বাংলাদেশ শেনজেন ভিসার আওতায় নেই বলে তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশের একজন এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল গ্রেপ্তার হয়েছেন কুয়েতে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অর্থ ও মানব পাচারের। শেনজেন ভিসা সুবিধার বাইরে বাংলাদেশ। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে বাংলাদেশিদের যাতায়াতে সীমাবদ্ধতা আরোপ। ইতালির গণমাধ্যমে সংবাদ ‘ঢাকায় ভুয়া স্বাস্থ্যসনদ ব্যবসা’, বাংলাদেশের ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা। প্রবাসী শ্রমিকরা নানা সংকটে।
বিশ্বজুড়ে এসব সংবাদ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়েছে গত মঙ্গলবার দুপুরে।
বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ বিষয়ে আপনারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
কুয়েত যদি আমাদের জানায়, আমরা যদি তার সম্পর্কে তথ্য পাই যে তিনি মানব ও অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত, তাহলে আমাদের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে।
কুয়েত যদি আমাদের তথ্য না দেয় বা না জানায়, তাহলে কি তথ্য পাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই?
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। সেখানে থেকেও তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
একজন সংসদ সদস্য মানব ও অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে দেশের ভাবমূর্তি বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না এবং সেক্ষেত্রে আমাদের আরও দ্রুত কিছু করার সুযোগ আছে কি না?
অবশ্যই দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই বিষয়টিতে আমরা কোনোভাবেই ছাড় দেবো না।
আপনি বলেছিলেন, তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছেন, সংসদ সদস্য হিসেবে নন। এমন কথা দিয়ে আপনি আসলে কী বোঝাতে চাইছেন?
আমাদের তথ্য মতে, তিনি কোনো ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট নিয়ে কুয়েতে যাননি। তিনি যে কুয়েতে ব্যবসা করেন, তা আমাদের রাষ্ট্রদূত জানতেন। আমি বলিনি যে তিনি কুয়েতের নাগরিক।
সাধারণত কোনো সংসদ সদস্য অন্য কোনো দেশে গেলে ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট নিয়ে যান। তিনি তা নেননি। কেন নেননি, তা জানি না।
বাংলাদেশের কোনো সংসদ সদস্য ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট ছাড়া দেশের বাইরে গিয়ে কোনো ভালো বা খারাপ কাজ করলে ‘সংসদ সদস্য’ পরিচয়টিই কি প্রাধান্য পায় না?
সেটাই তো পাওয়া উচিত। একজন সংসদ সদস্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন সম্মানিত মানুষ। তার অনেক বেশি দায়িত্ব রয়েছে। এমন একজন দায়িত্বশীল মানুষ যদি অপকর্মে লিপ্ত হন, তাহলে তা খুবই দুঃখজনক। আপনি জানেন, মানব ও অর্থপাচারের ক্ষেত্রে আমাদের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’। এই ক্ষেত্রে আমরা কোনো রকমের ছাড় দেই না।
‘জিরো টলারেন্স’র কথা বলছেন। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশের আইন এমপি পাপুলের ক্ষেত্রে সেই গতিতে চলছে কি না?
সেটা আইন মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞাসা করেন। আমরা এখানে সম্পৃক্ত কারণ, তিনি প্রবাসে আছেন। বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। তারা বাকিটা দেখবে।
এমপি পাপুল যখন প্রবাসে সমালোচিত, তখন বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা সংকটে আছেন। কুয়েত থেকে আড়াই লাখ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আপনি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেছেন, প্রবাসে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রবাসীদের সংকটের বিষয়ে আপনারা কী করছেন?
এসব বিষয়ে আমরা যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করছি। আশঙ্কার কথা আমরাও শুনেছি। আমাদের অধিকাংশ (প্রায় ৮০ শতাংশ) প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। এজন্য আমরা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মিলে একাধিক কাজ করেছি।
প্রথমত, প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বলেছি, আপদকালীন এই সময়ে কষ্ট করে হলেও সেখানে থেকে যেতে। কারণ, এখন কষ্ট হলেও সামনে সোনালি দিন আসবে। এরপর, আমরা সেসব দেশের সরকারের সঙ্গে আলাপ করেছি। তাদের বলেছি, এই মহামারির সময়ে আপনারা শুধু এতটুকু নিশ্চিত করুন, তারা যেন কেউ না খেয়ে না মরেন। স্বাস্থ্যসেবা ও না খেয়ে যাতে না মরে, সেই ব্যাপারে তারা রাজি হয়েছেন। আর দেশ থেকেও প্রবাসীদের জন্য টাকা-পয়সা ও বিভিন্ন রকম দ্রব্যসামগ্রী পাঠিয়েছি।
কী পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছে?
কয়েক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপর, দূতাবাসগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে সেখানে এগুলো করতে কষ্ট হয়েছে। প্রবাসীরা দেশের বাইরে যখন থাকেন, কোনোদিন তারা মিশনে রেজিস্ট্রি করেন না। যারা বৈধভাবে যান বা যারা অবৈধভাবে যান, তারা কেউই কোনোদিন মিশনকে বলেন না, আমি অমুক, অমুক জায়গায় থাকি, এই আমার ঠিকানা, প্রয়োজনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমাদের মিশনগুলো দিনরাত খেটে যতজনকে পেরেছে তাদের খুঁজে বের করে তাদের হাতে সেগুলো পৌঁছে দিয়েছে।
সারা পৃথিবীতেই এই বিষয়টি আছে যে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা থাকে না। এই যোগাযোগ করাটা কি নাগরিকদের দায়িত্ব নাকি দূতাবাসের?
প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব, সে যে দেশে যাবে সেখানকার মিশনে রেজিস্ট্রি করবে। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকানদের কথা বলতে পারি। আপনি যদি আমেরিকান হন এবং অন্য কোনো দেশে যান, তাহলে সেদেশে কতদিন থাকবেন তা মিশনকে অবহিত করা আপনার দায়িত্ব।
আমেরিকান দূতাবাস তো তার নাগরিকদের দায়িত্ব নেয়। আমাদের দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা আমাদের দেশের শ্রমিকদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেয় না।
অভিযোগ অভিযোগের মতোই আছে। আসলে একটু বেশি বেশিই বলা হয়। আপনি প্রবাসে কোনো মিশনে যান, সেখানে আপনি সম্মান পাবেন। এই অভিযোগ ঠিক না।
যাই হোক, আমরা কী কাজ করেছি সেটাতে ফিরি। আমরা দেশগুলোর সরকারকে বলেছি, শ্রমিকদের যদি ছাড়তেই হয় তাহলে তাদের ছয় মাসের বেতন ও অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধ করে দিবেন। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে অন্য কোনো কাজে তাদের নিয়োজিত করেন। বিশেষ করে, এই মহামারির পরে খাদ্য ঘাটতি হতে পারে। কৃষিক্ষেত্রে আমাদের শ্রমিকদের নিতে পারেন কি না, তা দেখেন।
কোনো কোনো দেশ অন্যভাবে তাদের নিয়োগ দিচ্ছে। তারা আকামা পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এটা তাদের অনেক ভালো উদ্যোগ।
কোন কোন দেশের সঙ্গে আপনারা কথা বলেছেন এবং কোন কোন দেশ রাজি হয়েছে, দেশগুলোর নাম বলবেন?
মোটামুটি মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। এদিকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের প্রবাসী যেসব দেশে বেশি আছেন, মোটামুটি সেসব দেশের সঙ্গেই আলাপ করেছি।
সম্প্রতি ইতালি প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল তারা বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। কারণ, বাংলাদেশ থেকে যারা ইতালিতে ফিরেছেন তাদের অনেকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আমাদের দেশের উড়োজাহাজকে তারা বলছে করোনাভাইরাসবাহী বোমা। এর কারণ কী? আমাদের কি এখনও সতর্কতার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে?
যারা এয়ারপোর্ট দিয়ে পাঠান তাদের জিজ্ঞাসা করেন। এটা নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত। এগুলো খুবই দুঃখজনক। এগুলোর জন্য আমরা এয়ারপোর্টে খবরদারি করি না। আমরা শুধু ওই দেশে উড়োজাহাজ যাওয়ার জন্য ল্যান্ডিং পারমিট সংগ্রহ করার চেষ্টা করি।
কিন্তু, দায়-দায়িত্ব তো আপনাদের ওপর এসে পরে। কারণ, তাদের সঙ্গে কথা তো আপনাদের বলতে হয়।
তবে জেনে খুশি হবেন, সম্প্রতি মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে যে দেশের বাইরে যেতে হলে কেবলমাত্র রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) দেওয়া ‘করোনা নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে। এই সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। সংশ্লিষ্ট আরও মন্ত্রণালয় আছে, তারা নিয়েছে। আমার বিশ্বাস এতে কাজ হবে।
এটা খুব ভালো কথা যে শুধুমাত্র আইইডিসিআরের সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু, বিদেশগামী প্রবাসীর সংখ্যা কয়েক লাখ। আর আইইডিসিআরের পরীক্ষা সক্ষমতা অত্যন্ত কম। সেক্ষেত্রে প্রবাসীরা কী করবেন?
সেগুলো দেখা যাবে, কী করা যায়। কোথাও থেকে তো শুরু করতে হবে। আপনি এক দিনে তো আর সব করতে পারবেন না।
আপনি প্রবাসীদের দূতাবাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা বলছিলেন। ভিয়েতনামে প্রবাসীরা যখন দূতাবাসে এসেছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে দূতাবাস দখলের। তারা কি আসলেই দূতাবাস দখল করতে এসেছিলেন? নাকি দেশে ফেরার দাবি নিয়ে এসেছিলেন?
ভিয়েতনামে যারা দূতাবাসে এসেছেন, তারা ভিজিটর হিসেবে সেদেশে গেছেন। মিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমি তথ্য দিতে পারি। মিশন জানিয়েছে, সেদিন শুক্রবার ঢাকায় একটি ফ্লাইট আসছিল। সেই ফ্লাইটে ১১ জন প্রবাসী ফিরছিলেন। ভিয়েতনামে আমাদের দূতাবাস খুবই ছোট। মাত্র ছয় জন কর্মকর্তা আছেন সেখানে। সেই সময় ২৭ জন প্রবাসী আমাদের মিশনে এসে উপস্থিত হন। তারা বলেন, তারা সেখান থেকে যাবেন না। তারা ভিডিও কনফারেন্স করলেন এবং বললেন তাদের জন্য একটি বিশেষ ফ্লাইট দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের জন্য ফ্লাইটের দাবি জানানো হয়।
তখন আমাদের মিশন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাদের অবস্থা জানায়। মন্ত্রণালয় জানায়, আমাদের আইন হচ্ছে যারা বৈধভাবে প্রবাসী কর্মী হিসেবে যান, তাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা আমরা করি। কিন্তু, যারা অবৈধভাবে যান, তাদের ব্যবস্থা আমরা করি না। এটা বলাতে উপস্থিত প্রবাসীরা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা বলেন, না, আমাদের পাঠাতেই হবে। তারা সেদেশে গিয়েছিলেন ভিজিটর ভিসা নিয়ে। ছয় মাস বা এমন সময় আগে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
তারা কি ভিজিটর হিসেবে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন?
তারা সেখানে গিয়ে কাজ করেছিলেন। শুনেছি সেই কাজ তাদের পছন্দ হয়নি। কাজের জায়গা থেকে পালিয়ে এসেছেন। এর আগে তারা পুলিশের ফাঁড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এতে করে পুলিশ তাদের পেছনে লাগে। তাই তারা মিশনে আশ্রয় নেন।
তারা মিশনে আশ্রয় নিয়ে থাকলে ‘মিশন দখল করে নিয়েছেন’ এমন আলোচনা আসলো কেন? এখানে ভিপি নূরের নামও আলোচনায় এসেছে।
তারা মিশনের লোকজনকে বলেছেন, তারা সেখান থেকে যাবেন না। এরপর তারা ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, আমরা দূতাবাস দখল করব। প্রবাসীদের এরা কোনো সাহায্য করে না, এই করে না, সেই করে না। এরপর তারা বলেছেন, তাদের সঙ্গে প্রবাসী অধিকার পরিষদ কাজ করছে। এর সবই তারাই বলেছেন।
ছাত্রদের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা প্রবাসীদের দিয়ে একটি দূতাবাস দখল করাবেন, এটা কি আপনার কাছে স্বাভাবিক বা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়?
না, বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কিন্তু, এই তথ্যগুলো এসেছে ওখান থেকেই।
আপনি বললেন, প্রবাসীদের জন্য টাকা ও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ইতালি ও জাপানসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ থেকে যে অল্প কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে, সেই টাকা যথাযথভাবে প্রবাসীদের কাছে পৌঁছেনি।
আমাদের দূতাবাসগুলো জানিয়েছে, তারা সেখানকার স্থানীয়দের সাহায্য নিয়েই তালিকা করেছেন।
এই তালিকা তো অনলাইনে থাকার কথা বা প্রকাশ করার কথা যে কাকে কত টাকা দেওয়া হলো বা কতজনকে দেওয়া হলো?
সেটা আমি জানি না। সেটা আমাদের মিশনগুলোকে জিজ্ঞাসা করে নেন, তারা এগুলো অনলাইনে দেবেন কবে। আমার মনে হয় না এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, তাদের কাছে এই তালিকা থাকতে পারে।
শেনজেন ভিসা আমরা আপাতত ব্যবহার করতে পারব না। ইতালিতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ফ্লাইট বন্ধ। পর্যায়ক্রমে পৃথিবী কি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে?
১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র ৪৪টির মতো দেশ শেনজেন ভিসার আওতায় এসেছে। বাকি দেশগুলোর জন্য তারা অনুমতি দেয়নি। তারা বলছে, এটা একটা স্বল্পকালীন উদ্যোগ। শেনজেনভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আর অল্প কয়েকটি দেশ এই অনুমতি পেয়েছে। এই তালিকা আপডেট করা হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছে। আমাদের যেমন অনুমতি দেয়নি, তেমনি আশেপাশের দেশগুলোকেও দেওয়া হয়নি। আর এই মহামারির মধ্যে আমাদের বহু মানুষ সেখানে বেড়াতে যাবেন, তা আমার মনে হয় না। আমাদের দেশের সংক্রমণ যদি কমে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আমাদের অনুমতি দেবে। বাংলাদেশ শেনজেন ভিসার আওতায় নেই বলে তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি।
ইতালিতে যে ঘটনাটি ঘটছে, তাতে আমরা আরও বেশি বিপদে পড়ে গেলাম কি না?
বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে। এজন্য যারা যাচ্ছেন তাদেরও কিছু দায়-দায়িত্ব আছে। তারাও নিশ্চিত হয়ে যেতে পারেন যে করোনা নেগেটিভ আছেন কি না। আর যারা তাদের পাঠাচ্ছেন, তাদেরও একটা দায়-দায়িত্ব আছে। আর এসব কারণে আমরা একটা অসুবিধার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।
ইতালির ঘটনাই শুধু না, এর আগে জাপান সরকার তাদের তত্ত্বাবধানে জাপানে নেওয়া কয়েকজনের মধ্যে চার জনের করোনা ধরা পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াতে পাঠানো শ্রমিকদের পরপর তিনটি ফ্লাইটে করোনা রোগী ধরা পড়েছে। এগুলো দুঃখজনক। যারা গেলেন, তাদেরও কি কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? এই নিষিদ্ধ অবস্থায় তারা যাচ্ছেন কেন? তাদেরও তো শাস্তি হওয়া উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশের বাইরে কথা আপনাকেই বলতে হয়। কিন্তু, সব বিষয়ের দায়িত্ব আপনার হাতে নেই। সেক্ষেত্রে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে কি না?
আমরা একাধিক সমন্বয় মিটিং করেছি। আটটি আন্তমন্ত্রণালয় মিটিং করেছি। সেখানে এই বিষয় বারবার আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য দেশে ‘করোনার সংক্রমণ নেই’ এমন সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতা এখনও করেনি। তাই আমরা এখনই করব কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের ধারণা, আগামীতে হয়তো এটা হতে পারে। তাই সেভাবেই আমরা এগোব।
Comments