সুনামগঞ্জে বন্যা

‘এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের চারদিকে এখন কেবল পানি আর পানি। বসতবাড়ি, দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান— সব স্থানেই পানি। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমর বা বুকসমান পানি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত তিন দিন ধরেই সুনামগঞ্জ জেলার সব উপজেলায় এমন অবস্থা চলছে। এর মধ্যে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার প্রায় ১৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার এবং পিয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর বিভিন্ন ঘাট দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ফেরি পারাপার চলছে।

সুনামগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থিত সহস্রাধিক দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। যেসব দোকানে একটু কম পানি ঢুকেছে, কেবল সেখানেই কিছুটা বেচাকেনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনা ও বন্যার পানি না কমায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ সদরের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এমনিতে প্রতিদিন তার দোকানে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হতো। করোনার কারণে তা নেমে গেছে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকায়। কিন্তু, বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার পর থেকে তার দোকানে গড়ে ২০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় তিনি মেঝেতে কয়েক দফা ইট ফেলে কোনো রকমে দোকানঘরে চলাফেরা করছেন। এ ছাড়া, দোকানে পানি ঢোকায় সাপের উপদ্রবও বেড়েছে। দোকানের জিনিসপত্র যেন ভিজে নষ্ট না হয়ে যায় এজন্য দোকান খুলেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই করোনার কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়েছে। এরপর আবার বন্যা। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।’

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত

সঞ্জীব দাস নামে সদরের এক বাসিন্দা জানান, তার বাসায় হাঁটুসমান পানি। এ কারণে ঘরে কিছু ইট ফেলে তার ওপর কয়েকটি চৌকি বিছিয়ে কোনো রকমে মাচা বেঁধে বসবাস করছেন। তবে ঘরে তিনটি শিশু থাকায় তার চিন্তা বেশি হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের ভয় তো আছেই। বন্যার পর থেকে ভয় হয় কখন জানি শিশুগুলো পানিতে পড়ে যায়। এ ছাড়া, রান্নাবান্না করতেও তাদের সমস্যা হচ্ছে।

মানুষের এই দুর্ভোগের কারণ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বৃষ্টি না কমলে বন্যা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় উপজেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে, বন্যার্ত মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাই দুর্ভোগ তো কিছুটা হবেই।’

‘বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা আরও বাড়ানো হবে’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

1h ago