বাড়ছে পানি, নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের

‘তিস্তা হামাক এতা কষ্ট দ্যায় তাং হামরা তিস্তাপাড় ছাড়োং না। তিস্তার চরোত শুইয়া আছে হামার বাপ-দাদা, চৌদ্দ গোষ্ঠি। তিস্তাপাড়োত বসি কান্দোং, হাসোং এটে কোনা হামারগুলার শান্তি,' গামছা দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিলেন তিস্তা চরের সত্তর ছুঁই ছুঁই কৃষক মফিজ উদ্দিন।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান এলাকার তিস্তাপাড়ের কৃষক বদিয়ার রহমান। ঘরে পানি ওঠায় আরও অনেকের সঙ্গে নির্ঘুম রাত কাটছে তার। ছবি: এস দিলীপ রায়

‘তিস্তা হামাক এতা কষ্ট দ্যায় তাং হামরা তিস্তাপাড় ছাড়োং না। তিস্তার চরোত শুইয়া আছে হামার বাপ-দাদা, চৌদ্দ গোষ্ঠি। তিস্তাপাড়োত বসি কান্দোং, হাসোং এটে কোনা হামারগুলার শান্তি,' গামছা দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিলেন তিস্তা চরের সত্তর ছুঁই ছুঁই কৃষক মফিজ উদ্দিন।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের তিস্তার চর গোবর্ধানের কৃষক মফিজ উদ্দিনও তিস্তা পাড়ের হাজারো মানুষের মতো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। শুক্রবার রাতে তিস্তা পাড়ে বসে তিস্তার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে ছিলেন। বাড়ি-ঘরে বানের পানি উঠেছে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদিপশু ও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে।

‘মোর জীবনে উনিশবার বাড়ি নড়াইছং। কিন্তু তিস্তার চর ছাড়োং নাই। এ্যালাং যদি বাড়ি সরা নাগে তাও সরাইম কিন্তু মুই তিস্তার চর ছাড়িম না। মুই জরোত মরিম আর মোর কবরও যেন চরোত হয়’ বলেন মফিজ।

তার ২৫ বিঘা আবাদি জমি গ্রাস করে নিয়েছে তিস্তা। সামান্য যা কিছু আছে তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে।

একই চরের আর এক ষাটোর্ধ্ব কৃষক বদিয়ার রহমান, তিস্তার বুকে হারিয়েছেন ১৮ বিঘা আবাদি জমি। নদী ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে ১৩ বার বাড়ি সরাতে হয়েছে তাকে। বন্যা আর নদী ভাঙনকে মেনে নিয়েই এমন আরো অনেকেই বাস করছেন তিস্তার চরে।

‘তিস্তার চর ছাড়ি সবাইগুলা গ্যাইলোও মুই যাবার নোঙ। তিস্তা হামার সবকিছু কাড়ি নিছে কিন্তু সুখও কম দ্যায় না এই তিস্তা। তিস্তার বুকে হামরা ফসল ফলাই আর ফসলও পাই বাম্পার,’ জানালেন বদিয়ার রহমান।

‘তিস্তায় পানি বাড়লে হামার চিন্তা বারি যায় কারণ বাড়ি-ঘরোত পানি উঠে, বাড়ি-ঘর ছাড়ি অন্য জাগাত থাকা নাগে আর পানি নামি গেইলে ফের ভাঙন দেখা দেয়,’ তিনি জানান।

‘আইত জাগি থাকি কারণ তিস্তার পানি কখন কোনদিকে ঠেলা দেয় বলা যায় না। চ্যায়া থাকোং তিস্তার দিকে। হামার তিস্তা তো, তাই তিস্তাক ভুলি থাকবার পাংনা,’ তিনি বলেন।

বর্ষা আসলে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যায়, বেড়ে যায় স্রোত। তিস্তার পানি যখন বিপৎসীমা অতিক্রম করে তখন লাখো মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে তিস্তাপাড়। অধিকাংশ মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাতে থাকেন।

তিস্তার চর নরসিংহের ৭০ বছর বয়সী কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, তিস্তার পানি বাড়লে পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তাদেরকে, পরিস্থিতি বুঝে সবাইকে সরিয়ে নিতে হয় নিরাপদ স্থানে। এটা তাদের নিয়মিত রুটিন। প্রতিবছর বর্ষাকালেই এই পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করতে হয়।

তিস্তা নদীতে পানি বাড়লে তিস্তাপাড়ের মানুষ চলে যান নিরাপদ আশ্রয়ে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই নিরাপদ জায়গাটি হলো, উঁচু বাধ অথবা রাস্তা। পানি কমলে তারা আবার ফেরেন ঘরে। প্রয়োজনীয় মেরামত করেন। কখনো কখনো কারো বাড়ি-ঘর ভেসে যায় বন্যার পানিতে।

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে অবনতি হয় নদী ভাঙন পরিস্থিতির। নদী গর্ভে চলে যায় আবাদি জমি ও বসতভিটা। এভাবে চক্রাকারে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জীবনযাপন করেন।তিস্তা পাড়ের মানুষের দাবি, তারা ত্রাণ চান না, নদীতীর সংরক্ষণ আর খননের দাবি তাদের। 

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

5m ago