আবারও বন্যার কবলে তিস্তাপাড়ের মানুষ, ১১০ গ্রাম প্লাবিত

একটি বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবার বন্যার কবলে পড়েছেন লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ। বাড়িতে উঠে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর মেরামত করতে না করতে আবারও তাদের বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, ফসলের খেত। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে জেলার প্রায় ২১টি ইউনিয়নের ১১০টি গ্রামে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদে আশ্রয়ে যাচ্ছে বন্যাদুর্গত একটি পরিবার। ছবি: এস দিলীপ রায়

একটি বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবার বন্যার কবলে পড়েছেন লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ। বাড়িতে উঠে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর মেরামত করতে না করতে আবারও তাদের বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, ফসলের খেত। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে জেলার প্রায় ২১টি ইউনিয়নের ১১০টি গ্রামে।

আজ শনিবার সকাল ৬ টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজের দোয়ানি পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনবরত বৃষ্টিপাত ও উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজানের পানির চাপে খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট।

বৃষ্টি ও উজানের পানিতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতে পানি প্রবাহ কিছুটা কমে তা বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত আজ শনিবার সকাল থেকে।’

বৃষ্টিপাত ও উজানের পানি অব্যাহত থাকায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক চর ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল।’

বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে জেলার প্রায় ২১টি ইউনিয়নের ১১০টি গ্রামে। দ্বিতীয়দফা বন্যার কবলে পড়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষ। অনেকে পানিবন্দী অবস্থায় বাড়িতে থাকলেও দুর্গম চরাঞ্চল থেকে লোকজন গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন নিরাপদ স্থানে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নতীর চর খুনিয়াগাছের বানভাসি জোবেদা বেওয়া (৬৩) বলেন, ‘যেহেতু নদীর পানি বাড়ি-ঘরে উঠেছে তাই আজ শনিবার সকালে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নৌকায় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছি। আমার ছেলে ও পরিবারের অন্যান্যরা শুক্রবার রাতেই সরকারি রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়েছে।’

প্রথম দফা বন্যার দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরও একটি বন্যায় তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড় কালমাটি এলাকার মাজেদা বেগম (২৬) বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বাড়ি-ঘরে উঠেছে আর তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। তাই চমর বিপদের মধ্যে আছি। বন্যার পানির কারণে ঘরে থাকতে পারছি না এবং চলাফেরাও করতে পারছি না। পরিবারের লোকজন গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে রাস্তায় চলে গেছেন। পানি নেমে গেলে আবার বাড়িতে ফিরবেন।’

আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর চর গোবর্ধান এলাকার কৃষক ফজলার রহমান (৫৫) জানান, একটি বন্যায় ক্ষতির ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আর একটি বন্যার ধকলে পড়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিস্তা ও ধরলাপাড়ের মানুষ। বিশেষ করে চরের কৃষকরা হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রথম দফা বন্যায় ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছিল আর যেটুকু বাকি ছিল সেটি দ্বিতীয়দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ  ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ এলাকায় নদীর পানি ঢুকে পড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বাড়লে ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। তাদের অনেকে চলে এসেছেন সরকারি রাস্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের উপর। নৌকা দিয়ে দুর্গম চরাঞ্চলে পানিবন্দী লোকজনকে নিরাপদে নিয়ে আসা হচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago