সূর্যমুখী তেলের আড়ালে কোকেন পাচার: বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগপত্র দিল র্যাব
ভোজ্যতেল আমদানির ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে তরল কোকেন আনার ঘটনায় করা মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক নুর মোহাম্মদসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগপত্র দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)।
সোমবার চট্টগ্রামের মহানগর আদালতে এই মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত র্যাব-৭ এর কর্মকর্তা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী অভিযোগপত্র জমা দেন বলে জানিয়েছেন র্যাব ও আদালত সূত্র।
এর আগে একই মামলায় ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল নুর মোহাম্মদ ও তার ভাই মোস্তাক আহমেদ সহ ১০ জনকে আসামি করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছিল র্যাব। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত আসামিরা হলেন—গোলাম মোস্তফা সোহেল (৩৯), নূর মোহাম্মদ (৪৯), মো. মোস্তফা কামাল (৪২), মো. মেহেদী আলম (৩১), মো. আতিকুর রহমান (২৯), এ কে এম আজাদ (৪৮), মো. সাইফুল ইসলাম (৩২), মোস্তাক আহাম্মদ খান (৪৫), ফজলুর রহমান (৩৫), মো. বকুল মিয়া (৩১)।
এদের মধ্যে মোস্তাক, ফজলুর এবং বকুল মিয়া পলাতক রয়েছেন। আসামি গোলাম মোস্তফা সোহেল, মোস্তফা কামাল ও মেহেদী আলম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
র্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পরস্পর যোগসাজশে অবৈধ পন্থায় চোরাচালানের মাধ্যমে সূর্যমুখী তেলের সঙ্গে তরল কোকেন মিশিয়ে আমদানি করার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’
‘তদন্তে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লন্ডন প্রবাসী মো. মোকতার হোসেন (৪৮) ও মো. মফিজুর রহমান সুমন (৩৭) এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। দ্য ইউনাইটেড কিংডম সেন্ট্রাল অথোরিটি, জুডিশিয়াল কো-অপারেশন, লন্ডন কোকেন পাচারের ঘটনায় এই দুজনের সংশ্লিষ্টতা তদন্ত করছে,’ বলেন মহিউদ্দিন ফারুকী।
আদালতের নির্দেশে গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক বেনজির আহমেদের উপস্থিতিতে পতেঙ্গা র্যাব-৭ সদর দপ্তরে ৩৭০ লিটার তরল কোকেন ধ্বংস করা হয় যার বাজার মূল্য আনুমানিক নয় হাজার কোটি টাকা।
২০১৫ সালের ৬ জুন রাতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তরল কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার সিলগালা করেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তদন্তকারীরা বলছেন বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। জাহাজটি সিঙ্গাপুর হয়ে ২০১৫ সালের ১২ মে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।
প্রাথমিক পরীক্ষায় কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে উন্নত ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে সেখানে কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।
২০১৫ সালের ২৭ জুন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানায়, বন্দরে আটক ১০৭টি ড্রামের মধ্যে ৫৯ ও ৯৬ নম্বর ড্রামে পরীক্ষায় তরল কোকেন পাওয়া গেছে। দুটি ড্রামে ১৮৫ লিটার করে মোট ৩৭০ লিটার কোকেন ছিল। পরে এ ঘটনায় ১৪ জুলাই, ২০১৫তে বন্দর থানার এসআই ওসমান গনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে মাদকের ধারায় ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর “সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায়” খানজাহান আলী গ্রুপের মালিক নূর মোহাম্মদকে বাদ রেখে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত ডিবি পুলিশের দেওয়া চার্জশিট ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে মামলাটি র্যাবকে আবারো তদন্তের নির্দেশ দেন। র্যাব-৭ মামলাটিতে নূর মোহাম্মদকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি মহানগর হাকিম আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে।
Comments