লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি, কুড়িগ্রামে অপরিবর্তিত

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের কয়েকজন বানভাসী। ১৪ জুলাই, ২০২০। ছবি: স্টার

নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অপরিবর্তিত রয়েছে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি। তবে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতির।

এমন পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসিদের মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

বেসরকারিভাবে ও ব্যক্তিগত উদ্দ্যেগে বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণের কোনো কার্যক্রম তেমনভাবে চোখে পড়েনি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড ডেইলি স্টারকে জানায়, উজানের পানি না আসায় আজ বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বৃষ্টিপাত ও উজানের পানি না আসলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি কমে যাবে।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের বানভাসি মেছের আলী (৫৬) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিকল্প বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমাদের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামের মধ্য দিয়ে ধরলা নদীর একটি শাখা প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিরাপদে চলে যাচ্ছি।’

সরকারি রাস্তা ও বাঁধের ওপর অস্থায়ী আশ্রয় নিতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সারডোব গ্রামের বানভাসি ছামেলা বেওয়া (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় আকস্মিকভাবে ধরলা নদীর পানি বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়েছে। সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।’

পানির স্রোত তীব্র হওয়ায় তিনি গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাহেনুর ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গেল দুই দিন ধরে সারডোব গ্রামের মানুষজন ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে যাচ্ছেন।’

তিনি জানান, বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নৌকা দিয়ে বানভাসিদের সহায়তা করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চর অস্টমীর বানভাসি জহুরা বেওয়া (৬৫) অভিযোগ করে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরাচরের মধ্যে বানভাসি হয়ে পড়ে আছি। কিন্তু কোনো সরকারি সহায়তা পাই নাই।’

আরও বলেন, ‘গত বছরগুলোতে বন্যার সময় বেসরকারিভাবে, ব্যক্তি উদ্যোগে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর কিছুই পাই নাই।’

রান্নার অভাবে শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন বলেও আক্ষেপ করেন তিনি। জানান, বাড়ির নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। বাধ্য হয়েই বানের পানির নিচে তলিয়ে থাকা নলকূপের পানি পান করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার ও ত্রাণ সহায়তা মজুদ আছে। সেগুলো পানিবন্দি মানুষের মধ্যে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।’

জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday ordered the authorities concerned to complete, by December, the preparations for the upcoming national election.

4h ago