খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের বানভাসি মানুষের

পানিবন্দী মানুষকে দিন কাটাতে হচ্ছে অনাহারে-অর্ধাহারে। ছবি: স্টার

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী কৃষি নির্ভরশীল লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার। বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দুই জেলার নদ-নদীর পানি। দুর্গত এলাকার অনেক মানুষ পরিবার-পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, উঁচু রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের উপর।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আজ সোমবার সকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি যোগ করেন।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুহিবুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাটের প্রধান দুই নদী তিস্তা ও ধরলার পানি উঠা-নামা করে কিছুটা কমলেও এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি হাতীবান্ধার দোয়ানিতে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার আর ধরলার পানি লালমনিরহাটের শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

দুই জেলার ১৪ উপজেলার নদ-নদী তীরবর্তী গ্রাম ও চরের সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার আমন বীজতলা, বাদাম, তিল, পাট, ভুট্টা ও সবজী খেত। পানিবন্দী মানুষকে দিন কাটাতে হচ্ছে অনাহারে-অর্ধাহারে। নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না বিশুদ্ধ পানি। বাড়ি ছেড়ে রাস্তা ও বাঁধের উপর আশ্রয় নেওয়া মানুষজন গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। শুকনো খাবার পাউরুটি, চিড়া, মুড়ি, গুড় খেয়ে বাঁচতে হচ্ছে তাদের।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কুরুল এলাকায় ধরলা নদীর ডান তীরে পানি উন্নয়নের বাঁধের একটি অংশ ভেঙে নদীর পানি গ্রামে ঢুকছে। এখানে নতুন করে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা পাড়ের মহিষখোঁচা গ্রামের সেকেন্দার আলী জানান, তারা চার দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘরের ভেতরে কোমর উচ্চতায় পানি। চলাফেরা করতে পারছেন না। রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন। তবে সরকারি ও বেসরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা এখনো পাননি।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের জোড়গাছ গ্রামের পানিবন্দী কৃষক নুর ইসলাম জানান, তিনি ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে ছয় বিঘা জমিতে তিল ও বাদাম লাগিয়েছিলেন। এখন বন্যার পানির নিচে এই ক্ষেত সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

একই উপজেলার অষ্টমীর চরের পানিবন্দী দেলোয়ার হোসেন জানান, তারা পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু ভাগ্যে জুটছে না কোনো ত্রাণ সহায়তা। পাউরুটি আর চিড়া খেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিন কাটছে। রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চলাফেরা করতে হচ্ছে নৌকায়।

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আরও পানি বাড়লে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বের হতে হবে বলে তিনি জানান।

পানিবন্দী মানুষের জন্য লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন ৮০ মেট্রিক টন চাল ও ছয় লাখ ২৬ হাজার টাকা এবং কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিলেও এখনো বিতরণ শুরু করা হয়নি।

দুই জেলা প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বানভাসি মানুষের তালিকা তৈরিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দেরি করায় ত্রাণ বিতরণে দেরী হয়েছে। তবে আজ থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Early US intel assessment suggests strikes on Iran did not destroy nuclear sites: CNN

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago