কুড়িগ্রামে বাঁধের ওপর বানভাসি সাহেরাদের সংসার

বানভাসি সাহেরা বেগমদের চোখে-মুখে শুধুই বেদনার ছাপ। না মিটছে নিজের প্রয়োজন, না মেটাতে পারছেন পরিবার-পরিজনের চাহিদা।
Kurigram flood victims
কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর রাস্তার ওপর ঝুঁপড়ি ঘরে থাকছেন বানবাসীরা। ৫ জুলাই ২০২০। ছবি: স্টার

বানভাসি সাহেরা বেগমদের চোখে-মুখে শুধুই বেদনার ছাপ। না মিটছে নিজের প্রয়োজন, না মেটাতে পারছেন পরিবার-পরিজনের চাহিদা।

সবার খাওয়া শেষে যতটুকু থাকে ততটুকুই মুখে তুলতে হয় সাহেরাকে। কখনো পেট ভরে, কখনো আধাপেট নিয়ে ঘুমাতে যেতে হয়। কিন্তু সে ঘুমও কষ্টের, দুঃখের। এক বিছানায় সবাইকে থাকতে হচ্ছে গাঁদাগাদি করে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চরযাত্রাপুরে একটি বাঁধের ওপর পলিথিনে মোড়ানো আনুমানিক ৫ ফুট প্রশস্ত ও ৯ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুঁপড়ি ঘরে গত ১১ দিন ধরে সংসার পেতেছেন বানভাসি সাহেরা বেগম (৪৭)।

তিনিসহ পরিবারে সদস্য পাঁচ জন। তার সঙ্গে একই ঝুঁপড়িতে উঠেছেন তার ছোট বোন আহেনা বেগম (৪৪) ও তার স্বামী আব্দুল জব্বার। তাদের বাড়িতে বন্যার পানি বুক সমান। পানি কিছুটা কমলেও এখনো ঘরের ভেতরে পানি রয়েছে।

কবে নাগাদ সাহেরা, আহেনারা পরিবার নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবেন তা জানেন না। ঝুঁপড়ি-ঘরে সংসার জীবন খুবই কষ্টের। কিন্তু, বন্যার পানি তাদেরকে বাধ্য করেছে এ কষ্টের মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নিতে।

সাহেরা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন, এটা জীবনে নুতন কিছু নয়। অনেক বছর ধরে বাঁধের ওপর সংসার পাতার ঘটনা জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় পানি বাড়লেই বন্যা হয়। ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয় বাঁধ ও সরকারি রাস্তায়।

গেল বছরগুলোতেও এমন অভিজ্ঞতার বিশদ বর্ণনা রয়েছে তার কাছে, জানালেন তিনি।

‘হামরা কি আর বাঁধোত থাকবার চাং। হামরা তো বাড়িত যাবার চাং। ক্যাম করি যাই, বাড়িত তো বানের পানি উঠেছে। কষ্টে-মষ্টে বাঁধোত থাকবার নাগছি। পানি নামি যাইলে হামরা বাড়ি যামো,’ বললেন বানভাসি সাহেরা বেগম।

সাহেরা বেগমের স্বামী জাবেদ আলীও (৫৩) জানালেন, বাঁধের ওপর থাকার কষ্ট। ঘরে খাবার নেই। হাতে কাজও নেই। চড়া সুদে কিছু টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু, কখনোই তিন বেলা খাবার জোটাতে পারছেন না পরিবারের জন্য।’

‘পান্তাভাত খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে। রাতে জোটে ভাত। তারপরও সন্তানদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিজেদের আধা-পেট অবস্থায় থাকতে হয়,’ যোগ করেন তিনি।

বানভাসি আহেনা বেগম জানালেন, তিনি বড় বোনের ঝুঁপড়িতেই থাকছেন। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না কারোই। অস্থায়ী ঝুঁপড়িতে থাকতে হবে বন্যার পানি ঘর থেকে না নামা পর্যন্ত। প্রতিবছর বন্যা আসলে বাঁধতে হয় ঝুঁপড়ি ঘর। সেখানে থাকতে হয় পানি না নামা পর্যন্ত।

বানভাসি সাজেনা বেগমেরও (৪৬) কষ্টের শেষ নেই। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে গত ১১ দিন ধরে তিনি চরযাত্রাপুরে এলাকায় বাঁধের কাছে কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর রাস্তার ওপর ঝুঁপড়ি ঘরে থাকছেন।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘হামারগুলার খাবার কষ্ট আছে। হামার কষ্ট কাই দ্যাখে। সোকগুলা কষ্ট একসাথ করি হামরা বাঁচি আছি।’

সেখানেই নাজেনা বেগম বললেন, ‘গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সবকিছু নিয়ে রাস্তার ওপর উঠেছি। হাঁস-মুরগি অল্প দামে বিক্রি করে খাবার জোগার করছি।

বর্ষা আসলে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ব্রহ্মপত্র, তিস্তা ও ধরলাপাড়ে বানভাসিদের চিত্র এমনই। ঘরে পানি উঠলেই তাদের ছুটতে হয় নিরাপদ স্থানে। পানি নেমে গেলে ফিরতে হয় বাড়িতে।

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

21m ago