পটুয়াখালীতে আমন বীজ সংকট, সময়মতো বীজতলা তৈরি নিয়ে শঙ্কা

পটুয়াখালীর সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া গ্রামে জমিতে কাজ করছেন কৃষক। ছবি: সোহরাব হোসেন

পটুয়াখালীতে আমন বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা নির্ধারিত ডিলারের দোকানে ঘুরেও বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন—বিএডিসির বীজ পাচ্ছেন না।

এতে করে ২-৩ গুণ বেশি দামে বাজার থেকে নিম্নমানের বীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা। এদিকে, বিএডিসি আরও ১০০ টন বীজের চাহিদাপত্র পাঠালেও এক সপ্তাহেও জেলায় বীজ পৌঁছেনি। ফলে যথাসময়ে আমনের বীজতলা তৈরি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২ লাখ ৩ হাজার ৬০১ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এজন্য ৬ হাজার ৭০ মেট্রিক টন বীজ প্রয়োজন। বিএডিসি এবার ৩৮৫ টন বীজের চাহিদাপত্র পাঠালে পটুয়াখালীতে ২৭৫ টন বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতি কেজি বীজ ৪০ টাকা নির্ধারিত হলেও সরকার কেজিপ্রতি ১০ টাকা ভর্তুকি দেয়ায় চাষীরা ৩০ টাকা কেজি দরে বীজ কেনার সুযোগ পায়।

তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থানায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাহিদার সাথে বিএডিসি চাহিদার সমন্বয় না থাকার কারণে বাজারে বীজের সংকট তীব্র হয়েছে।

জেলার কলাপাড়া উপজেলার পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের কৃষক হারুন মাঝি জানান, তার প্রায় ৯০ বিঘা জমিতে আমন আবাদের জন্য ২১০ কেজি বীজ প্রয়োজন। তিনি উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি-৪৯, ২৩ এবং গুটি স্বর্ণা জাতের বীজধান খুঁজছিলেন। ডিলারের কাছে বীজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাজারের নিম্নমানের বীজ ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে।

সোনাতলা গ্রামের বেল্লাল হোসেন এবং হোসেনপুর গ্রামের সুলতান হাওলাদার জানান, বীজতলা তৈরির এখনই উপযুক্ত সময়। কিন্তু বিএডিসি‘র বীজ সংগ্রহ করতে না পেরে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর নিজেই আমন বীজ সংরক্ষণ করি, কিন্তু এ বছর অকাল বর্ষনে আমনধানে বেশি চিটা থাকার কারণে বীজ সংরক্ষণ করতে পারিনি। তাই  বাজার থেকে বীজ কিনতে গিয়ে সংকটে পড়েছি।’

পটুয়াখালী শহরের থানাপাড়া এলাকার বীজ বিক্রেতা মজিবুর রহমান জানান, এ বছর কৃষক পর্যায়ে আমন বীজের চাহিদা বেশি। তিনি এ বছর বিএডিসির কাছে ২০ টন আমন বীজের চাহিদাপত্র দিয়েছিলেন কিন্তু বিএডিসি ২ টন বীজ বরাদ্দ দিয়েছে যা সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় জাতের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজে ফলন বেশি হওয়ার কারণে কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। তাই বীজের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, সরকারিভাবে কৃষককে ন্যায্য মূল্যে বীজধান ক্রয়ের জন্য বিএডিসি চাহিদার ৩০ ভাগ বীজধান প্রতি বছর সরবরাহ করে আসছে। এবছর চাহিদা বাড়িয়ে ৪০ ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু গেল বছরের ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে অধিকাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। ফলে শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষক স্থানীয়ভাবে বীজধান সংরক্ষণ করতে পারেননি।

এ ব্যাপারে বিএডিসি বীজ এর উপসহকারী পরিচালক মো. নান্নু মিয়া জানান, এ বছর ৩৮৫ টন আমন বীজের চাহিদাপত্রের বিপরীতে বরাদ্দ পেয়েছি ২৭৫ টন। কৃষকদের চাহিদা বিবেচনায় আরও ১০০ টন বীজ বরাদ্দ চেয়ে গত ২৮ জুন ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও বরাদ্দ পাইনি। কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ পেলে কৃষকের চাহিদা কিছুটা হলেও মিটবে, জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

5h ago