চলে গেলেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান শামীম (৭৫) আর নেই। আজ বুধবার সকাল ১১টায় কুমিল্লায় পৈত্রিক বাড়িতে ঘুমের মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আজ এশার নামাজের পর রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ (আজাদ মসজিদ) এ তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
লতিফুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
এ ছাড়াও, তিনি দ্য ডেইলি স্টারের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াওয়ার্ল্ডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও দৈনিক প্রথম আলোর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টা
ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লতিফুর রহমান। দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বেভারেজ, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, ফাস্ট ফুড, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও এফএম রেডিও) এবং চা বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
দ্য ডেইলি স্টার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন মূল ভূমিকায় এবং অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি।
ট্রান্সকম গ্রুপের মধ্যে রয়েছে, ট্রান্সকম বেভারেজ, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স, এসকেএফ ফার্মাসিটিক্যালস, ট্রান্সকম ফুড, ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ট্রান্সকম কনজ্যুমার প্রোডাক্ট ও মিডিয়াস্টার।
লতিফুর রহমান আইসিসি প্যারিসের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য, আইসিসি বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্র্যাকের পরিচালনা কমিটির সদস্য। তিনি বাংলাদেশ বেটার বিজনেস ফোরাম এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।
লতিফুর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাত বারের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকারের ট্রেড বডি রিফর্মস কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
লতিফুর রহমান ‘অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড ২০১২’ তে ভূষিত হন। এবং অ্যামেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ ২০০১ সালে তাকে বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দ্য ইয়ারে সম্মানিত করে।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ‘সার্ক আউটস্ট্যান্ডিং লিডার’ সম্মাননা পেয়েছেন। নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসায় অবদানের জন্য যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশিদের শীর্ষ ব্যবসায়ীক সংগঠন ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্ট অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে।
লতিফুর রহমান তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৬ সালে চাঁদপুরে। পারিবারিক মালিকানাধীন একটি পাটকলে। সেখানেই ১৯৭১ সাল পর্যন্ত একজন নির্বাহী হিসেবে ছিলেন তিনি।
১৯৭২ সালে ডব্লিউ রহমান জুট মিল জাতীয়করণ করা হয়, যেটি ছিল রহমান পরিবারের অন্যতম আর্থিক খাত। পরের বছর ১৯৭৩ সালে ট্রান্সকম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন লতিফুর রহমান। আশির দশকে বাংলাদেশে নেসলের একমাত্র আমদানিকারক ও পরিবেশক ছিলেন লতিফুর রহমান। ৯০ এর দশকে তিনি দেশে মার্কিন ফার্মাসিটিক্যাল স্মিথ, ক্লাইন অ্যান্ড ফ্রেঞ্চ নিয়ে আসেন, পরবর্তীতে যা এসকেএফ নামে পরিচিতি পায়।
লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান। তাদের তিন মেয়ে সিমিন হোসেন, শাজরেহ হক ও শাজনীন রহমান এবং এক ছেলে আরশাদ ওয়ালিউর রহমান।
বাংলাদেশের ব্যবসা জগতে অনুকরণীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সবার সমীহ আদায় করে নিয়েছেন লতিফুর রহমান। ব্যবসা ক্ষেত্রে তার সততা ও নৈতিকতার কারণে তিনি ছিলেন একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। তার সংস্পর্শে যারাই এসেছেন তারা সবাই তাকে ভালোবেসেছেন, সম্মান করেছেন।
Comments