‘আজ শরীর ভালো, মন খুব ভালো না’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজ শুক্রবার শারীরিকভাবে বেশ ভালো অনুভব করছেন। আজ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজেই দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আজ শরীর বেশ ভালো। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে মাথা ও বুকের সিটি স্ক্যান করিয়েছি। ঢামেক কর্তৃপক্ষ বিনা মূল্যে আমার সিটি স্ক্যান করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, আমি রাজি হইনি। তাদের বলেছি, “সাধারণ মানুষকে পারলে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেন। আমার ক্ষেত্রে যেহেতু দিতে পারব, তাই দিচ্ছি”।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল ঢামেকে গিয়ে মন ভালোও হয়েছে, আবার খারাপও হয়েছে। ভালো হওয়ার কারণ— ঢামেক হাসপাতালে সিটি স্ক্যানের জন্য দুইটি অত্যাধুনিক মেশিন রয়েছে। পাশাপাশি এসব পরিচালনাকারী চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট, নার্স ও ওয়ার্ড বয়— সবাই খুবই দক্ষ। একইসঙ্গে তাদের ব্যবহারও খুব আন্তরিক। এ ছাড়া, মেশিনগুলোর ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণও বেশ ভালো মনে হয়েছে। প্রতিদিন তাদের ৪০০ পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে।’

‘মন খারাপ হওয়ার কারণ হলো— তাদের যে পরিমাণ সক্ষমতা রয়েছে, সেই তুলনায় সেবা পাওয়া রোগীর সংখ্যা অনেক কম। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যেখানে ভিড় লেগে থাকে, সেখানে এই জায়গায় ভিড় তুলনামূলক অনেক কম। মানুষ সেখানে কম যান অথবা কোনো না কোনো সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ সেখানে গিয়ে পৌঁছাতে পারেন না। এটা দেখেই আমার খারাপ লেগেছে যে, আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বহু মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের দোরগোড়ায় এই সেবাটা পৌঁছাতে হবে। আমি ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছি, আপনাদের সবকিছুই ভালো। তাই সেবার পরিমাণ যেন আরও বাড়ানো হয়। একইসঙ্গে সেখানে চিকিৎসাধীন করোনায় আক্রান্ত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রনোর সঙ্গে দেখা করেছি এবং তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছি’, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘শারীরিকভাবে ভালো থাকলেও মানসিকভাবে খুব ভালো থাকতে পারছি না। কারণ, আমাদের বহু গরিব মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না, করোনা পরীক্ষা করতে পারছে না, অনেকের ঘরে খাবার নেই। আমরা (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র) সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারতাম না। কিন্তু, অনেক কিছু করতে পারতাম। আমি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমার জন্য কিছুটা সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত কিট নিয়ে যা কিছু ঘটলো, তা মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না। অসুখের কারণে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। কিন্তু, মানসিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণ “কিট সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো”।’

‘আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশের মানুষের জন্য যে কাজ করেছে, তা এতদিনে আলোর মুখ দেখতে পাওয়া উচিত ছিল। কারণ, আমাদের কোনো দোষ বা ক্রটি ছিল না। অনুমোদন না পেলেও কিটের উন্নয়নে যেহেতু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর পরবর্তী সহায়তা করতে চেয়েছে, তাই এখন আমরা সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছি। এসব মিলিয়েই শরীর ভালো থাকলেও মন খুব ভালো না’, যোগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিট দিয়ে পরীক্ষাতেই তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পিসিআর পরীক্ষাতেও তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

এরপর, গত ১২ জুন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। পরে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফলাফলেও তার কোভিড-১৯ নেগেটিভ এসেছে। তবে, ফুসফুসের সংক্রমণ, গলার ইনফেকশনসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে তিনি এখনো গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সর্বশেষ গতকাল ঢামেক হাসপাতালে করা সিটি স্ক্যানের ফলাফলে দেখা গেছে, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ফুসফুসে “মাল্টিপল লাং অ্যাবসেস” শনাক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুন:

তৃতীয়বার অবনতির পর ডা. জাফরুল্লাহর ফুসফুসের ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে

আজ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সিটি স্ক্যান করা হয়েছে

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনামুক্ত

পিসিআর পরীক্ষাতেও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা নেগেটিভ

‘আমি সুস্থ হয়ে উঠবো, সুস্থ হয়ে উঠতেই হবে’

‘আমি ভালো আছি’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা পজিটিভ

বিএসএমএমইউর পরীক্ষাতেও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা পজিটিভ

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এবারের উদ্যোগ ‘প্লাজমা ব্যাংক’

আমাদেরই সবার আগে এই কিট বিশ্ববাসীর সামনে আনার সুযোগ ছিল: ড. বিজন

২৫ দিনে ৩০১ শয্যার করোনা হাসপাতালের জন্ম অথবা অপমৃত্যু!

মুক্তিযুদ্ধ, গণস্বাস্থ্য, ডা. জাফরুল্লাহ ও মাছ চোর

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

4h ago