অসম্পূর্ণ সেতু, দুর্ভোগে কুড়িগ্রামের চার ইউনিয়নের মানুষ

দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণাধীন অসম্পূর্ণ সেতুর পাশে দিয়ে যাত্রীরা পার হচ্ছেন নৌকায়। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কে পাঁচগাছি ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্মাণাধীন একটি সেতু অসম্পূর্ণ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চার ইউনিয়নের লাখো মানুষ।

জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে তাদেরকে নির্মাণাধীন ওই সেতু এলাকায় নৌকা দিয়ে পাড়ি দিতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত সময়। যাতায়াত করতে পারছে না পণ্যবাহী গাড়ি।

পাঁচ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে নয় মিটার দৈর্ঘ্য ও সাত দশমিক তিন মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে কাজ দেওয়া হয় স্থানীয় ঠিকাদার গোলাম রব্বানীকে। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ শেষ করার সময়সীমা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে মাত্র ৩৮ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ। বাকী কাজ না করে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়েছে অসম্পূর্ণ সেতুটি। কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এলজিইডি কর্তৃপক্ষও।

শুলকুর বাজার এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন (৬২) বলেন, ‘সেতুর কাজ বাকী থাকায় আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রত্যেকবার নৌকায় উঠলে ভাড়া দিতে হচ্ছে ১০ টাকা। মোটরসাইকেলের জন্য দিতে হয় ১০ টাকা আর বাইসাইকেলের জন্য দিতে হয় পাঁচ টাকা। দিনের বেলা নৌকা পাওয়া গেলেও রাতে পাওয়া যায় না। তাই রাতের বেলা আমাদের থাকতে হয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।’

একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান (৫৬) বলেন, ‘২০১৭ সালের জুলাই মাসের ভয়াবহ বন্যায় ধরলা নদীর পানির তোড়ে রাস্তা ধ্বসে গিয়ে খালের সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সেখানে সেতু তৈরির কাজ শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি। ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সেতুর কাজ সময়মত শেষ হয়নি। আর তাই দুর্ভোগ বেড়েছে স্থানীয়দের।’

যাত্রাপুর এলাকার ব্যবসায়ি শামসুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রাপুর হাট হলো কুড়িগ্রাম জেলার একটা বড় হাট। কিন্তু সেতুর এই অবস্থা থাকার কারণে হাটের অবস্থাও করুন হয়ে গেছে। পণ্যবাহী গাড়ি আনা-নেওয়া করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা এই হাটে কম আসছেন। ফলে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অসম্পূর্ণ সেতুর কারণে আমরা সময়মতো জেলা শহরেও যাতায়াত করতে পারছি না।’

নৌকার মাঝি আতিয়ার রহমান (৪৪) বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। বেশি পাড় হন মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও রিক্সা দিয়ে। এখানে মোট ১৫টির মতো নৌকা চলে। প্রত্যেক মাঝি প্রতিদিন ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করেন।’

পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে যাত্রাপুর, পাঁছগাছি, ঘোগাদহ ও ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মানুষ কুড়িগ্রাম জেলা শহরে যাতায়াত করেন। সেতুটি অসম্পূর্ণ থাকায় বর্ষা আসলে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মিটিংয়ে কয়েকবার আলোচনা করেছি। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছেও গিয়েছি কয়েকবার। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’

সেতুর কাজ ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে দাবি করে ঠিকাদার গোলাম রব্বানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজটি অসম্পূর্ণ রয়েছে। ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে সেতুর কাজ সম্পূর্ণ করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।’

কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঠিকাদারের অবহেলার কারণে সেতুর কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। ঠিকাদারকে বার বার তাগিদ দিয়েও কোনো ফল হয়নি। সেতুর নির্মাণ কাজ যেন আগামী বছর বর্ষার আগে সম্পূর্ণ হয় এবং চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা যায় সেজন্য ঠিকাদারকে চূড়ান্ত তাগিদ দেওয়া হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English
future of bangladesh after banning awami league

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

17h ago