সাগরে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে শাহাবুদ্দিনের ‘ওয়াটারক্রাফট’

টয়োটা গাড়ির ইঞ্জিন ব্যবহার করে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার শাহাবুদ্দিন তৈরি করছেন একটি ‘ওয়াটারক্রাফট’। এটি সাগরে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে বলে জানালেন তিনি।
Watercraft
কুতুবদিয়ায় শাহাবুদ্দিনের ‘ওয়াটারক্রাফট’। ছবি: স্টার

টয়োটা গাড়ির ইঞ্জিন ব্যবহার করে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার শাহাবুদ্দিন তৈরি করছেন একটি ‘ওয়াটারক্রাফট’। এটি সাগরে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে বলে জানালেন তিনি।

সৌদিফেরত শাহাবুদ্দিন সম্প্রতি মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশে ভালোমানের পাখা না পাওয়ায় ক্রাফটির গতি কমানো হয়েছে। এখন এর গতি হবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। তবে আমি ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চালাবো।’

‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় চলার মতো সব ব্যবস্থা এখানে থাকবে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে এমন কিছু ব্যবস্থা থাকবে যার ফলে উত্তাল ঢেউ ক্রাফটির কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’

শাহাবুদ্দিন সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ২০০৩ সালে। সেখানে তিনি গাড়ির ইঞ্জিন মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। পরে সেখানে নিজেই একটি ওয়ার্কশপ দিয়েছিলেন। তিনি দেশে ফিরে আসেন গত বছর জুলাইয়ে। কুতুবদিয়ায় দেন ট্রলার ও গাড়ি মেরামত করার ওয়ার্কশপ।

‘কিন্তু, ভালো কাজের লোক না পাওয়ায় তা বন্ধ করে দিই। এরপর, নিজের মন মতো কিছু একটা করার চিন্তা করি। তখনই “ওয়াটারক্রাফট” বানানোর পরিকল্পনা করি। আমি পাঁচ বছর আগেও এটা বানানোর চিন্তা করেছিলাম,’ বলেন শাহাবুদ্দিন।

শাহাবুদ্দিন পড়ালেখা করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর মেকানিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বলেন, ‘প্র্যাকটিক্যাল কাজ করলে বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া মাথায় আসে। সেই ভাবনা থেকেই এই ক্রাফট বানানো শুরু করি।’

সৌদি আরবে গাড়ি মেরামতের কাজ করার পর শাহাবুদ্দিন এক লেবাননী এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারের অধীনে দুই বছর এয়ারক্রাফটের যন্ত্রাংশ নিয়ে কাজ করেছিলেন। কিন্তু, বেতন কম ছিল বলে তা বেশি দিন করেননি।

‘তখন বারবার মনে হয়েছিল আমাকে “এরকম” কিছু একটা করতে হবে। বিদেশ থেকে আমার ফিরে আসার কারণও ছিল এটা,’ শাহবুদ্দিন বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সৌদিতে যখন এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতাম তখন অধিকাংশ সময়ই উড়োজাহাজে যেতাম। উড়োজাহাজ নিয়ে আমার অনেক আগ্রহ। ছোট-ছোট জিনিস দিয়ে কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করতাম। এক সময় ভাবলাম, এটা সফলতার সঙ্গেই করতে হবে।’

শাহাবুদ্দিনের এই ওয়াটারক্রাফট পানির ওপর দিয়ে চলবে। বলেন, ‘ওড়ার অংশটা আপাতত বন্ধ রেখেছি। প্রথমে ওড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, ওড়ানোর জন্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন ও শক্তিশালী পাখা প্রয়োজন। সেগুলো এখানে পাচ্ছিলাম না।’

তিনি জানান, এই ক্রাফটি স্পিডবোডের মতো চলবে। তবে প্লেনের মতো দুইপাশে পাখা থাকবে। পাখা দুটি বাতাসের সাহায্যে চলবে। এর প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহার করা হবে ডিজেল।

‘আমি এখনো এই ক্রাফটটির কোনো নাম দিই নাই। স্থানীয়রা “ওয়াটার হেলিকপ্টার” নাম দিয়েছেন। যেদিন এটা উদ্বোধন করবো সেদিন এলাকাবাসীর পছন্দ মতো নাম দেওয়া হবে,’ যোগ করেন তিনি।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার মুঠোফোনে কথা হয় শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি ডেইলি স্টারকে বললেন, ‘বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এখনো প্রায় ২০ ভাগ কাজ বাকি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তা শেষ করা যাবে।’

কোরবানি ঈদের পর সরকারি অনুমতি নিয়ে সাগরে চলাচলের আশা করছেন তিনি।

Comments