক্যাল ম্যানেজমেন্ট ও কাউন্সেলিং শেখানো হয়। বিশেষ করে, প্রত্যেককে একজন রোগীর বিবরণ শোনার জন্য ন্যূনতম ১৫ মিনিট সময় দিতে নির্দেশ করা হয়। এ পর্যন্ত ১৫ টি ট্রেনিং-এ অংশ নিয়েছেন ৩২৫০ জন চিকিৎসক।

ডা. রতীন্দ্র নাথ বলেন, যদি বাংলাদেশে প্রতি ২০ হাজার মানুষের জন্য একটি করে ডাক্তারখানার শাখা খোলা যায়, তাহলে মাত্র ১৫-২০ ভাগ রোগীকে চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

5m ago