মৃত্যুর হাত থেকে ৩ শিশুকে উদ্ধার করলেন কনস্টেবল আতিক

Constable_Atique.jpg
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর হোজা নদীর তীব্র স্রোতে ডুবতে থাকা তিন শিশুকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল আতিকুর রহমান। এই প্রশংসনীয় কাজের জন্য তাকে পুরস্কৃত করেছে জেলা পুলিশ বিভাগ।

আজ বুধবার রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আতিকুর রহমান বুদ্ধিমত্তা, সহসিকতা ও মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

রাজশাহীর দূর্গাপুর থানায় গাড়ি চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আতিক। দ্য ডেইলি স্টার’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি তিন শিশুকে উদ্ধারের ঘটনা বর্ণনা করেন। এর মধ্যে মেহেদী (১১) তার সহকর্মী জাকির হোসেনের ছেলে। বাকি দুজন হলো— স্থানীয় কৃষক ইউনুস আলীর ছেলে রুবেল (১০) ও কলেজ শিক্ষক আয়নাল হকের ছেলে স্বচ্ছ (১০)।

আতিকের বাড়ি পাবনার সুজানগর উপজেলায়। তিনি বলেন, ১৩ বছর আগের একটি ঘটনা এখনো তাকে শোকাহত করে। ২০০৭ সালে তার ভাই জায়েদ রহমান পুকুরে পড়ে গিয়েছিল। জায়েদের বয়স তখন মাত্র চার বছর। গ্রামের শতাধিক মানুষ তার ভাইয়ের ডুবে যাওয়া দেখছিল। আতিক তখন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী। তিনি পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে তার ভাইকে তুলে এনেছিলেন।

ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতক শেষ করে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে আতিক পুলিশে যোগ দেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর হলো তিনি দূর্গাপুর থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে আনিসা রহমান ও স্ত্রী শারমিন আক্তারকে নিয়ে থানার পাশেই একটি ভাড়া বাসায় তিনি বসবাস করেন। বাসার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে হোজা নদী।

আতিক বলেন, ‘রাতে দায়িত্ব পালন শেষে সোমবার সকালে তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। আতঙ্কিত হয়ে শারমিন তাকে ডেকে তুলে জানান, তিনটি শিশু নদীতে ডুবে যাচ্ছে। তার মনে হয়েছিল, তিন শিশুকে উদ্ধার করলে তাদের মেয়ে ও অনাগত সন্তানের কল্যাণ হবে। পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীর মাঝখানে দুটি সেতু ডুবে গেছে। সেতু ওপরে হাঁটু পানি। স্থানীয় শিশুরা সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করে। কিন্তু এখন নদীতে তীব্র স্রোত। সোমবার তিন শিশু খেলার সময় ডুবে যেতে থাকে।’

‘নদীর পাড়ে তখন শত শত মানুষ জড়ো হয়ে ছেলেগুলোর ডুবে যাওয়া দেখছে। কেউ ছবি তুলছে, কেউ ভিডিও করছে। কেউ বাঁচানোর চেষ্টা পর্যন্ত করছে না। এদিকে দুটি বাচ্চা স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। বাড়ির আঙিনায় বাঁশের ওপরে আমরা কাপড় শুকাতে দিই। শারমিন সেই বাঁশ খুলে আনে। নদীতে বাঁশ ফেলে আমি দুই শিশুকে ধরে থাকতে বলি। গ্রামের একজনকে বলি বাঁশ ধরে থাকতে, তারপর সাঁতরে রুবেল ও স্বচ্ছকে তুলে আনি। স্রোতের মধ্যে থাকতে থাকতে ওরা এতটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল যে বাঁশটা ঠিক মতো ধরে থাকতে পারছিল না। হাত ফসকে গেলে চোখের পলকে তলিয়ে যেত’— বলেন আতিক।

Constable_Atique1.jpg
আজ সকালে রাজশাহী জেলা পুলিশ সদর দপ্তরে আতিকুর রহমানের হাতে সম্মাননা সনদ তুলে দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, ‘মেহেদীকে উদ্ধার করা তুলনামূলক সহজ ছিল। ও সেতুর একটি পিলার ধরে ছিল। নদীর পাড়ে তোলার পরে তাদের পেট থেকে পানি বের করা হয়। এখন তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে নিরাপদে সুস্থ আছে।’

আতিক বলেন, ‘নদীর পাড়ে জড়ো হওয়া শত শত মানুষ দেখে আমার ভাইয়ের দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ছিল। সেদিন আমি আমার ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। তিন শিশুকে উদ্ধার করতে গিয়ে ওদের মধ্যে আমি আমার ছোট ভাইয়ের চেহারা দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার মনে হলো, আমি যদি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতাম তাহলে হয়তো আমিও ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে যেতাম। ডিজিটাল পদ্ধতির জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে আমরা বিবেক হারিয়ে ফেলছি।’

পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আতিকুর রহমানের কাজে আমরা গর্বিত। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রত্যেক পুলিশ সদস্য এ রকম স্বেচ্ছাসেবায় নিজেদের নিয়জিত করবেন। তাহলে সারা দেশে বাসযোগ্য সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। আজ সকালে জেলা পুলিশ সদর দপ্তরে আতিকুর রহমানের হাতে পুরস্কার হিসেবে ৩০ হাজার টাকার চেক ও সম্মাননা সনদ তুলে দেওয়া হয়ে। এই প্রশংসনীয় কাজের জন্য আতিকুর রহমান যেন জাতীয় পুরস্কার পান পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সেই সুপারিশ করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Former Narayanganj mayor Selina Hayat Ivy arrested

She was arrested around 5:45am today following a night-long raid at her Deobhog residence

1h ago