হলি ক্রিসেন্ট: যে হাসপাতালে শুধু ‘নেই আর নেই’

হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। ছবি: স্টার

চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালজুড়ে শুধু ‘নেই আর নেই’। ক্লিনার নেই, ওয়ার্ডবয় নেই, পর্যাপ্ত নার্স নেই, পর্যাপ্ত চিকিৎসকও নেই। পাশাপাশি সুরক্ষা সরঞ্জামেরও ঘাটতি। এমনকি ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য খাবারের কোনো বরাদ্দও নেই। সংকটে পর্যুদস্ত ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে পারতপক্ষে পা মাড়ান না রোগীরা।

হাসপাতালটিতে ১০ শয্যার আইসিইউ সেবা চালু করা হলেও দেওয়া হয়নি কোনো ইসিজি মেশিন। সংকটাপন্ন রোগীকে চেক করতে হচ্ছে ম্যানুয়ালি।

হাসপাতালটি চার বছর ধরে পরিত্যক্ত ছিল। করোনা মহামারিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সহায়তায় এটি চালু হলেও দুর্ভোগের অন্ত নেই এ হাসপাতালে।

বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের মালিকানায় থাকা এ হাসপাতালটি করোনা রোগীদের চিকিৎসায় পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে হস্তান্তর করা হয় এপ্রিল মাসে। যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া দায়সারাভাবে এটির উদ্বোধন হয় গত ১ জুন।

শুরুতে এ হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও পরে এখান থেকে পাঁচ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। বাকি ১৪ জনের মধ্যে দুই চিকিৎসক ল্যাকটেটিং মাদার ও দুই জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন।

বাকি দশ জনের মধ্যে দুই জনের করোনা পজিটিভ। সবমিলিয়ে বর্তমানে হলি ক্রিসেন্টে চিকিৎসক আছে মাত্র আট জন। এই আট জন পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন হাসপাতালটিতে। আট জনের মধ্যে কয়েকজনের ইতোমধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে কর্মরত একজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পিয়নের কাজ করতে হয় চিকিৎসকদের। চিকিৎসক সংকটের কারণে বাকিদের ওপর চাপ বেড়েছে। পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জামেরও ঘাটতি আছে। ফলে চিকিৎসকরা এখানে দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

এ হাসপাতালে চার দিন ধরে অবস্থান করে কোনো খাবার ও সেবা না পেয়ে সরকারের সাবেক যুগ্মসচিব মইনুল ইসলাম গত ২২ জুন অন্য হাসপাতালে চলে যান। পরিবারের অনুরোধে স্বেচ্ছাসেবী একটা সংগঠন তাকে এই হাসপাতাল থেকে আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়।

নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে বড় ভাইকে নিয়ে আসা শহিদুল ইসলাম স্বপন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা পজিটিভ হওয়ায় গত ২৩ জুন আমরা হাসপাতালে আসি বড় ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য।’

‘এসে দেখলাম সবখানে অব্যবস্থাপনা। টয়লেটগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। কোনো সুস্থ মানুষ এসব টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে না। কোনো চিকিৎসক বা নার্সের দেখা পাইনি। পরে ওই রাতেই রোগী নিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চলে আসি’, বলেন তিনি।

জানতে চাইলে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ হাসপাতালে অনেক কিছু নেই। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার আর যন্ত্রপাতির সংকট আছে। রোগীদের খাবারের কোনো বরাদ্দ নেই। কোনো প্যাথলজিক্যাল সাপোর্টও নেই।

‘যেহেতু করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল, তাই তড়িঘড়ি করে এ হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে হাসপাতালের সংকটগুলো উল্লেখ করে সেগুলোর নিরসন চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। আশা করি খুব শিগগির সমাধান হয়ে যাবে’, যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Step up diplomacy as US tariff clock ticks away

Bangladesh must intensify trade diplomacy to protect garment exports from steep US tariffs as the clock runs down on a three-month reprieve, business leaders warned yesterday.

8h ago