পুলিশ-চিকিৎসকরাই করোনাকালের আসল তারকা: ফেরদৌসী মজুমদার
ফেরদৌসী মজুমদার বাংলাদেশের একজন গুণী অভিনয় শিল্পী। মঞ্চের অন্যতম সফল অভিনেত্রী তিনি। এখনো মঞ্চ নাটক ধরে রেখেছেন। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেরও একজন সফলতম শিল্পী বটে। বহু বছর ধরে অভিনয় শিল্পের সঙ্গে তার পথচলা। অভিনয় তার ধ্যানে ও জ্ঞানে। অভিনয় করে পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার। তার অভিনয় জীবনের সেরা একটি কাজ ‘সংশপ্তক’ নাটকের হুরমতি চরিত্র। অনেক বছর পর এই নাটকটি আবারও বিটিভিতে প্রচার হচ্ছে। ফেরদৌসী মজুমদার কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
বিটিভির আলোচিত নাটক সংশপ্তক আবারও প্রচার শুরু করেছে, সে বিষয়ে যদি বলেন?
ফেরদৌসী মজুমদার: সংশপ্তক শহীদুল্লাহ কায়সারের একটি কালজয়ী উপন্যাস। সেখান থেকে নাটক হয়েছিল। বিটিভির জনপ্রিয় ও আলোচিত নাটকগুলোর মধ্যে একটি এটি। নতুন করে প্রচার হচ্ছে জেনে ভালো লাগছে। আমি নিজেও এতবছর পর আবারও দেখছি। আমার মেয়ে ত্রপা বলে, ‘আগের স্ক্রিপ্ট কত ভালো ছিল’। আমিও সেটাই বলি, আগের স্ক্রিপ্ট, পরিচালনা ও অভিনয় কত ভালো ছিল। কত যত্ন নিয়ে কাজ হতো। এই নাটকটির শুটিংয়ের আগে কতবার আমরা রিহার্সাল করেছি। কত সময় দিয়েছি। কত শ্রম দিয়েছি। খেটেছি অনেক চরিত্রর জন্য। বিশাল টিমওয়ার্ক ছিল। তখন পুরো স্ক্রিপ্ট হাতে দেওয়া হতো। দুটি দৃশ্যে কেউ থাকলেও তাকে পুরো স্ক্রিপ্ট দেওয়া হতো। এজন্যই কাজ এত ভালো হতো। এ ছাড়া, প্রযোজক আবদুল্লাহ আল মামুন অনেক যত্ন নিয়ে কাজটি করতেন।
এই নাটকের হুরমতি চরিত্রটি তো একটি ইতিহাস হয়ে আছে বলা চলে?
ফেরদৌসী মজুমদার: তা তো অবশ্যই। তখন আমাকে সবাই হুরমতি নামে ডাকতেন। এখনো অনেকে আমাকে হুরমতি হিসেবেই চেনেন ও জানেন। এটা তো বিশাল প্রাপ্তি। একটি নাটকের চরিত্র কত বছর ধরে মানুষের মনে গেঁথে আছে। একটি নাটক কত মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। বিটিভির নাটকের ইতিহাসে যে কয়টি চরিত্র আলোচিত ও ইতিহাস হয়ে আছে, তার মধ্যে হুরমতি চরিত্রটি অন্যতম একটি।
করোনাকাল চলছে। এই সময়ে এসে আপনি কতটা আশাবাদী?
ফেরদৌসী মজুমদার: কোনোকিছুই চিরদিন থাকে না। এখন অন্ধকার আছে। এই অন্ধকার সারাজীবন থাকবে না। থাকতে পারেও না। আলো আসবেই। আলো আসতেই হবে। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। সাময়িক কষ্ট সবারই হচ্ছে। তবে, এর শেষও হবে। ভালো দিন আসতেই হবে। আমি চিরদিন আশাবাদী মানুষ। আশা হারালে চলবে না।
এখনো আপনি মঞ্চ ধরে রেখেছেন। তো থিয়েটারের মানুষদের সঙ্গে কতটা যোগাযোগ আছে?
ফেরদৌসী মজুমদার: শতভাগ যোগাযোগ আছে থিয়েটারের মানুষদের সঙ্গে। থিয়েটার তো আমার পরিবার। সবাই ঘরে থাকছি। সব কিছু মেনে চলছি। মাঝেমধ্যে থিয়েটারের মানুষদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হচ্ছে। সবাই সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। এটা যে কি আনন্দের। এটা তো একটা সময় কল্পনাও করা যেত না। কদিন আগেই এই কাজটি করে আমরা খুব আনন্দ পেয়েছি।
করোনাকালে জনগণের পাশে থাকার জন্য কাদেরকে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট দেবেন?
ফেরদৌসী মজুমদার: অবশ্যই পুলিশ ও চিকিৎসকদের। চিকিৎসক মারা যাচ্ছেন। পুলিশও মারা যাচ্ছেন। পুলিশ ও চিকিৎসকরাই করোনাকালের আসল সৈনিক। তারাই করোনাকালের আসল তারকা। সামনে থেকে কাজ করছেন তারা। জীবনও দিচ্ছেন। অথচ করোনা না এলে তারা এভাবে মারা যেতেন না। এই মৃত্যু তাদের প্রাপ্য ছিল না।
Comments