চা শ্রমিকদের থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে পঞ্চায়েত নেতাদের নির্দেশ
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের পক্ষে নয় বরং সাধারণ চা-শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়ালেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী।
আজ রবিবার মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ১৯টি চা-বাগানের সদস্য, চা-পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি অনুদানে অনিয়ম বন্ধের অংশ হিসেবে চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বলেন। বৈঠকে বিভিন্ন চা-পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতিরা স্বীকার করেন যে- তারা ছবি প্রিন্ট, ফটোকপি ও মাস্টাররুল রেডি করাসহ যাতায়াত বাবদ টাকা নিয়েছেন।
ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যারা চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে সরকারের আর্থিক সহায়তা হিসেবে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া বাবদ টাকা নিয়েছেন, তারা অবশ্যই সেই টাকা ফেরত দেবেন। নয় তো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘তালিকা করতে গিয়ে আবারও যদি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠে, তাহলে সেক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার যেন চা-শ্রমিকরা নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
‘চা-বাগানের ম্যানেজার, ইউপি চেয়ারম্যানরা খেয়াল রাখবেন যেন কোনো চা-শ্রমিক নেতা এই কার্যক্রমে শ্রমিকদের ঠকিয়ে মুনাফা না করে’ যোগ করেন তিনি।
বৈঠকে দিলদারপুর ও ক্লিবডন চা-বাগানের ম্যানেজার মোহাম্মদ হাসিব মিয়া বলেন, ‘আমরা এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে চাই।’
ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা সেবার কথা বলে কেনো চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেব।’
শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, ‘গরিব অসহায় চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে কেন টাকা নেওয়া হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।’
‘চা-শ্রমিকরা ব্যাংকে গেলে বিভিন্নভাবে অবহেলার শিকার হন’ উল্লেখ করে কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেন।
প্রতিবারের মতো এবারও সিলেট বিভাগের প্রায় ১৫৮টি চা-বাগানে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে শ্রমিকদের মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তালিকায় অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি চা-শ্রমিকদের অনেকে পঞ্চায়েত কমিটির নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও’র কাছে অভিযোগ করেন।
সূত্র জানায়, গত বছরের যে তালিকা হয়েছিল সেগুলো মেনে শ্রমিকদের চেক দেওয়া হচ্ছে এবং আগামী বছরের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন চা বাগান পরিদর্শনকালে কয়েকজন চা শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় এই সংবাদদাতার। এসময় চা-শ্রমিক আশু উরাং বলেন, ‘উপকারভোগীদের তালিকা করার কাজ করছেন বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির লোকজন। তারা প্রত্যেক চা শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০০-৫০০ করে টাকা আদায় করছেন।’
চা শ্রমিক সুবাস গোয়ালা বলেন, ‘প্রতিবারই যেকোনো অনুদান আসলেই প্রেসিডেন্ট লোক পাঠিয়ে কাগজপত্র ঠিকঠাক ও সরকারি খরচের কথা বলে টাকা আদায় করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ে যায়।’
চা শ্রমিক অজিত রায় বলেন, ‘আমরা নিজের খরচে ছবি ও আইডি কার্ডের ফটোকপি করে দেই। এরপরও টাকা না দিলে তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। তাদের (সভাপতি-সম্পাদক) পছন্দের লোকজনের নাম বার বার তালিকায় আসে। ফলে প্রকৃত অসহায় শ্রমিকরা অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়।’
Comments