আলাভেসকে উড়িয়ে দিয়ে মৌসুম শেষ করল বার্সেলোনা
শিরোপা নির্ধারণ আগেই হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে বার্সেলোনাকে। তারপরও দিপার্তিভো আলাভেসের বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল মর্যাদার। তবে ছিল না চাপ। আর চাপহীন বার্সেলোনা এদিন যেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল। মৌসুমের অন্যতম সেরা পারফরম্যান উপহার দিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে তারা। আলাভেসকে ৫-০ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েই মৌসুম শেষ করল লিওনেল মেসির দল।
জেরার্দ পিকে, ইভান রাকিতিচ এবং জুনিয়র ফিরপো নিষিদ্ধ। উসমান দেম্বেলে, স্যামুয়েল উমতিতি, আতোঁয়ান গ্রিজমান এবং আর্থুর মেলোরা ইনজুরিতে। তাই সবমিলিয়ে এদিন ছয় পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। স্কোয়াডে খেলোয়াড়েরও ছিল ঘাটতি। ফলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে যখন ক্লেমো লংলে ইনজুরিতে পড়েন, তখন বাধ্য হয়ে আর্তুরো ভিদালের দায়িত্ব পালন করতে হয় সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে। তবে তাতে কোনো ক্ষতি হয়নি দলটির। সহজেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে দলটি।
তবে শুরুতে বেশ কয়েকবারই ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়ে বার্সেলোনা। ম্যাচের ১৬ মিনিটের মধ্যেই বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের নেওয়া তিন তিনটি শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। প্রথম দফায় ম্যাচের রিকি পুচ, দ্বিতীয় দফায় দ্বাদশ মিনিটে আর্তুরো ভিদাল এবং ১৬তম মিনিটে লিওনেল মেসি। তখন মনে হয়েছিল হয়তো ভাগ্যটাই সঙ্গে নেই তাদের। আরও একটি ধাক্কা খেতে যাচ্ছে দলটি।
এদিন সুয়ারেজের মিসের কথা না বললেই নয়। প্রথমার্ধেই দুইবার গোলরক্ষককে একেবারে একা পেয়ে যান সুয়ারেজ। দুইবারই যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন। প্রথম দফায় ১৭তম মিনিটে মেসির পাসে বাঁ প্রান্তে হলেও দ্বিতীয় দফায় ২৭তম মিনিটে পুচের বাড়ানো বলে মাঝেই ছিলেন তিনি। কিন্তু দুইবারই গোলরক্ষক বরাবর শট নেন এ ফরোয়ার্ড। ফলে দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট হয় বার্সার। তবে সেই সুয়ারেজ নিজের প্রথম গোল পান প্রথমার্ধের শেষ দিকে। মেসির বাড়ানো বল আলতো ভলিতে সুয়ারেজের উদ্দেশ্যে বল বাড়ান জর্দি আলবা। দারুণ এক হেডে বল জালে জড়াতে এবার আর কোনো ভুল করেননি এ উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড।
তবে এর আগেই দুই গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। ২৪তম মিনিটে মেসির নিখুঁত পাসে আনসু ফাতির আলতো টোকায় বল জড়ালে এগিয়ে যায় দলটি। লালিগায় এটা ফাতির সপ্তম গোল। এবারের লিগে এটা মেসির ২১তম অ্যাসিস্ট। তাতে ভাঙলেন জাভি হার্নান্দেজের এক যুগের রেকর্ড। ২০০৮-০৯ মৌসুমে বার্সার হয়ে লা লিগায় সর্বোচ্চ ২০টি অ্যাসিস্টের মালিক ছিলেন এ স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।
৩৪তম মিনিটে দলীয় সমঝোতায় অসাধারণ এক গোল পায় বার্সা। বাঁপ্রান্ত থেকে ডান প্রান্তে ফাঁকায় থাকা পুচকে বল দিয়েছিলেন সের্জি রোবার্তো। বল ধরে সামনেই দাঁড়ানো মেসিকে খুঁজে নেন এ তরুণ মিডফিল্ডার। এক খেলোয়াড় কাটিয়ে গোলরক্ষক প্রথম দফায় ডামি শট নিয়ে পরের শটে সহজেই লক্ষ্যভেদ করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি। লিগে এটা মেসির ২৪তম গোল।
ছয় মিনিট পর আরও একবার বার্সাকে হতাশ করেন আলাভেস গোলরক্ষক রোবের্তো। মেসির ক্রস থেকে ফাঁকায় দারুণ হেড দিয়েছিলেন ভিদাল। তারচেয়েও দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে সে বল ঠেকিয়ে দেন তিনি। তিন মিনিট পর কাউন্টার অ্যাটাক থেকে সুযোগ ছিল আলাভেসেরও। কিন্তু শেষ মুহূর্তে খেই হারিয়ে ফলেন ফরোয়ার্ডরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান কমাতে পারতো আলাভেস। ৪৬তম মিনিটে বদলী খেলোয়াড় পেরে পন্স একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি। উল্টো ৫৭তম মিনিটে আরও একটি গোল হজম করে তারা। এবার পার্টিতে যোগ দেন বদলী খেলোয়াড় নেলসন সেমেদো। ডান প্রান্তে পুচের বাড়ানো বল থেকে দারুণ এক কোণাকোণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন এ পর্তুগিজ তারকা।
৭৫তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল পান মেসি। আলবার কাটব্যাক থেকে নিখুঁত সাইডভলিতে বল জালে পাঠান এ আর্জেন্টাইন। বার্সার জার্সি গায়ে চলতি মৌসুমে এটা তার ৩০তম গোল। লা লিগায় ২৫তম। ফলে রেকর্ড সপ্তম পিচিচি ট্রফি জয় অনেকটা সহজ করে ফেলেন বার্সা অধিনায়ক।
ছয় মিনিট পর মিনিটে আদ্রিয়ান মারিনের বাড়ানো বলে ফের ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন হোসেলু। কিন্তু তার হেড লক্ষ্যেই থাকেনি। ৮৯তম মিনিটে ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ংয়ের বাড়ানো বল থেকে কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। তবে অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে ব্যাথওয়েটের পাস থেকে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন সুয়ারেজ। কিন্তু তার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এর আগেই বড় জয় নিশ্চিত হয়ে যায় দলটির।
এ জয়ের পরও অবশ্য রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বার্সেলোনাকে। ৩৮ ম্যাচে ২৪টি জয় ও ৮টি ড্রয়ে ৮২ পয়েন্ট লিগ শেষ করল তারা। এর আগেই এক ম্যাচ কম খেলা রিয়াল মাদ্রিদ ৮৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
Comments