আগাম বন্যায় ডুবেছে ফসল, ক্ষতির মুখে লালমনিরহাটের চরের কৃষকেরা
লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের তিন শতাধিক চরে কৃষকদের মধ্যে চলছে ফসল হারানোর কষ্ট। আগাম বন্যা ডুবিয়ে দিয়েছে ফসল। কেমন করে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন তাই নিয়ে দিশেহারা তারা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার বুকে হরিণচড়া মাঝেরচরের কৃষক মোবারক আলী (৬৬)। প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে ১০ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছিলেন। বাদাম ঘরে তোলার মাত্র এক সপ্তাহ আগে আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে ফসল।
মোবারক আলী বলেন, গত বছর ১০ বিঘা জমি থেকে ৭৫ মণ বাদাম পেয়েছিলেন। ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা দরে প্রতিমণ বাদাম বিক্রিও করেছিলেন। এবছরও তেমন আশা ছিল, কিন্তু বন্যার পানি তার সব আশা ভাসিয়ে নিয়েছে। এছাড়া তার ২০ শতাংশ জমির আমন ধানের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।
মোবারক আলীর মতোই এই চরে শতাধিক কৃষকের একই অবস্থা। চরের কৃষকরা বাদাম চাষ করে তা বিক্রি করে কিছুটা ভালো আয় করেন। বাদামের টাকায় সংসার খরচ ছাড়াও আমনের আবাদে খরচ করে থাকেন।
চোখ ভরা পানি নিয়ে আসমা বেগম (৪৮) বলেন, বাদাম খেত ৬ দিন ধরে বন্যার পানির নিচে তলিয়ে থেকে পঁচে গেছে। পানির নিচ থেকে তাই তুলে আনছেন এই আশায় যদি কিছুটা ভালো পাওয়া যায়। এবছর সংসার কীভাবে চলবে আর কীভাবে অন্য ফসল আবাদ করবেন তা নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় আসমা।
আদিতমারী উপজেলার তিস্তার বুকে চর নরসিংহের কৃষক মফিজুল ইসলাম (৬৫) বলেন, তিনি ৪৭ হাজার টাকা খরচ করে চরের ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছিলেন। খেতের সব ভুট্টাই বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় ৭০-৮০ শতাংশ ভুট্টাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আসছেন তারা কিন্তু এ বছর জুন মাসেই বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে। চরের ফসল জুন মাসের মধ্যেই ঘরে তোলেন তারা। এবছর ফসল ঘরে তোলার আগেই তিস্তা কেড়ে নিয়েছে তাদের ফসল।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে চর অস্টমীর কৃষক দিদারুল ইসলাম (৫৩) বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ফসল লাগিয়েছিলেন।৬৫ হাজার টাকা খরচ করে ছয় বিঘা জমিতে কাউন ও তিল লাগিয়েছিলেন কিন্তু আগাম বন্যায় খেতের সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
একই চরের কৃষক মোতালেব হোসেন (৫৫) বলেন, 'এখনো বন্যার পানির নিচে তলিয়ে আছে বাদাম, তিল, কাউন ও আমনের বীজতলা। ফসল নষ্ট হওয়ার সঙ্গে আমাদের দারিদ্র্যতাও বেড়ে গেল অনেকগুণ।'
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কৃষকরা পুনরায় বীজতলা তৈরি করতে পারবেন। চরের কৃষকরা বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে আগাম বন্যায় যে পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তা পুষিয়ে নেয়া তাদের জন্য কষ্টকর। কী পরিমান জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নিরুপণের কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
Comments