শুটিংয়ে ফিরছেন টিভি নাটকের শিল্পীরা
ঈদুল আজহা আসন্ন প্রায়। ঈদকে ঘিরে সাধারণত কয়েকশ নাটক তৈরি কার হয়। যদিও গত ঈদে তা দেখা যায়নি। করোনার আতঙ্কের মধ্যেও বেশ কিছুদিন ধরে শুটিং করছেন টিভি নাটকের শিল্পীরা। অবশ্য কেউ কেউ ভয়ে এখনো শুটিং না শুরু করলেও বেশিরভাগ বড় বড় তারকারা শুটিংয়ে ফিরেছেন।
চঞ্চল চৌধুরী চলতি মাস থেকে ঈদুল আজহার নাটকের শুটিংয়ে ফিরেছেন। তাও টানা তিন মাস পর। মাসুদ সেজান পরিচালিত সাত পর্বের একটি ধারাবাহিক করছেন তিনি। তার বিপরীতে আছেন শবনম ফারিয়া। নাটকটির নাম ‘চরিত্র প্রেমিক’।
চঞ্চল চৌধুরী এখন পূবাইল এ দুটি সাত পর্বের ঈদ ধারাবাহিক নাটকের শুটিং করছেন। নাটক দুটি পরিচালনা করছেন শামীম জামান। একটি নাটকের নাম ‘টার্মকার্ড’। আরেকটি নাটকের নাম ‘প্রতিবেশীর ভালোবাসা’। এ দুটিই গ্রামীণ গল্পের নাটক।
চঞ্চল চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যে যত বড় কথাই বলুক শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং করা সম্ভব নয়। চাইলে তো অনেক কাজ করতে পারি। তা তো করছি না। অল্প কজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছি। আমার মনে হয়েছে এদের সঙ্গে কাজ করলে নিরাপওার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।’
পরিচালক শামীম জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার নাটকের সেটে মেকআপম্যানও রাখছি। মূল কথা হচ্ছে আমরা নিজেরা কতটা সচেতন? সচেতন হয়ে কাজ করলে ঝুঁকি কম থাকে। শুটিংয়ের আগে বাড়িটাকে জীবাণুনাশক দিয়ে একাধিকবার ধোয়া হয়।’
সব ঈদে রেকর্ড সংখ্যক নাটক প্রচার হয়ে থাকে মোশাররফ করিমের। তিনিও কয়েক মাস শুটিং থেকে দূরে ছিলেন। এখন ঈদের জন্য ‘গিরিগিটি’ নামের একটি নাটকের শুটিং করছেন তিনি।
মোশাররফ করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘খুব সাবধানতা অবলম্বন করে কাজটি করছি।’
জাহিদ হাসান অবশ্য এরই মধ্যে কয়েকটি নাটকের শুটিং শেষ করেছেন। সবশেষ তিনি শুটিং করলেন হিমু আকরাম পরিচালিত ‘গফুর কাকার তরমুজ’।
জাহিদ হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি মনে করি মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে নিজেকে। সবার আগে নিজের জীবন। কাজেই আমার জীবনের নিরাপওার কথাটি সবার আগে ভাবছি। যতটা সচেতনতা দরকার তা মেনেই শুটিংয়ে ফিরেছি।’
‘আমার শুটিংয়ে আসা মানে আরও অনেকের রিজিক নিশ্চিত করা। এটাও দরকার। কত মানুষই এখানে কষ্টে আছেন। তারা তিন বেলা খেতে পারবেন। সবকিছু ভেবে কাজে ফিরেছি।’
‘তবে, শুটিং স্পটে সর ধরণের বিষয় মাথায় রাখছি যাতে করে কারো কোনো সমস্যা না হয়,’ যোগ করেন তিনি।
কোনো সেটে যদি শুটিং করার কারণে করোনা দেখা দেয় তার দায় কেনে নেবে? ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এসএক হক অলিক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটা আসলে দায় নেওয়ার বিষয় নয়। এটা সচেতনার বিষয়। সবাই মিলে সচেতন হয়ে কাজ করলে সমস্যাটা কম হবে।’
এ দিকে অপূর্ব ও মেহজাবীন একটি ঈদের নাটকের শুটিং শুরু করেছিলেন। সেই নাটকটির শুটিং বাতিল হয়ে গেছে দুই জন শিল্পীর করোনা পজেটিভ আসায়।
অপূর্ব ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এত সচেতন থাকার পরও এমন হলো ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে। আরও কিছু কাজ করার কথা ছিল। এখন তো ভয় কাজ করছে। জানি না কাজ করা হবে কিনা।’
নাদিয়া আহমেদ ঈদের এক ঘণ্টার একটি নাটকের শুটিং করেছেন। গত ২২ জুলাই থেকে একটি সাত পর্বের ধারাবাহিক করবেন। ডেইলি স্টারকে বললেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করেছি।’
আরও অনেক তারকা ঈদুল আজহার নাটকের শুটিংয়ে ফিরেছেন। আবার কেউ কেউ একটি কাজও করছেন না। ফারিয়া শাহরিন ঈদের নাটকে ফিরেছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এমনভাবে শুটিং করেছি যাতে কারো সমস্যা না হয়। প্রথমেই বলা হয়েছিল কারো শরীর খারাপ থাকলে লুকাবেন না। এটা বড় প্লাস পয়েন্ট।’
ডিরেক্টসর গিল্ডের সভাপতি ও জনপ্রিয় নাট্যপরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু ঈদের জন্য দুটি নাটক পরিচালনা করেছেন। আরও কয়েকটি কাজ করার সম্ভবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিভি নাটকের শুটিং করা কোনকালেই সম্ভব না। কিন্তু শতভাগ সচেতন হয়ে কাজ করা সম্ভব। আমরা সেটাই করেছি।
শুটিংয়ে ফিরেছেন জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা তাহসান। সম্প্রতি, তিনি কালিয়াকৈরে একটি এক ঘণ্টার ঈদের নাটকের শুটিং শেষ করেছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শুটিং করার আগে বাড়িটিকে যতটা নিরাপদ করা যায়, সেভাবে প্রস্তুত করেই আমরা শুটিং করেছি।’
তৌকীর আহমেদ ও তারিন শুটিংয়ে ফিরেছেন। তারিন অবশ্য দুটি ঈদের নাটকের কাজ শেষ করেছেন। একটিতে তার সঙ্গে আছেন জাহিদ হাসান। অপরটিতে আছেন তৌকীর আহমেদ।
জাহিদ হাসান ও তারিন অভিনীত নাটকটির নাম এখনো ঠিক হয়নি। তৌকীর আহমেদ ও তারিন অভিনীত ঈদের নাটকটির নাম ‘কথা শুনতে হবে’। নাটকটি পরিচালনা করেছেন এসএ হক অলিক।
তৌকীর আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনেকদিন ঘরে বসে ছিলাম। অভিনয় ক্যারিয়ারে যা কখনো ঘটেনি। চাইলেও কাজ করা সম্ভব হয়নি। একটি কাজ করলাম। সেটে শিল্পীর সংখ্যাও কম ছিল। সব মিলিয়ে ইতিবাচক মনে হওয়ায় কাজটি করেছি।’
জাকিয়া বারী মম প্রতি বছর ঈদে অনেক নাটক করে থাকেন। করোনার কারণে তিনিও ঘরেই ছিলেন। ‘বিসিএস বক্কর’ নামে একটি ঈদের নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। নাটকটি পরিচালনা করছেন সকাল আহমেদ। মম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা নিজেরা নিরাপদে থেকেই কাজটি করেছি।’
অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম শিল্পীদের শুটিংয়ে ফেরা নিয়ে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হবে। আমরা যেন সচেতন হয়ে শুটিং করি। তাহলে সবাই নিরাপদে থাকতে পারব।’
Comments