পাহাড়ে আনারসের চিপস
অপার সম্ভাবনাময় রাঙামাটির পাহাড়। আনারস চাষের জন্য রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা বিখ্যাত। এখানে উঁচু-নিচু পাহাড়ে চাষ হয় নানা জাতের আনারস। তার মধ্যে আছে পাহাড়ের বিখ্যাত হানিকুইন জাতের আনারস। এ আনারস দেখতে যেমন সুন্দর, তেমন সুস্বাদু খেতেও। এবার এই আনারস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি হচ্ছে চিপস।
জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ফল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র থেকে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আনারস থেকে চিপস তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পটি সফল হলে তা সারাদেশে বাজারজাত করা হবে।
গত সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানিয়ারচরের ডাক বাংলো এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টারের ফল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের ভিতরে চিপস তৈরির কারখানায় কয়েকজন প্রশিক্ষিত কর্মী কাজ করছেন।
জেলার কৃষকরা জানান, জেলায় প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ আনারসের চাষ হয়। এ আনারস জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। কিন্তু তারপরও অনেকসময় এ আনারস স্থানীয় বাজারে অবিক্রিত থেকে যায় এবং পচে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। তাই তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, আনারস প্রক্রিয়াজাত করে চিপস ও জুস বানিয়ে বিক্রি করা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছর জেলায় দুই হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয় এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন।
এরমধ্যে শুধু নানিয়ারচর উপজেলাতেই এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়। তাই নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যোগে কৃষকদের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে এ উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে।
নানিয়ারচর বুড়িঘাট এলাকার আনারস চাষি সুশান্ত চাকমা বলেন, ‘আমাদের জেলায় একটি আনারসের চিপস তৈরির কারখানা হয়েছে। এটি আমাদের মত চাষিদের জন্য ভালো খবর। আশা করি এ চিপস তৈরির জন্য আমাদের বাগান থেকে আনারস কিনবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে কৃষকরা যাতে আনারসের ন্যায্য দাম পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ আনারস উৎপাদন হয়। কিন্তু চাষিরা এ আনারসের ন্যায্যমূল্য পায় না। আর ঠিক সময়ে বিক্রি না হওয়ায় অনেক আনারস পচে যায়। তাই এ আনারসকে প্রক্রিয়াজাত করে কিভাবে সারা বছর রেখে বিক্রি করা যায় এবং কৃষকরা লাভবান হতে পারে সে উদ্দেশ্য নিয়ে এ চিপস কারখানাটি পরীক্ষামূলকভাবে খোলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি এ চিপসে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে না। সম্পূর্ণ বাগান থেকে বাছাই করা আনারস থেকে তৈরি করা হচ্ছে এই চিপস।’
‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘নানিয়ারচরে পরীক্ষামূলক এবং প্রদর্শনী হিসেবে আনারসের চিপস তৈরির কারখানাটি খোলা হয়েছে। এই এলাকায় যেহেতু আনারসের ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে, সেজন্য এখানে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও যেন এমন চিপস কারখানা খুলতে পারে এজন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আপাতত এখানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে না।’
Comments