লাইসেন্স ছাড়াই চলছে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দেশের ১৫ হাজারেরও বেশি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই চলছে বৈধ লাইসেন্স ছাড়া। ২০১৮ সাল থেকে বৈধ লাইসেন্স না থাকলেও, তেমন কোনো ঝামেলা তাদের পোহাতে হয়নি।

এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নোটিশ ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া ছাড়া এগুলোর বিরুদ্ধে আর কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক আমিনুল হাসান বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজড করার কার্যক্রম শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যে কারণে তখন থেকেই লাইসেন্স নবায়ন ধীর গতিতে হচ্ছে।’

গতকাল তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রায় ১৫ হাজার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে পাঁচ হাজারের যথাযথ লাইসেন্স রয়েছে...। তারা (বাকিরা) লাইসেন্স নবায়ন করতে আসেনি।’

প্রতি বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

‘বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পারে না বলে তারা লাইসেন্স নবায়ন করতে পারে না’, বলেন তিনি।

যখন এসব অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি।

দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২’র অধীনে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিচালিত হয়।

‘এই আইন অনুযায়ী, এসব বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা ছাড়া আমরা আর কিছু করতে পারি না। যাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি, তারা অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে’, যোগ করেন আমিনুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত তাদের নোটিশ দিই এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকি।’

এক্ষেত্রে জনবলের ঘাটতিও একটি বড় কারণ বলে জানান আমিনুল হাসান। ঢাকার প্রায় পাঁচ হাজার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের বিষয়টি দেখার জন্য মাত্র তিন জন কর্মকর্তা রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

২০১৪ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি জানা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালটির সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়টি গত সপ্তাহে জনসম্মুখে আসে। এরপর থেকেই লাইসেন্স নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

গত ৭ জুলাই র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় অভিযান চালায় এবং করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ উদ্ধার করে। তখন জানা গেছে, রোগীদের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই হাসপাতালটি তাদেরকে রিপোর্ট দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বে-নজির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অনিয়মের যে স্তূপ, সেটির অগ্রভাগে রয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল।’

‘এই সেক্টর সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা “বাকেট টেস্টে”র সঙ্গে পরিচিত। এর মানে হলো— নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং সেগুলো একটি বাকেটে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর যথেচ্ছভাবে পরীক্ষার ফল দেওয়া হবে’, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘এটি কমন প্র্যাকটিস…। এই কারণে রোগীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভুল চিকিৎসা পায়। ভুক্তভোগীদের জন্য এর পরিণতি দুঃসহ।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্যই তার দায় এড়াতে পারে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে, এর জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ ও বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে, শুধু সরঞ্জাম কেনাই তাদের কাজ নয়।’

‘চিকিৎসার নামে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যে দুর্নীতি করছে, তার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও দায়বদ্ধ হতে হবে। এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে’, বলেন তিনি।

বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘লাইসেন্সের প্রক্রিয়াটি বিকেন্দ্রীভূত করে এটি কঠোর পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে। উদাহরণস্বরূপ: উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের কাজ করবেন। তেমনি জেলা পর্যায়ে একইভাবে কাজ করবেন সিভিল সার্জনরা।’

যোগাযোগ করলে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া। কিন্তু, লাইসেন্স না থাকা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

3h ago