কুড়িগ্রামে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বানভাসি সন্তানসম্ভবা নারীরা

বানভাসি হয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে সরকারি রাস্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ও রেল লাইনের ওপর অস্থায়ী আশ্রয় নেওয়া সন্তানসম্ভবা নারীরা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
Kurigram flood victim women
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নে রেললাইনের ওপর পরিবারের সঙ্গে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসি সন্তানসম্ভবা মিনকি বেগম। ২০ জুলাই ২০২০। ছবি: স্টার

বানভাসি হয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে সরকারি রাস্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ও রেল লাইনের ওপর অস্থায়ী আশ্রয় নেওয়া সন্তানসম্ভবা নারীরা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

গত এক সপ্তাহে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের বালাবাড়ী স্টেশন থেকে রমনা স্টেশন পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার জুড়ে রেললাইনের ওপর আশ্রয় নেওয়া আট বানভাসি নারী সন্তান প্রসব করেছেন।

রেললাইনের ওপর পরিবারের সঙ্গে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি সন্তানসম্ভবা মিনকি বেগম (৩০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাপের বাড়িও বানের পানিতে তলিয়ে আছে। রেললাইনে অস্থায়ী আশ্রয় তার জন্য অনিরাপদ কিন্তু কোনো উপায় নেই।’

‘এমন প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও ঠিকমতো দুই বেলা খাবারও জুটছে না’ উল্লেখ করে তিনি যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান।

মিনকির স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি ভ্যানচালক। এখন কর্মহীন। পরিবারের জন্য ঠিকমতো খাবার যোগাতে পারছি না। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর জন্য পুষ্টিকর কোন খাবার দিতে পারছি না।’

মিনকির মতো বানভাসি সন্তানসম্ভবা শামসুন্নাহার বেগমও (২৫) পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন একই জায়গায়। তিনি কিভাবে নিজের যত্ন নিবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।

‘পরিবার পরিকল্পনা অফিসের লোকজনও আমাদের কাছে আসছেন না’ উল্লেখ করে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চরম ঝুঁকি মাথায় নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।’

শামসুন্নাহারের স্বামী গোলাম রাব্বি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। রেললাইনের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুঁপড়ি ঘরে এক সঙ্গে সবাইকে নিয়ে গাঁদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। স্ত্রীর এই অবস্থায় কোনো অসুবিধা হলে কোথায় নিয়ে যাবেন তাও ভাবতে পারছি না।’

একই স্থানে আশ্রয় নেওয়া সন্তানসম্ভবা ফাতেমা বেগম (২৬) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ প্রয়োজন। কিন্তু তাদেরকে কাছে পাচ্ছি না। কেউ সন্তানসম্ভবা নারীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন না।’

কুড়িগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপপরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে থানাহাট এলাকায় আশ্রয়ককেন্দ্র আট বানভাসি নারী সন্তান প্রসব করেছেন। তাদেরকে পরিবার পরিকল্পনার স্বাস্থ্যকর্মীরা সহায়তা করেছেন। থানাহাট পরিবার পরিকল্পনা অফিসটি এখন বানের পানিতে তলিয়ে থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’

বানভাসি সন্তানসম্ভবা নারীদের খোঁজ নেওয়া ও তাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কতো সংখ্যক বানভাসি সন্তানসম্ভবা নারী অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সংখ্যা অনেকটা হবে। শুধু স্বাস্থ্যসেবা ছাড়া বানভাসি এই নারীদের জন্যে সরকারিভাবে কোনো সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। অথচ তাদের এখন বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাওয়া খুবই জরুরি।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago