কোভিড-১৯ রোধে ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড গঠনের সুপারিশ
কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড গঠন জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের সঙ্গে অন্যান্য আইন জড়িত থাকায় ন্যাশনাল হেলথ কমান্ডের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে জানান তারা।
আজ বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স (সিএলপিএ ট্রাস্ট) এবং আর্ক ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ওয়েবনারে অংশগ্রহণকারীরা এ মত ব্যক্ত করেন।
ওই ওয়েবনারে অংশ নেন- ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী (সংসদ সদস্য, গাইবান্ধা-১), ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক (প্রকল্প পরিচালক, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি), এ কে এম মাকসুদ (গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি), ড. রোমানা হক (নির্বাহী পরিচালক আর্ক ফাউন্ডেশন)।
ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তৃণমূল হতে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবার সমন্বয়ের জন্য ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড জরুরি।’
একেএম মাকসুদ বলেন, ‘আইনের বাস্তবায়নের লক্ষে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। কোভিড-১৯ কিছু বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি করে, গবেষণার মাধ্যমে বিষয়গুলো তুলে এনে আইনটি সংশোধন করা জরুরি।’
ড. রোমানা হক বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়িত করতে হবে। স্বাস্থ্য সেবায় একটি রেফারেল ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।’
ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হাতে নেই। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের পাশাপাশি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্যও আইন করা প্রয়োজন। কেননা, তামাকের ব্যবহার কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। একটি বিষয় প্রথমে অনুধাবন করতে হবে চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মালিক নয়। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার যে কোনো দায় চিকিৎসকদের উপর আসে। সরকারের উচিত সকল বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা করে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা এবং করোনাকালীন সরকার কর্তৃক বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করা।’
এ সময় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ে গবেষণা উপস্থাপন করেন এডভোকেট কানিজ কান্তা এবং আইনজীবী তামান্না তাবাসুম।
দুই গবেষক বলেন, ‘এই দুর্যোগে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের মতো সাধারণ ছুটিসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, সমন্বয় এবং পরিকল্পনার অভাবে সাধারণ ছুটি বা লকডাউন প্রত্যাশিতভাবে কার্যকর হয়নি। সিএলপিএ ট্রাস্ট এর গবেষণা ও বিশ্লেষণে দেখা যায় লকডাউন বা সাধারণ ছুটির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামতকে প্রধান্য দেওয়া হয়নি।’
সিএলপিএ পরিচালিত গবেষণা জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭০ শতাংশ পুরুষ ও ৩০ শতাংশ নারী এবং জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বয়স ২৪ হতে ৬০ এর মধ্যে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬২ শতাংশ নাগরিক করোনাকে মহামারি, ৩৭ শতাংশ সংক্রামক রোগ এবং এক শতাংশ অসংক্রামক রোগ মনে করে।
করোনা সম্পর্কিত কোনো আইন আছে কি না প্রশ্ন করলে ৫৭ শতাংশ মানুষ আছে বলে জানান এবং ৪৩ শতাংশ জানেন না বলে জানান। অধিকাংশ মানুষ প্রায় ৭০ শতাংশ জানে সরকারের ঘোষিত এই ছুটি সাধারণ ছুটি এবং ৩০ শতাংশ মানুষ মনে করে লকডাউন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশ মনে কনের দরিদ্ররা লকডাউন বা সাধারণ ছুটি মানছে না। করোনা মহামারির পূর্বে লকডাউন সম্পর্কে ৭০ শতাংশ মানুষের কোন ধারণা ছিল না এবং ৩০ শতাংশ মানুষের ধারণা ছিল বলে জানা যায়। ৯৩ শতাশং মনে করেন সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের পূর্বে নৌ, রেল, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল।
সভায় করোনা পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন এবং আইনের কার্যকর সংক্রামক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, এই মুহূর্তে শুধুমাত্র সংক্রামক আইন দ্বারা অনেক বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, তাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ইত্যাদি সমন্বিত প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিকল্পনা করা, স্বাস্থ্যসেবা ও বাণিজ্যের সাথে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের Private Facilities Registration এ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, লকডাউনে আন্তঃজেলা যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে জেলায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তঃজেলা যাতায়াতে বাংলাদেশ পুলিশের মুভমেন্ট পাস ব্যবস্থাও কার্যকরের সুপারিশ করা হয়।
Comments