খুলনায় গ্রামবাসীর ওপর গুলিতে নিহত ৩, গ্রামবাসীর পিটুনিতে নিহত ১
খুলনা নগরীর আটরা-গিলাতলা ইস্টার্ণ গেট এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে তিন জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত সাত জন। গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর গ্রামবাসীর হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
আটরা-গিলাতলার মশিয়ালী এলাকার মৃত মো. বারিক শেখের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৪৫) ও একই এলাকার মো. ইউনুস আলীর ছেলে গোলাম রসুল (৩০) গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। মো. সাইদুল শেখের ছেলে মো. সাইফুল ইসলামকে (২৭) রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেকে) নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর উত্তেজিত গ্রামবাসীর পিটুনিতে আহত জিহাদ হোসেন (৩৮) নামে একজন খুমেকে মারা যান।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- খানজাহান আলী থানাম গ্রামের মৃত শফিউল্লাহ শেখের ছেলে আফসার শেখ (৬৫), রজব আলী শেখের ছেলে ইব্রাহিম শেখ (২৬), নজরুল শেখের ছেলে জুয়েল শেখ (৩৫), মৃত আলকাস শেখের ছেলে রানা শেখ (২২), আফসার শেখের ছেলে রবি শেখ (৪০), আকরাম শেখের ছেলে শামীম শেখ (২৫) ও মো. সাইদুল শেখের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (২৭)।
তাদের প্রথমে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে খুমেকে ভর্তি করা হয়।
পরে গ্রামবাসী মশিয়ালী গ্রামের হাসান আলী শেখের পুত্র জাকারিয়া, জাফরিন ও মিল্টনের বসতবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১১টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। রাত ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।
ইতোমধ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাকারিয়াকে থানা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত নারী পুরুষ এলাকা ঘিরে রেখেছেন। পুলিশ এবং সংবাদকর্মীদের তারা এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছেন না। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে এলাকায় প্রবেশ করেন।
ঘটনাস্থল থেকে আটরা-গিলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এলাকায় এই তিন ভাই খুব প্রভাবশালী। তারা নানা অপকর্ম করে স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তায়। এ পর্যন্ত তাদের কেউ কিছু করতে পারেনি। থানায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে যশোরের অভয়নগর থেকে জাফরিনের সহযোগী জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়েছে। অন্যদেরকে আটকের জন্য কয়েকটি টিম কাজ করছে।’
হামলার ঘটনায় নাম উঠে আসা জাকারিয়া খান জাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক এবং জাফরিন মহানগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে।
নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে গুলি রেখে মজিবার শেখ নামের একজনকে খানজাহান আলী থানা পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় প্রতিপক্ষরা। ওই ঘটনার জের ধরে সোয়া ৮টার দিকে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় মৃত হাসান প্রফেসরের ছেলে জাফর শেখ, জাকারিয়া শেখ ও মিল্টন শেখের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের অস্ত্রধারীরা গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন।
স্বজনদের আরও অভিযোগ, মশিয়ালী আলিয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক মো. জাকারিয়া সভাপতি পদে পরাজিত হন। এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয়দের সঙ্গে তার বিরোধের সূত্রপাত হয়। ঘটনাস্থলে তিনি ও তার ছোট ভাই জাফরীন এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন।
নিহত নজরুল ইসলামের আত্মীয় মো. তাসাদ্বর আলী বলেন, ‘জাকারিয়া সভাপতি নির্বাচনে হেরে গিয়ে আমার খালু (নজরুল) ও এলাকার কয়েকজনকে জীবনে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সেটাই পূরণ করল ঘাতকরা।’
এর আগে, মশিয়ালী গ্রামের যুবক মিটুলের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাফরিন ও তার ভাই জাকারিয়ার সংঘর্ষ হয়।
Comments