স্বাধীনতার আগে আমিই প্রথম সংশপ্তকের নাট্যরূপ দিয়েছিলাম: মামুনুর রশীদ

স্বাধীনতার পর পর যে কজন নাট্যপ্রেমী থিয়েটারকে ভালোবেসে নাটকের দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং থিয়েটার নিয়ে পথচলা শুরু করেন, মামুনুর রশীদ তাদের অন্যতম।
mamunur rashid
নাট্যকার-অভিনেতা মামুনুর রশীদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোরশেদ

স্বাধীনতার পর পর যে কজন নাট্যপ্রেমী থিয়েটারকে ভালোবেসে নাটকের দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং থিয়েটার নিয়ে পথচলা শুরু করেন, মামুনুর রশীদ তাদের অন্যতম।

দেশের প্রধান নাটকের দলগুলোর একটি আরণ্যক নাট্যদল, প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এখনো মঞ্চ ছাড়েননি। তার হাত দিয়ে ওঠে এসেছে বেশ কিছু আলোচিত মঞ্চ নাটক। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সেসব নাটক প্রশংসিত হয়েছে নানা দেশে।

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক চেয়ারম্যান তিনি। পেয়েছেন একুশে পদক। দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া তার সাম্প্রতিক সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো।

করোনাকালে আপনার সময় কাটছে কি করে?

মামুনুর রশীদ: সিনেমা দেখে, বই পড়ে ও লেখালেখি করে। প্রচুর সিনেমা দেখছি। আমি আবার ভাগ ভাগ করে সিনেমা দেখি। কয়েকদিন দেখলাম ইতালিয়ান সিনেমা। কিছুদিন দেখলাম রাশিয়ান সিনেমা। নির্বাক যুগের সিনেমাও দেখছি। নানান দেশের ক্লাসিক ছবি বেশি টানছে এই সময়ে। ম্যাকসিম গোর্কির “মাদার” সিনেমাটি সবশেষ দেখলাম। দুর্দান্ত। সব শেষ পড়লাম মৃণাল সেনের বায়োগ্রাফি। তিনটি পত্রিকার জন্য কলাম লিখছি নিয়মিত। সমকাল, প্রথম আলো ও দেশ রূপান্তর।

করোনায় থিয়েটারের কতোটা ক্ষতি হলো?

মামুনুর রশীদ: করোনাকালে থিয়েটারের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা হয়ে গেল। সিনেমা হল হয়ত খুলে যাবে। টেলিভিশন নাটক যারা করেন তারা হয়ত কম-বেশি শুটিং করবেন। কিন্তু, থিয়েটার সহজে খুলবে না। আমরা দর্শক হারালাম। করোনা চলে গেলে হয়ত দর্শক আসবে। কিন্তু, সেটা কবে? কেউ জানি না। থিয়েটারের শিল্পীদের তো কোনো টাকা আসে না। ভালোবেসে কাজ করে তারা। ভারতসহ অনেক দেশে থিয়েটার শিল্পীরা সরকার থেকে যা বেতন পান তা দিয়ে তাদের সংসার চলে যায়। এখানে সেটা নেই। বহু বছর ধরে এটা আমরা সরকারের কাছে চেয়ে আসছি, কিন্তু পাইনি। কাজেই থিয়েটারের ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি হলো।

এমন পরিস্থিতিতে শিল্পীদের ভবিষ্যৎ কী?

মামুনুর রশীদ: একদিক থেকে নাট্যশিল্পীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এমনিতেই নাটক বিক্রি করে টাকা আসছিল না সবার। দুই-চার জন তারকা আছেন ভালো টাকা পান। সবাই না। অনেক অভিনয় শিল্পী আছেন মাসে ১০ দিন কাজ করে সংসার চালাতেন। তারা এখন বেকার। পেছনে কাজ করা বহু লোক বেকার। তাদের ভবিষ্যৎ কে দেখবে? সরকার কিছু সাহায্য করছেন। আর কতদিন? অথচ সব গণআন্দোলনে শিল্পীরা সবার আগে এগিয়ে আসেন। দেশের সব ক্রাইসিসে শিল্পীরা সবার আগে এগিয়ে আসেন। তারা কীভাবে বাঁচবেন কেউ জানে না।

আপনারা তাদের জন্য কি করলেন?

মামুনুর রশীদ: আমরা অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অবশ্যই করেছি যার যার সাধ্যমত। এ ছাড়া আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে সেটা। সরকার কিছু বরাদ্দ দিয়েছেও।

দেখুন, কিছু শিল্পী আছেন, লজ্জায় সাহায্য চাইতেও পারেন না। তাদেরকে গোপনে আমরা সাহায্য করেছি। সব শিল্পী তো ধনী নন। অল্প কজন শিল্পী হয়ত ধনী। এদেশে যাদের কাছে অনেক টাকা তারা তো এ সব নিয়ে কখনো ভাবেন না। শিল্পীরা কি নীল আকাশ আর বাতাস খেয়ে থাকবে? আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করেছি এবং আরও করব।

আপনি দুই বার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, এই সংগঠন কি শিল্পীদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে?

মামুনুর রশীদ: ফেডারেশন থেকে খুব বেশি কিছু করার বিষয়টি আমার চোখে পড়েনি। ফেডারেশন যেটা করছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কিছু করার চেষ্টা করছে। শিল্পকলার যিনি ডিজি তিনিই তো ফেডারেশনের চেয়ারম্যান।

এখন যেসব কাজ হচ্ছে টিভি, থিয়েটার ও ওয়েবে; কাদের কাজ ভালো লাগে? এখনকার কাজ দেখেন কি?

মামুনুর রশীদ: দেখি। কম-বেশি সবার কাজই দেখি। কারো নাম বলতে চাই না। কারো কারো কাজ দেখে প্রচণ্ড হতাশ হই। কারো কাজ দেখে আশান্বিত হই। কেউ কেউ আছেন টেকনিক্যাল বিষয়টি বোঝেন না। কেউ কেউ আছেন অভিনয়ও বোঝেন না। তারপরও কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ খুবই ভালো করছেন। এতে করে যারা ভালো অভিনয় করেন তারাও গড়পড়তা অভিনয় করে যাচ্ছেন। তাদের বিষয় একটাই টাকা। কাজ করবেন টাকা পাবেন।

আপনার অভিনীত ‘সংশপ্তক’ নাটকটি বিটিভিতে নতুন করে প্রচারিত হচ্ছে, এ বিষয়ে যদি কিছু বলেন?

মামুনুর রশীদ: স্বাধীনতার আগে আমিই প্রথম ‘সংশপ্তক’-এর নাট্যরূপ দিয়েছিলাম। আবদুল্লাহ আল মামুন আমাকে নাট্যরূপ দিতে বলেন। তখন আমার বয়স ছিল ২২ বছর। বহুদিন আমি শহীদুল্লাহ কায়সারের পুরনো ঢাকার বাড়িতে গিয়েছি। তার সঙ্গে কথা বলেছি। বেশিরভাগ সময় আমাকে গাড়িতে করে সংবাদ অফিসে নিয়ে আসতেন। অসম্ভব ব্যস্ত মানুষ ছিলেন তিনি। তার মধ্যে যতটা পারতাম তাকে নাটক লিখে শোনাতাম।

আবার বহু বছর পর এটি নতুন করে নাট্যরূপ দেওয়া হলে আবদুল্লাহ আল মামুন আমাকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। আমি নিজে থেকে বলি সেকান্দার মাস্টার চরিত্রটি করতে চাই। এই রকম কাজ টেলিভিশনে সহজে আর হবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Driest April in 43 years

Average rainfall in Bangladesh was one millimetre in April, which is the record lowest in the country since 1981

12h ago